০৪:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

উপজেলা ভূমি অফিসে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ: আলী ইমাম মজুমদারের বক্তব্য

ভূমি প্রশাসন—জনসেবার মূল ভিত্তি
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। উপজেলা পর্যায়ে এই খাতের কার্যক্রম মূলত উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

তবে তিনি স্বীকার করেন, সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য ভূমি সেবায় জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং সেবার মানোন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

জনগণের কল্যাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে রাখতে হবে, জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয়। তাই জনগণের প্রতি মানবিক আচরণ করা প্রত্যেক সেবাদাতার নৈতিক দায়িত্ব। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণই প্রথম অগ্রাধিকার—এই নীতিতে কাজ করতে হবে।

সুশাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
সোমবার ঢাকার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অডিটরিয়ামে আয়োজিত কর্মশালা ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলী ইমাম মজুমদার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সুশাসন রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ভূমি সেবায়ও এই উপাদানগুলো অপরিহার্য। ভূমি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত—খাদ্য, শিল্প, এবং অর্থনীতির মূল উৎস হিসেবে ভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রযুক্তি নয়, মানবিকতা ও সততাও গুরুত্বপূর্ণ
ভূমি উপদেষ্টা আরও বলেন, ভূমি সেবার মানোন্নয়ন শুধু প্রযুক্তিনির্ভর নয়; এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়। ডিজিটাল ভূমি সেবা কার্যকরভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে প্রযুক্তির পাশাপাশি সেবাদাতার মানসিকতা ও দক্ষতার উন্নয়ন অপরিহার্য। নাগরিক ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায়ই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও আধুনিক ভূমি সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে জনবান্ধব ভূমি খাত গঠন
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ভূমি কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে আরও জনবান্ধব করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য সহকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত মনিটরিং এবং অসততার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় কোনো কাজের জন্য উপরস্থদের সুপারিশ আসলে তা দ্রুত সম্পন্ন হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই সেবা পেতে দেরি করে। এই ধরনের অসংগতি বন্ধ করতে হবে।

ডিজিটাল রূপান্তর ও সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে ভূমি খাতের ভূমিকা অপরিসীম। ভূমি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়, এটি নাগরিক অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। দীর্ঘদিন ধরে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তির শিকার হয়েছে।

সরকার এখন ভূমি প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করেছে, ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে সব ভূমি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এতে সময়, অর্থ এবং ভোগান্তি কমছে। তবে এখন দরকার সেবাগ্রহীতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বিশেষ ভূমিকা
তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু ভূমি প্রশাসনের দায়িত্বে নন, তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আহ্বান জানান, ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশ যেন পুরোনো জীর্ণতা ভুলে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যায়।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে যাতে সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

কর্মশালার অন্যান্য বক্তারা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের (উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা, টিআইবি) এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী।

#ভূমি_প্রশাসন #সুশাসন #আলী_ইমাম_মজুমদার #টিআইবি #উপজেলা_ভূমি_অফিস #ডিজিটাল_ভূমি_সেবা

জনপ্রিয় সংবাদ

উপজেলা ভূমি অফিসে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের পথ: আলী ইমাম মজুমদারের বক্তব্য

০১:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

ভূমি প্রশাসন—জনসেবার মূল ভিত্তি
ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, ভূমি প্রশাসন বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। উপজেলা পর্যায়ে এই খাতের কার্যক্রম মূলত উপজেলা ভূমি অফিসের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের ভূমি সংক্রান্ত প্রায় সব সেবা এখান থেকেই দেওয়া হয়। তাই উপজেলা ভূমি অফিস নাগরিক সেবার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।

তবে তিনি স্বীকার করেন, সেবার মান ও সুশাসন নিশ্চিত করতে এখনও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য ভূমি সেবায় জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা এবং সেবার মানোন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

জনগণের কল্যাণে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে রাখতে হবে, জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয়। তাই জনগণের প্রতি মানবিক আচরণ করা প্রত্যেক সেবাদাতার নৈতিক দায়িত্ব। কেউ যদি সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণই প্রথম অগ্রাধিকার—এই নীতিতে কাজ করতে হবে।

সুশাসনের পূর্বশর্ত হিসেবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
সোমবার ঢাকার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অডিটরিয়ামে আয়োজিত কর্মশালা ‘উপজেলা ভূমি অফিসের সেবা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলী ইমাম মজুমদার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সুশাসন রাষ্ট্রের অগ্রগতির পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি কাঠামো, যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ভূমি সেবায়ও এই উপাদানগুলো অপরিহার্য। ভূমি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত—খাদ্য, শিল্প, এবং অর্থনীতির মূল উৎস হিসেবে ভূমির গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রযুক্তি নয়, মানবিকতা ও সততাও গুরুত্বপূর্ণ
ভূমি উপদেষ্টা আরও বলেন, ভূমি সেবার মানোন্নয়ন শুধু প্রযুক্তিনির্ভর নয়; এটি মানবিকতা, সততা ও দায়িত্ববোধের সমন্বয়। ডিজিটাল ভূমি সেবা কার্যকরভাবে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে প্রযুক্তির পাশাপাশি সেবাদাতার মানসিকতা ও দক্ষতার উন্নয়ন অপরিহার্য। নাগরিক ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায়ই একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও আধুনিক ভূমি সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে জনবান্ধব ভূমি খাত গঠন
মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ভূমি কর্মকর্তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা, দেশপ্রেম, সততা ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ভূমি খাতকে আরও জনবান্ধব করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য সহকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত মনিটরিং এবং অসততার ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন।

তিনি উল্লেখ করেন, অনেক সময় কোনো কাজের জন্য উপরস্থদের সুপারিশ আসলে তা দ্রুত সম্পন্ন হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষ সেই সেবা পেতে দেরি করে। এই ধরনের অসংগতি বন্ধ করতে হবে।

ডিজিটাল রূপান্তর ও সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও জনকল্যাণে ভূমি খাতের ভূমিকা অপরিসীম। ভূমি শুধু উৎপাদনের উপকরণ নয়, এটি নাগরিক অধিকার, জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল ভিত্তি। দীর্ঘদিন ধরে সুশাসনের অভাব ও স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে জনগণ ভোগান্তির শিকার হয়েছে।

সরকার এখন ভূমি প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর সম্পন্ন করেছে, ফলে ঘরে বসেই অনলাইনে সব ভূমি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এতে সময়, অর্থ এবং ভোগান্তি কমছে। তবে এখন দরকার সেবাগ্রহীতাদের সচেতনতা বৃদ্ধি।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর বিশেষ ভূমিকা
তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুধু ভূমি প্রশাসনের দায়িত্বে নন, তাঁরা নির্বাচনের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি আহ্বান জানান, ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশ যেন পুরোনো জীর্ণতা ভুলে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যায়।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বলেন, এমন একটি নির্বাচন উপহার দিতে হবে যাতে সাধারণ জনগণ নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

কর্মশালার অন্যান্য বক্তারা
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন টিআইবির পরিচালক (সিভিক এনগেজমেন্ট) ফারহানা ফেরদৌস, প্রফেসর ড. সুরাইয়া খায়ের (উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা, টিআইবি) এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী।

#ভূমি_প্রশাসন #সুশাসন #আলী_ইমাম_মজুমদার #টিআইবি #উপজেলা_ভূমি_অফিস #ডিজিটাল_ভূমি_সেবা