দীর্ঘমেয়াদি হতাশা থেকে ফিরে আসা
ব্রিটেনের অর্থনীতিকে নিয়ে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের হতাশা নতুন কিছু নয়। একসময় বিশ্বের শীর্ষ রিজার্ভ মুদ্রা ছিল ব্রিটিশ পাউন্ড, কিন্তু এখন তা বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মাত্র ৫ শতাংশেরও কম। লন্ডনের স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের প্রাচীনতমগুলোর একটি, আর সরকারি বন্ডের বাজার—যাকে ‘গিল্টস’ বলা হয়—একসময় নেপোলিয়ন যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছিল। অথচ এখন, মেক্সিকো ও ওমানের মতো দেশও লন্ডনের চেয়ে বেশি শেয়ার মূলধন তুলছে।
আজ ‘গিল্ট মার্কেট’ শব্দটির সঙ্গে মানুষ সবচেয়ে বেশি যুক্ত করে ‘সংকট’ শব্দটিকেই।
অর্থনীতির দুরবস্থা
বিনিয়োগকারীরা ব্রিটেন থেকে দূরে থাকছেন, এর কারণ খুঁজতে বেশি কষ্ট হয় না। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এখন ব্রিটেনে — প্রায় ৪ শতাংশ। অর্থনীতি স্থবির, আর যে সরকার অর্থনীতিকে সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তারা এখনো কার্যকর পরিকল্পনা দেখাতে পারেনি।

৪ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী র্যাচেল রিভস তাঁর আসন্ন বাজেট নিয়ে তিনটি অগ্রাধিকারের কথা বললেও, সেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল না। অতিরিক্ত ঋণনির্ভরতার কারণে সরকারি অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে এবং আরও অবনতির পথে।
আশ্চর্যজনক বাজার উত্থান
এই পরিস্থিতিতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ব্রিটেনের সম্পদের দাম তলানিতে নেমে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় — তা ঘটেনি। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাজার বেশ ভালো করছে, যা বিনিয়োগকারীদের এক ধরনের আশার সুরে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে।
পাউন্ডের পুনরুদ্ধার
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভোটের পর ব্রিটিশ পাউন্ডের মূল্য ধসে পড়েছিল। তখন মজা করে বলা হতো, পাউন্ড যেন ‘উদীয়মান বাজারের মুদ্রা’। লিজ ট্রাসের স্বল্পকালীন ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রিত্বের পর ২০২২ সালে সেই মন্তব্য প্রায় বাস্তবেই পরিণত হয়েছিল।
তবে এরপর থেকে পাউন্ড আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বছরের শুরুতে ১ পাউন্ডে ১.২৫ ডলার কেনা যেত, এখন তা ১.৩১ ডলার। যদিও মার্কিন ডলার সামগ্রিকভাবে দুর্বল হয়েছে — যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির প্রভাব বলে মনে করা হচ্ছে — তবুও পাউন্ডের এই স্থিতিশীলতা ব্রিটিশদের জন্য এক ইতিবাচক চমক।
স্টক মার্কেটে উত্থান
ব্রিটিশ শেয়ারবাজারও আশাতীতভাবে ভালো করছে। নিজ নিজ মুদ্রায় হিসাব করলে এ বছর ব্রিটেনের FTSE 100 সূচক মার্কিন S&P 500-এর চেয়েও ভালো পারফর্ম করেছে। স্টার্লিং মূল্যে হিসাব করলে FTSE-এর রিটার্ন ২৩%, যেখানে S&P 500-এর রিটার্ন মাত্র ১২%।
এটি আরও বিস্ময়কর কারণ ব্রিটেনে বড় প্রযুক্তি কোম্পানির অভাব রয়েছে, যারা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্মাদনার সুবিধা পায়।
একই সঙ্গে, দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা কমে এসেছে — ৩.৫% থেকে নেমে ২.৯% এ। বর্তমানে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের সুদহার ৪.৫% — G7 দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবু বিনিয়োগকারীদের মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা কমে যাওয়ায় সুদহার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
অন্যদের তুলনায় ব্রিটেনের অবস্থা খারাপ নয়
ব্রিটিশ অর্থনীতি এখনো দুর্বল, কিন্তু তুলনামূলকভাবে অন্যদের অবস্থাও খুব ভালো নয়। মরগান স্ট্যানলির বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু শিটস বলেন, ‘ব্রিটেনের আর্থিক পরিস্থিতি নিখুঁত নয়, তবে G7 দেশগুলোর মধ্যে কোথায় তা খুব ভালো?’
তিনি ভুল বলেননি। জিডিপির ৪% ঘাটতি নিয়ে ব্রিটেনের অবস্থাকে খারাপ বলা হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি ৬%। ফ্রান্স একের পর এক প্রধানমন্ত্রী বদলেও ঋণ কমাতে ব্যর্থ। ইতালির ঘাটতি কিছুটা কম, কিন্তু ঋণ অনেক বেশি। জাপানের ঋণ আরও বিপুল, আর তার সুদের হার দ্রুত বাড়ছে। জার্মানির অর্থনীতি ব্রিটেনের চেয়েও মন্থর। আর কানাডার রপ্তানি নির্ভরতা ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে ঝুঁকিতে।
ব্রিটেনের অর্থনীতি নিঃসন্দেহে সমস্যায় জর্জরিত, তবে বিনিয়োগকারীরা এখন বলছেন — নিজেদের অবস্থা নিয়ে অতিরিক্ত হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই। পাশের দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে নিজের ভাগ্য গণনা করলেই বোঝা যাবে, পরিস্থিতি এতটা মন্দ নয়।
#ব্রিটেন #অর্থনীতি #বিনিয়োগ #পাউন্ড #বাজার #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















