০৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই দায়ী- তদন্ত কমিটি ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে: নতুন করে আরও ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ১২০০ রোগী ঘোড়া-থিমের ফুকুবুকুরো: জাপানে ২০২৬ নববর্ষে পণ্য নয়, অভিজ্ঞতাই মূল টান ডকুমেন্টারি আবার আলোয় আনতে নিউইয়র্কে ভ্যারাইটির ‘ডক ড্রিমস লাইভ’ আমাজনের বেলেং-এ শুরু হলো কপ৩০, যুক্তরাষ্ট্র নেই আলোচনার টেবিলে সপ্তাহের শুরুতেই শেয়ারবাজারে ধস: ডিএসই সূচক ৬৮ পয়েন্ট ও সিএসই ৩৫ পয়েন্ট কমেছে ২০২৫ সালের গিফট গাইডে এআই ও ওয়্যারেবলকে শীর্ষে তুলল এনগ্যাজেট তাইওয়ান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে চীনা কূটনীতিককে ডেকে পাঠাল টোকিও ব্রিটেনকে বিনিয়োগকারীদের বার্তা: একটু আশাবাদী হোন ভারতের অদ্ভুত স্থিতিশীলতা: অস্থির প্রতিবেশে শান্ত শক্তি 

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উঠছে ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ — ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ঢাল নাকি এক মহাকল্পনার সাম্রাজ্য?

ট্রাম্পের উচ্চাভিলাষী সামরিক স্বপ্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময়ই বিশাল পরিকল্পনা ও সোনালি আভাযুক্ত ধাতুর প্রতি দুর্বল। এবার তাঁর নতুন উদ্যোগ — “গোল্ডেন ডোম” প্রকল্প — তাঁর সব আকাঙ্ক্ষাকেই একত্র করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য আমেরিকাকে এমন এক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা, যা ড্রোন থেকে শুরু করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত যে কোনো আকাশপথের হুমকি প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও সাহসী সামরিক প্রকল্পগুলোর একটি। এর ফলে শুধু আমেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলই বদলে যাবে না, বরং এটি বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান নাজুক ভারসাম্যকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।

সমালোচকরা বলছেন, এই প্রকল্প কেবলই এক আত্মতুষ্টির ফলাফল। তবে সমর্থকেরা — যাদের মধ্যে অনেকেই ট্রাম্প-বিরোধী সামরিক বিশেষজ্ঞ — বলছেন, এমন এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক আগেই তৈরি হওয়া উচিত ছিল।


অতীতের ‘স্টার ওয়ার্স’ থেকে অনুপ্রেরণা

“গোল্ডেন ডোম” প্রকল্পটি অনেককে রোনাল্ড রিগানের ১৯৮০-এর দশকের ব্যর্থ “স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ” (SDI) — অর্থাৎ “স্টার ওয়ার্স” — এর কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই পরিকল্পনায় মহাকাশে লেজার অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি বসিয়ে সোভিয়েত পারমাণবিক হামলা ঠেকানোর স্বপ্ন দেখা হয়েছিল।
এছাড়া এটি ইসরায়েলের “আয়রন ডোম”-এর সঙ্গেও তুলনাযোগ্য, যা ২০১১ সাল থেকে হামাসের রকেট প্রতিহত করে আসছে।

তবে ট্রাম্পের “গোল্ডেন ডোম” উভয়ের চেয়ে অনেক বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পিত। এটি শুধু ক্ষুদ্র এলাকা নয়, বরং সমগ্র আমেরিকা — একটি মহাদেশ-আকারের ভূখণ্ডকে রক্ষা করবে।


কীভাবে কাজ করবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

এখনও পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। জানা গেছে, এটি একক কোনো অস্ত্র নয়, বরং এক সমন্বিত ব্যবস্থা — যেখানে থাকবে সেন্সর, ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি ও মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা উপকরণ, এমনকি সম্ভবত লেজার অস্ত্রও।
সিস্টেমটির মূল শক্তি হবে এর সংযুক্ত সফটওয়্যার, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হুমকি শনাক্ত ও মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে পারে।

বর্তমানে ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন — AEGIS, GMD, Patriot ও THAAD — এই প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু নতুন করে তৈরি করতে হবে মহাকাশনির্ভর প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র, যা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রথম মুহূর্তেই ধ্বংস করতে পারবে।


ব্যয় ও প্রযুক্তিগত জটিলতা

প্রকল্পের ব্যয় অনুমান করা কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞ টড হ্যারিসনের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের জন্যই প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার লাগবে।
অন্যদিকে, পারমাণবিক ICBM-এর মতো বৃহৎ হুমকি প্রতিহতের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণে ব্যয় হতে পারে প্রায় ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

এই প্রকল্পে মহাকাশে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী স্যাটেলাইট স্থাপন করতে হবে — কিছু অনুমান অনুসারে ৮৫,০০০ পর্যন্ত — যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান যেকোনো স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের দশগুণ বড় হবে।


ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ও করপোরেট দৌড়

প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকেই মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। লকহিড মার্টিন ও L3 হ্যারিসের মতো দীর্ঘদিনের জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি স্পেসএক্স, অ্যান্ডুরিল ও প্যালান্টিয়ারের মতো নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে চায়।

স্পেসএক্স মহাকাশ উৎক্ষেপণে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই তাদের অংশগ্রহণ প্রায় অনিবার্য। অন্যদিকে, প্যালান্টিয়ার ও অ্যান্ডুরিল উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও বিশ্লেষণের প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে।

সম্ভাবনা রয়েছে, শেষ পর্যন্ত “গোল্ডেন ডোম” হবে পুরনো ও নতুন উভয় প্রতিষ্ঠানের মিশ্র প্রচেষ্টা — পুরনো কোম্পানিগুলো হার্ডওয়্যার তৈরি করবে, আর নতুনগুলো সফটওয়্যার ও সংযোগ ব্যবস্থার দায়িত্ব নেবে।


সমালোচনা: খরচ ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান GMD সিস্টেম ১৯৯৯ সাল থেকে ২১টি পরীক্ষার মধ্যে ৯টিতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সফলতা বেড়েছে, তবে এটি বাস্তব পরিস্থিতিতে কতটা কার্যকর হবে, তা এখনও অজানা।

অর্থনীতির দিক থেকেও সমস্যা আছে। আক্রমণকারী দেশ খুব অল্প ব্যয়ে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে পারে, অথচ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষা ব্যয় আক্রমণকারীর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়।


পারমাণবিক ভারসাম্য ও বৈশ্বিক প্রভাব

যদি “গোল্ডেন ডোম” কার্যকর হয়, তবে এটি “পারস্পরিক ধ্বংস নিশ্চিততা” (Mutually Assured Destruction) নীতিকে দুর্বল করতে পারে, যা দশকের পর দশক ধরে পারমাণবিক শান্তির মূলভিত্তি।
বিশেষজ্ঞ ভিপিন নারাং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য পুরো প্রতিরোধ নয়, বরং ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা — যাতে শত্রুপক্ষ জানে, যুদ্ধ হলে তার অস্তিত্ব থাকবে না, যদিও আমেরিকা কিছু ক্ষতি ভোগ করবে।

তবে সমালোচকেরা সতর্ক করছেন, এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে এক বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। চীন ও রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আরও বাড়াতে পারে, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সবসময়ই প্রতিরক্ষা ভেদ করে যাবে।


 ভবিষ্যতের পথে অনিশ্চিত যাত্রা

রিগানের “স্টার ওয়ার্স” প্রকল্প যেমন রাজনৈতিক বিরোধ, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যয়ের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, “গোল্ডেন ডোম”-এর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।
তবে গত চার দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এটিকে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অনেক বেশি করে তুলেছে। এটি সফল হলে বিশ্ব সামরিক কৌশলে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটবে — যেমনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও দেখা যায়নি।


#GoldenDome #DonaldTrump #USMilitary #MissileDefense #SpaceTechnology #GlobalSecurity #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই দায়ী- তদন্ত কমিটি

যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উঠছে ট্রাম্পের ‘গোল্ডেন ডোম’ — ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ঢাল নাকি এক মহাকল্পনার সাম্রাজ্য?

০৩:১৪:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

ট্রাম্পের উচ্চাভিলাষী সামরিক স্বপ্ন

ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময়ই বিশাল পরিকল্পনা ও সোনালি আভাযুক্ত ধাতুর প্রতি দুর্বল। এবার তাঁর নতুন উদ্যোগ — “গোল্ডেন ডোম” প্রকল্প — তাঁর সব আকাঙ্ক্ষাকেই একত্র করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য আমেরিকাকে এমন এক প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনা, যা ড্রোন থেকে শুরু করে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত যে কোনো আকাশপথের হুমকি প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও সাহসী সামরিক প্রকল্পগুলোর একটি। এর ফলে শুধু আমেরিকার প্রতিরক্ষা কৌশলই বদলে যাবে না, বরং এটি বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান নাজুক ভারসাম্যকেও নাড়িয়ে দিতে পারে।

সমালোচকরা বলছেন, এই প্রকল্প কেবলই এক আত্মতুষ্টির ফলাফল। তবে সমর্থকেরা — যাদের মধ্যে অনেকেই ট্রাম্প-বিরোধী সামরিক বিশেষজ্ঞ — বলছেন, এমন এক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অনেক আগেই তৈরি হওয়া উচিত ছিল।


অতীতের ‘স্টার ওয়ার্স’ থেকে অনুপ্রেরণা

“গোল্ডেন ডোম” প্রকল্পটি অনেককে রোনাল্ড রিগানের ১৯৮০-এর দশকের ব্যর্থ “স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ” (SDI) — অর্থাৎ “স্টার ওয়ার্স” — এর কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই পরিকল্পনায় মহাকাশে লেজার অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি বসিয়ে সোভিয়েত পারমাণবিক হামলা ঠেকানোর স্বপ্ন দেখা হয়েছিল।
এছাড়া এটি ইসরায়েলের “আয়রন ডোম”-এর সঙ্গেও তুলনাযোগ্য, যা ২০১১ সাল থেকে হামাসের রকেট প্রতিহত করে আসছে।

তবে ট্রাম্পের “গোল্ডেন ডোম” উভয়ের চেয়ে অনেক বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পিত। এটি শুধু ক্ষুদ্র এলাকা নয়, বরং সমগ্র আমেরিকা — একটি মহাদেশ-আকারের ভূখণ্ডকে রক্ষা করবে।


কীভাবে কাজ করবে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা

এখনও পর্যন্ত প্রকল্পটির প্রযুক্তিগত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। জানা গেছে, এটি একক কোনো অস্ত্র নয়, বরং এক সমন্বিত ব্যবস্থা — যেখানে থাকবে সেন্সর, ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র, ভূমি ও মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা উপকরণ, এমনকি সম্ভবত লেজার অস্ত্রও।
সিস্টেমটির মূল শক্তি হবে এর সংযুক্ত সফটওয়্যার, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হুমকি শনাক্ত ও মোকাবিলা করতে সক্ষম হতে পারে।

বর্তমানে ব্যবহৃত যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন — AEGIS, GMD, Patriot ও THAAD — এই প্রকল্পের ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু নতুন করে তৈরি করতে হবে মহাকাশনির্ভর প্রতিরোধ ক্ষেপণাস্ত্র, যা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের প্রথম মুহূর্তেই ধ্বংস করতে পারবে।


ব্যয় ও প্রযুক্তিগত জটিলতা

প্রকল্পের ব্যয় অনুমান করা কঠিন। তবে বিশেষজ্ঞ টড হ্যারিসনের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের জন্যই প্রায় ২৫০ বিলিয়ন ডলার লাগবে।
অন্যদিকে, পারমাণবিক ICBM-এর মতো বৃহৎ হুমকি প্রতিহতের পূর্ণাঙ্গ সংস্করণে ব্যয় হতে পারে প্রায় ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার।

এই প্রকল্পে মহাকাশে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্রবাহী স্যাটেলাইট স্থাপন করতে হবে — কিছু অনুমান অনুসারে ৮৫,০০০ পর্যন্ত — যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান যেকোনো স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের দশগুণ বড় হবে।


ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ও করপোরেট দৌড়

প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকেই মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা দিয়েছে। লকহিড মার্টিন ও L3 হ্যারিসের মতো দীর্ঘদিনের জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি স্পেসএক্স, অ্যান্ডুরিল ও প্যালান্টিয়ারের মতো নতুন প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানও অংশ নিতে চায়।

স্পেসএক্স মহাকাশ উৎক্ষেপণে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাই তাদের অংশগ্রহণ প্রায় অনিবার্য। অন্যদিকে, প্যালান্টিয়ার ও অ্যান্ডুরিল উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও বিশ্লেষণের প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে।

সম্ভাবনা রয়েছে, শেষ পর্যন্ত “গোল্ডেন ডোম” হবে পুরনো ও নতুন উভয় প্রতিষ্ঠানের মিশ্র প্রচেষ্টা — পুরনো কোম্পানিগুলো হার্ডওয়্যার তৈরি করবে, আর নতুনগুলো সফটওয়্যার ও সংযোগ ব্যবস্থার দায়িত্ব নেবে।


সমালোচনা: খরচ ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান GMD সিস্টেম ১৯৯৯ সাল থেকে ২১টি পরীক্ষার মধ্যে ৯টিতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সফলতা বেড়েছে, তবে এটি বাস্তব পরিস্থিতিতে কতটা কার্যকর হবে, তা এখনও অজানা।

অর্থনীতির দিক থেকেও সমস্যা আছে। আক্রমণকারী দেশ খুব অল্প ব্যয়ে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে পারে, অথচ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে কয়েকগুণ বেশি ব্যয় হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরক্ষা ব্যয় আক্রমণকারীর চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়।


পারমাণবিক ভারসাম্য ও বৈশ্বিক প্রভাব

যদি “গোল্ডেন ডোম” কার্যকর হয়, তবে এটি “পারস্পরিক ধ্বংস নিশ্চিততা” (Mutually Assured Destruction) নীতিকে দুর্বল করতে পারে, যা দশকের পর দশক ধরে পারমাণবিক শান্তির মূলভিত্তি।
বিশেষজ্ঞ ভিপিন নারাং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য পুরো প্রতিরোধ নয়, বরং ক্ষয়ক্ষতি সীমিত রাখা — যাতে শত্রুপক্ষ জানে, যুদ্ধ হলে তার অস্তিত্ব থাকবে না, যদিও আমেরিকা কিছু ক্ষতি ভোগ করবে।

তবে সমালোচকেরা সতর্ক করছেন, এই ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে এক বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। চীন ও রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার আরও বাড়াতে পারে, যাতে তারা নিশ্চিত হতে পারে যে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সবসময়ই প্রতিরক্ষা ভেদ করে যাবে।


 ভবিষ্যতের পথে অনিশ্চিত যাত্রা

রিগানের “স্টার ওয়ার্স” প্রকল্প যেমন রাজনৈতিক বিরোধ, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ব্যয়ের কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, “গোল্ডেন ডোম”-এর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত।
তবে গত চার দশকের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এটিকে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অনেক বেশি করে তুলেছে। এটি সফল হলে বিশ্ব সামরিক কৌশলে এক নতুন যুগের সূচনা ঘটবে — যেমনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও দেখা যায়নি।


#GoldenDome #DonaldTrump #USMilitary #MissileDefense #SpaceTechnology #GlobalSecurity #সারাক্ষণ_রিপোর্ট