ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ বলেছেন, প্রশিক্ষণের আসল উদ্দেশ্য হলো ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করে তোলা। তিনি বলেন, শুধু জ্ঞান অর্জন নয়, প্রশিক্ষণে যা শেখা হয় তা জনগণের কল্যাণে কাজে লাগানোই প্রকৃত সাফল্য।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য
রাজধানীর ভূমি ভবনের কেন্দ্রীয় সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত ১৪০তম সার্ভে ও সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্স-২০২৫-২৬-এর সনদপত্র বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে সিনিয়র সচিব এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মোঃ সাইদুর রহমান। প্রশিক্ষণে প্রশাসন, পুলিশ, বন, রেলওয়ে এবং বিচার বিভাগসহ পাঁচটি ক্যাডারের মোট ৫৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
সালেহ আহমেদ বলেন, এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তারা ভূমি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের বাস্তব জ্ঞান অর্জন করেন। কিন্তু এর আসল মূল্য তখনই পাওয়া যাবে, যখন এই জ্ঞান ও দক্ষতা জনসেবায় প্রয়োগ করা হবে। তবেই ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

সার্ভে ও সেটেলমেন্টের গুরুত্ব
সিনিয়র সচিব জানান, ভূমি প্রশাসনের অন্যতম প্রধান অংশ হলো সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রম। এর মাধ্যমে ভূমির মালিকানা ও সীমারেখা নির্ধারণ, রেকর্ড সংশোধন এবং ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণ করা হয়। সঠিক জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণের ফলে ভূমি-সংক্রান্ত বিরোধ কমে আসে, নাগরিকের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আসে।
তিনি বলেন, এই কাজের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, যাতে কর্মকর্তারা দক্ষ হয়ে নাগরিকদের আরও কার্যকর সেবা দিতে পারেন। জনকল্যাণ মানে শুধু দায়িত্ব পালন নয়, বরং সততা, দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সেবা প্রদান করা।
প্রযুক্তিনির্ভর ভূমি ব্যবস্থাপনা
সালেহ আহমেদ জানান, বর্তমানে সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রমে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনলাইন রেকর্ড, জিআইএস ভিত্তিক মানচিত্র, ই-মিউটেশন এবং ডিজিটাল খতিয়ান প্রবর্তনের ফলে ভূমি ব্যবস্থাপনা আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও জনগণের নাগালের মধ্যে এসেছে।
তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, জিপিএস ও ডিজিটাল ম্যাপ ব্যবহার করে মাঠ জরিপ পরিচালনা করা হয়, যা ভূমির সঠিক সীমারেখা নির্ধারণে সহায়তা করে। পুরনো রেকর্ডে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করে হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।

স্মার্ট ভূমি সেবায় নতুন দিগন্ত
ভূমি ব্যবস্থাপনার আধুনিকীকরণে সার্ভে ও সেটেলমেন্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন সিনিয়র সচিব। তিনি বলেন, এখন ভূমি প্রশাসন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। ডিজিটাল ভূমি জরিপ (Digital Land Survey), এলডিএমএস (LDMS), এবং অনলাইন রেকর্ড ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এই কার্যক্রমকে আরও দ্রুত ও গতিশীল করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন এসব ডিজিটাল টুল ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠছেন, যা “স্মার্ট ভূমি সেবা” বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোঃ মোমিনুর রশীদ, যুগ্মসচিব ও পরিচালক (ভূমি রেকর্ড), ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) ড. মাহমুদ হাসান এবং ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী। এছাড়াও মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
#ভূমি_ব্যবস্থাপনা #সার্ভে_ও_সেটেলমেন্ট #ডিজিটাল_ভূমি #জনসেবা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















