০৪:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

যখন নদী গিলে খায় জমি: বাংলাদেশের অবিরাম লড়াই ভাঙনের সঙ্গে

সংক্ষিপ্তসার

  • উত্তরাঞ্চলের ভাঙনে প্রতি বছর হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত
  • কুড়িগ্রামের বহু পরিবারকে একাধিকবার স্থানান্তর হতে হচ্ছে
  • হিমবাহ গলন ও অস্থির বর্ষার কারণে নদীভাঙন বেড়েছে
  • বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ০.৫ শতাংশেরও কম নির্গত করে

নদী যখন ঘরবাড়ি গিলে নেয়

কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ — মেঘলা সকালে নূরুন নবী বাঁশ ও টিনের চালা নিয়ে একটি কাঠের নৌকায় বোঝাই করছেন। মাত্র এক বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের মাঝের একটি ভঙ্গুর চর-দ্বীপে তাঁর ঘরটি তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি নদীর গহ্বরে বিলীন হওয়ার পথে।

পঞ্চাশ বছর বয়সী এ কৃষক ও চার সন্তানের বাবা এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয়বার ঘর হারাতে যাচ্ছেন।

“নদী প্রতিদিনই কাছে আসছে,” ক্লান্ত কণ্ঠে নবী বলেন, “আমরা যেন দুঃখে জন্মেছি। এই সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। কতবার নদী আমার ঘর কেড়ে নিয়েছে, আর মনে রাখি না।”

এখন তাঁর আর কোনো উপায় নেই, নতুন করে আবারও আরেকটি চর খুঁজে সেখানে উঠতে হবে। তাঁর ধান ও মসুরের ক্ষেত আগেই নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। হিমালয় থেকে উৎসারিত ব্রহ্মপুত্র ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসে তাঁর সবকিছু নিয়ে গেছে।

“নতুন জায়গায় কী অপেক্ষা করছে জানি না,” নবী নদীর দিকে তাকিয়ে বলেন। “ভাগ্য ভালো হলে কিছু বছর থাকতে পারব, না হলে হয়তো এক মাসও না। এটাই আমাদের জীবন।”


রাতারাতি হারিয়ে যাওয়া ভূমি

প্রতি বছর কুড়িগ্রামের শত শত পরিবার একই ভাগ্য বরণ করে নেয়। নদীতীর ভেঙে পড়লে ঘরবাড়ির সঙ্গে হারিয়ে যায় ফসলি জমি ও গবাদিপশুও। একসময় জীবিকার উৎস ছিল যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা — এখন সেই নদীগুলিই ভয়ঙ্কর, অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের কারণ হয়ে উঠেছে।

চরাঞ্চলগুলো — দেশের উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বালুময়, অস্থায়ী দ্বীপসমূহ — বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি। এখানকার মানুষ ঘর তোলে, আবার হারায়, বারবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়।

৭০ বছর বয়সী কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “জল হঠাৎ এসে পড়ে, কোনো সতর্কতা দেয় না। রাতে ঘুমাতে যান, সকালে দেখেন নদীতীর এক কিলোমিটার সরে গেছে। জেগে উঠেই বুঝি, আমরা গৃহহীন। জীবনে শান্তি বলতে কিছু নেই।”


বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে

নভেম্বর ১০ থেকে ২১ পর্যন্ত ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)-এর আলোচনায় যখন দুনিয়ার দৃষ্টি জলবায়ু ন্যায্যতার দিকে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিশ্বনেতাদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশকে প্রায়ই প্রশংসা করা হয় টেকসই অভিযোজনের উদাহরণ হিসেবে — বাঁধ নির্মাণ, বন্যা পূর্বাভাস, ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ও জলবায়ু তহবিল না পেলে এসব প্রচেষ্টা টিকবে না।

“এখানকার মানুষ এমন এক দামের বোঝা বইছে, যা তারা কখনও সৃষ্টি করেনি,” বলেন জলসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। “যদি কপ৩০ সত্যিই ফলপ্রসূ হতে চায়, তবে ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রকৃত অর্থায়ন দিতে হবে এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে টিকিয়ে রাখার সহায়তা করতে হবে।”


জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুড়িগ্রামে যা ঘটছে তা জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান রূপ। হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে, যা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

“আমরা এখন দেখছি, ১৯৯০ দশকের তুলনায় হিমবাহ গলার হার প্রায় দ্বিগুণ,” নিশাত বলেন। “এই অতিরিক্ত পানি নিচের দিকে নেমে এসে নদীগুলোকে আরও ফুলে উঠতে বাধ্য করছে।”

একই সঙ্গে বর্ষার ধরণও বদলে গেছে — আগেভাগে আসে, দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতে তীব্র ক্ষয় সৃষ্টি করে। “ঋতুর ছন্দটাই বদলে গেছে,” তিনি বলেন। “যখন বৃষ্টি হয়, তখন অতিরিক্ত হয়; আর যখন থামে, তখন খরায় পুড়ে যায় সব। এই অস্থিরতাই ভাঙন ও বন্যাকে মারাত্মক করছে।”

বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের অর্ধ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব ভোগ করছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রতি সাতজন বাংলাদেশির একজন বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।


অনন্ত স্থানান্তর

পঞ্চাশ বছর বয়সী সাত সন্তানের জনক কাসিম উদ্দিন বলেন, “আমার জীবনে নদী অন্তত ৩০-৩৫ বার আমার ঘর নিয়ে গেছে—হয়তো আরও বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতি বার ঘর তুলি, নদী আবার এসে নিয়ে যায়। কিন্তু যাব কোথায়? চারপাশই তো এখন পানি।”

নারীরাই এই স্থানান্তরের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করে। ৩০ বছর বয়সী দুই সন্তানের মা শাহিনা বেগম বলেন, “গত বছর কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে রান্না করেছিলাম। দশ বছরে ছয়বার জায়গা বদল করেছি। প্রতিবার নতুন করে শুরু করি, নদী আবার তা নিয়ে নেয়।”

তিনি আরও বলেন, “মহিলা ও কিশোরীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও কঠিন। শুকনো জায়গা খুঁজে নিতে হয়, সন্তান সামলাতে হয়, রান্না করতে হয় — অথচ কোথাও নিরাপত্তা বা গোপনীয়তা নেই।”


টিকে থাকার লড়াই

খেয়ার আলগা চরে প্রায় ৩০০ পরিবার টিকে আছে তিন বছর ধরে, স্থানীয় সংস্থাগুলোর দেওয়া জিওব্যাগ (বালুভর্তি বড় বস্তা) বসিয়ে নদীতীর রক্ষার কারণে।

৩৯ বছর বয়সী জহুরুল ইসলাম বলেন, “জিওব্যাগ সবকিছু বদলে দিয়েছে। গত তিন বছরে নদী আর আমাদের জমি নেয়নি। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু আশাবাদী হতে পারি।”

স্থানীয় এনজিওগুলো উঁচু করে ঘর নির্মাণ করছে, যাতে মৌসুমি বন্যার সময় গ্রামগুলো টিকে থাকতে পারে।

তিন বছর ধরে অটল থাকা নদীতীরের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলাম মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, “হয়তো একদিন নদী আবার আসবে। কিন্তু এবার আমরা প্রস্তুত থাকব। আপাতত জমি টিকে আছে — আমরাও।”


(রয়টার্স  প্রতিবেদনের সংক্ষেপিত ভার্সান )

জনপ্রিয় সংবাদ

যখন নদী গিলে খায় জমি: বাংলাদেশের অবিরাম লড়াই ভাঙনের সঙ্গে

০১:৫৬:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

সংক্ষিপ্তসার

  • উত্তরাঞ্চলের ভাঙনে প্রতি বছর হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত
  • কুড়িগ্রামের বহু পরিবারকে একাধিকবার স্থানান্তর হতে হচ্ছে
  • হিমবাহ গলন ও অস্থির বর্ষার কারণে নদীভাঙন বেড়েছে
  • বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ০.৫ শতাংশেরও কম নির্গত করে

নদী যখন ঘরবাড়ি গিলে নেয়

কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ — মেঘলা সকালে নূরুন নবী বাঁশ ও টিনের চালা নিয়ে একটি কাঠের নৌকায় বোঝাই করছেন। মাত্র এক বছর আগে ব্রহ্মপুত্রের মাঝের একটি ভঙ্গুর চর-দ্বীপে তাঁর ঘরটি তৈরি হয়েছিল। এখন সেটি নদীর গহ্বরে বিলীন হওয়ার পথে।

পঞ্চাশ বছর বয়সী এ কৃষক ও চার সন্তানের বাবা এক বছরের মধ্যেই দ্বিতীয়বার ঘর হারাতে যাচ্ছেন।

“নদী প্রতিদিনই কাছে আসছে,” ক্লান্ত কণ্ঠে নবী বলেন, “আমরা যেন দুঃখে জন্মেছি। এই সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। কতবার নদী আমার ঘর কেড়ে নিয়েছে, আর মনে রাখি না।”

এখন তাঁর আর কোনো উপায় নেই, নতুন করে আবারও আরেকটি চর খুঁজে সেখানে উঠতে হবে। তাঁর ধান ও মসুরের ক্ষেত আগেই নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে। হিমালয় থেকে উৎসারিত ব্রহ্মপুত্র ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে এসে তাঁর সবকিছু নিয়ে গেছে।

“নতুন জায়গায় কী অপেক্ষা করছে জানি না,” নবী নদীর দিকে তাকিয়ে বলেন। “ভাগ্য ভালো হলে কিছু বছর থাকতে পারব, না হলে হয়তো এক মাসও না। এটাই আমাদের জীবন।”


রাতারাতি হারিয়ে যাওয়া ভূমি

প্রতি বছর কুড়িগ্রামের শত শত পরিবার একই ভাগ্য বরণ করে নেয়। নদীতীর ভেঙে পড়লে ঘরবাড়ির সঙ্গে হারিয়ে যায় ফসলি জমি ও গবাদিপশুও। একসময় জীবিকার উৎস ছিল যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা — এখন সেই নদীগুলিই ভয়ঙ্কর, অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের কারণ হয়ে উঠেছে।

চরাঞ্চলগুলো — দেশের উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বালুময়, অস্থায়ী দ্বীপসমূহ — বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি। এখানকার মানুষ ঘর তোলে, আবার হারায়, বারবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়।

৭০ বছর বয়সী কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, “জল হঠাৎ এসে পড়ে, কোনো সতর্কতা দেয় না। রাতে ঘুমাতে যান, সকালে দেখেন নদীতীর এক কিলোমিটার সরে গেছে। জেগে উঠেই বুঝি, আমরা গৃহহীন। জীবনে শান্তি বলতে কিছু নেই।”


বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে

নভেম্বর ১০ থেকে ২১ পর্যন্ত ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন (কপ৩০)-এর আলোচনায় যখন দুনিয়ার দৃষ্টি জলবায়ু ন্যায্যতার দিকে, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিশ্বনেতাদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশকে প্রায়ই প্রশংসা করা হয় টেকসই অভিযোজনের উদাহরণ হিসেবে — বাঁধ নির্মাণ, বন্যা পূর্বাভাস, ও স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন প্রকল্পের মাধ্যমে। কিন্তু পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তা ও জলবায়ু তহবিল না পেলে এসব প্রচেষ্টা টিকবে না।

“এখানকার মানুষ এমন এক দামের বোঝা বইছে, যা তারা কখনও সৃষ্টি করেনি,” বলেন জলসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত। “যদি কপ৩০ সত্যিই ফলপ্রসূ হতে চায়, তবে ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রকৃত অর্থায়ন দিতে হবে এবং বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে টিকিয়ে রাখার সহায়তা করতে হবে।”


জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুড়িগ্রামে যা ঘটছে তা জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান রূপ। হিমালয়ের বরফ দ্রুত গলছে, যা ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানিপ্রবাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

“আমরা এখন দেখছি, ১৯৯০ দশকের তুলনায় হিমবাহ গলার হার প্রায় দ্বিগুণ,” নিশাত বলেন। “এই অতিরিক্ত পানি নিচের দিকে নেমে এসে নদীগুলোকে আরও ফুলে উঠতে বাধ্য করছে।”

একই সঙ্গে বর্ষার ধরণও বদলে গেছে — আগেভাগে আসে, দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিপাতে তীব্র ক্ষয় সৃষ্টি করে। “ঋতুর ছন্দটাই বদলে গেছে,” তিনি বলেন। “যখন বৃষ্টি হয়, তখন অতিরিক্ত হয়; আর যখন থামে, তখন খরায় পুড়ে যায় সব। এই অস্থিরতাই ভাঙন ও বন্যাকে মারাত্মক করছে।”

বাংলাদেশ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের অর্ধ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব ভোগ করছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রতি সাতজন বাংলাদেশির একজন বাস্তুচ্যুত হতে পারেন।


অনন্ত স্থানান্তর

পঞ্চাশ বছর বয়সী সাত সন্তানের জনক কাসিম উদ্দিন বলেন, “আমার জীবনে নদী অন্তত ৩০-৩৫ বার আমার ঘর নিয়ে গেছে—হয়তো আরও বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতি বার ঘর তুলি, নদী আবার এসে নিয়ে যায়। কিন্তু যাব কোথায়? চারপাশই তো এখন পানি।”

নারীরাই এই স্থানান্তরের সবচেয়ে বড় বোঝা বহন করে। ৩০ বছর বয়সী দুই সন্তানের মা শাহিনা বেগম বলেন, “গত বছর কোমর পর্যন্ত পানিতে দাঁড়িয়ে রান্না করেছিলাম। দশ বছরে ছয়বার জায়গা বদল করেছি। প্রতিবার নতুন করে শুরু করি, নদী আবার তা নিয়ে নেয়।”

তিনি আরও বলেন, “মহিলা ও কিশোরীদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও কঠিন। শুকনো জায়গা খুঁজে নিতে হয়, সন্তান সামলাতে হয়, রান্না করতে হয় — অথচ কোথাও নিরাপত্তা বা গোপনীয়তা নেই।”


টিকে থাকার লড়াই

খেয়ার আলগা চরে প্রায় ৩০০ পরিবার টিকে আছে তিন বছর ধরে, স্থানীয় সংস্থাগুলোর দেওয়া জিওব্যাগ (বালুভর্তি বড় বস্তা) বসিয়ে নদীতীর রক্ষার কারণে।

৩৯ বছর বয়সী জহুরুল ইসলাম বলেন, “জিওব্যাগ সবকিছু বদলে দিয়েছে। গত তিন বছরে নদী আর আমাদের জমি নেয়নি। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু আশাবাদী হতে পারি।”

স্থানীয় এনজিওগুলো উঁচু করে ঘর নির্মাণ করছে, যাতে মৌসুমি বন্যার সময় গ্রামগুলো টিকে থাকতে পারে।

তিন বছর ধরে অটল থাকা নদীতীরের পাশে দাঁড়িয়ে ইসলাম মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, “হয়তো একদিন নদী আবার আসবে। কিন্তু এবার আমরা প্রস্তুত থাকব। আপাতত জমি টিকে আছে — আমরাও।”


(রয়টার্স  প্রতিবেদনের সংক্ষেপিত ভার্সান )