বাংলাদেশ সরকার ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি উৎপাদন বজায় রাখা ও সার সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ইউরিয়া ও টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট) সার আমদানির পাঁচটি বড় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে প্রায় ৯২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিসভার ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত
রবিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি (CCGP)-এর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকের লক্ষ্য ছিল কৃষি উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা, দেশীয় সরবরাহ চেইন স্থিতিশীল রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ চাষ মৌসুমে সার সংকট প্রতিরোধ করা।
প্রস্তাবগুলো শিল্প মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আসে, যা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর পক্ষে উপস্থাপন করা হয়।
ইউরিয়া সার আমদানির বিস্তারিত পরিকল্পনা
প্রস্তাব অনুযায়ী, মোট ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার তিন ধাপে আমদানি করা হবে।
প্রথম চালানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া ক্রয় করা হবে। এই চালানের মোট মূল্য ধরা হয়েছে ১৯৫.৪৩ কোটি টাকা, যেখানে প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৯৯.১৭ মার্কিন ডলার।
দ্বিতীয় চালানে সৌদি আরবের সাবিক অ্যাগ্রিনিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে আরও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া আমদানি করা হবে। এ চালানের মোট খরচ হবে ১৯০.৯৪ কোটি টাকা, প্রতি টনের দাম ৩৯০ মার্কিন ডলার।

তৃতীয় চালানে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কার্নাফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগজাত গ্র্যানুলার ইউরিয়া কেনা হবে। এ চালানের মোট দাম ১৩৯.৬৯ কোটি টাকা, যেখানে প্রতি টনের মূল্য ৩৭৯.৫০ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ব্যাগিং ও হ্যান্ডলিং বাবদ প্রতি টনে অতিরিক্ত ৫ ডলার অন্তর্ভুক্ত আছে। স্থানীয় উৎপাদিত এই সার দ্রুত কৃষি অঞ্চলে পৌঁছানো সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টিএসপি সার আমদানির সিদ্ধান্ত
ইউরিয়ার পাশাপাশি, কমিটি মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস কোম্পানির কাছ থেকে সরকার-টু-সরকার চুক্তির আওতায় মোট ৬০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেয়। মরক্কো বিশ্বের বৃহত্তম ফসফেটভিত্তিক সার উৎপাদক দেশ।
বিএডিসি দুটি ধাপে প্রতিটি ৩০ হাজার মেট্রিক টনের চালান আমদানি করবে। প্রতিটি চালানের খরচ হবে ১৯৯.৫১ কোটি টাকা, প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৫৪২ মার্কিন ডলার।
কর্মকর্তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ফসফেটভিত্তিক সারদামের ঊর্ধ্বগতি এই মূল্যের প্রতিফলন। তবে এই চুক্তির মাধ্যমে খোলা দরপত্র ছাড়াই সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষক সহায়তা নিশ্চিতকরণ
সরকারি কর্মকর্তারা বলেন, এসব আমদানির সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বোরো ও আমন মৌসুমের আগে যখন সার চাহিদা সর্বোচ্চ থাকে, তখন এ সরবরাহ কৃষকদের সহায়তা করবে।
তারা আরও জানান, সার সরবরাহে কোনো বিঘ্ন না ঘটাতে সরকার রাজ্য পর্যায়ের চুক্তি ও আলোচনাভিত্তিক ক্রয়ের সমন্বিত নীতি অনুসরণ করে, যাতে ভূরাজনৈতিক বা পরিবহনজনিত জটিলতা মোকাবিলা করা যায়।
সার বিতরণ ও কৃষকদের জন্য ভর্তুকি মূল্য
আমদানি করা সারগুলো দেশে পৌঁছানোর পর বিসিআইসি ও বিএডিসি সারগুলো উপজেলা পর্যায়ের ডিপোতে বিতরণ করবে। এতে কৃষকরা সরকারি নির্ধারিত ভর্তুকিমূল্যে সার ক্রয় করতে পারবেন, যা কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
#Bangladesh #Agriculture #FertilizerImport #GovtDecision #BCIC #BADC
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















