জাপানের কড়া প্রতিবাদ
টোকিও চীনের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে, কারণ ওসাকার চীনা কনসাল জেনারেল সামাজিক মাধ্যমে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাে তাকাইচির তাইওয়ান-সম্পর্কিত মন্তব্যকে আক্রমণাত্মক ভাষায় সমালোচনা করেন। জাপান সরকারের মুখপাত্র মিনোরু কিহারা বলেছেন, এ ধরনের ভাষা “চরমভাবে অনুপযুক্ত” এবং এর ফলে জনমত উত্তপ্ত হতে পারে, যখন টোকিও আসলে বেইজিংয়ের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কয়েক দিন আগে তাকাইচি বলেছিলেন, তাইওয়ানে চীনের সামরিক পদক্ষেপ জাপানের জন্য “অস্তিত্ব-সংকটজনক পরিস্থিতি” তৈরি করতে পারে; এই শব্দচয়ন জাপানের নিরাপত্তা আইনে ব্যবহৃত ভাষার খুব কাছাকাছি এবং তাইপের প্রতি ঢালাও সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। টোকিও পরে ব্যাখ্যা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কেবল সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বলেছেন; কিন্তু বেইজিং এটিকে “হস্তক্ষেপ” হিসেবে তুলে ধরে। যুক্তরাষ্ট্রের টোকিওস্থ রাষ্ট্রদূতও জাপানের অবস্থানকে সমর্থন করেন বলে কূটনৈতিক সূত্র বলছে। ফলে ছোট্ট একটি পোস্ট দ্রুতই ফুলে-ফেঁপে দুই দেশের মধ্যে উচ্চস্তরের কূটনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে রূপ নিয়েছে। জাপান চাইছে না, এ ঘটনা সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠকগুলোর ইতিবাচক পরিবেশ নষ্ট করুক; কিন্তু একই সঙ্গে দেশটির নেতৃত্বকে অভ্যন্তরীণভাবে দৃঢ়ও থাকতে হবে।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও জাপানের নতুন বার্তা
এ উত্তেজনার পেছনে রয়েছে জাপানের নিরাপত্তা নীতির চলমান বদল। তাকাইচি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো, পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা গড়া এবং তাইওয়ান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসমন্বিত অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এর জবাবে চীন বারবার বলছে, তাইওয়ান সংকটে যুক্ত হলে জাপানও সংঘাতের পক্ষ হয়ে যাবে। তাই এবার চীনা কূটনীতিকের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদকে টোকিওর এক ধরনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে—জাপান কি প্রকাশ্যে বলা কথা থেকে সরে আসবে, নাকি তা আরও নিয়মিত করবে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, টোকিও এবারও বলবে যে তাদের অবস্থান প্রতিরক্ষামূলক এবং বিদ্যমান আইনের মধ্যে; কিন্তু একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের সঙ্গে যৌথ মহড়া বা সরবরাহ শৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা থামাবে না। চীনও বোঝাতে চায়, “তাইওয়ান নিয়ে মুখ খোলা চলবে না”—অর্থাৎ আগেভাগেই রাজনৈতিক খরচ বাড়িয়ে দেওয়া। সমস্যাটি হলো, যত বেশি প্রকাশ্যে এ ধরনের সমালোচনা হবে, তাকাইচির পক্ষে ভেতরে ঢিলে দেওয়া ততই কঠিন হবে। আপাতত বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে সীমিত থাকলেও এটি স্পষ্ট যে তাইওয়ান এখনো জাপান-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে সংবেদনশীল বিন্দু এবং একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও মুহূর্তে উচ্চপর্যায়ের কূটনীতিতে পৌঁছে যাচ্ছে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















