০৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ বিবিসি চেয়ারম্যানের ক্ষমাপ্রার্থনা: ট্রাম্পের বক্তৃতা সম্পাদনায় ‘বিচারের ভুল’ স্বীকার দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়ি বিস্ফোরণ, আহত বহু বৃষ্টি থামাল চতুর্থ টি-টোয়েন্টি, ২–১ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড এনসিপি বুলেট নিয়েও প্রস্তুত- নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারি ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে সরকার: বাংলাদেশ ব্যাংক জাতীয় টেলিযোগাযোগ মনিটরিং সেন্টারের নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ওসমান সরওয়ার ঢাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ জুলাই চার্টার বাস্তবায়ন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান চীনের গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম ও অ্যান্টিমনি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা স্থগিত, নিয়ন্ত্রণ বহাল

গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই দায়ী- তদন্ত কমিটি

জুলাই মাসে এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ হয়

গত জুলাই মাসে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পেছনে এই দলটি এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মী ও তাদের সমর্থক গোপালগঞ্জবাসী – দুই পক্ষই দায়ী বলে বিচার বিভাগীয় তদন্তে উঠে এসেছে।

উসকানী, গুজবসহ দুই পক্ষের অনঢ় অবস্থান এবং মাঠের বাস্তবতার সাথে গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করে পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাসময়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার অনীবার্য পরিণতি ছিল গোপালগঞ্জের সংঘাত–– বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন এই তদন্ত প্রতিবেদনে ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পাঁচটি করণীয় তুলে ধরা হয়েছে।

তবে গোপালগঞ্জে কীভাবে ও কার গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি কমিশন তদন্ত করেনি। গুলির বিষয়টি তদন্তকারী কমিশনের টিওআর বা কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না।

এ বছর ১৬ই জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনার পর সরকার সাবেক একজন বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। ঘটনার মূল কারণ কী, কারা এর পেছনে দায়ী, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে করনীয় কী তার সুপারিশ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই কমিশনের।

গত সেপ্টেম্বরের শেষে ওই তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা হয়েছে। যদিও সরকার গোপালগঞ্জের তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে এখনো প্রকাশ করেনি।

তদন্ত কমিশনের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী গোপালগঞ্জের তদন্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে।

সংঘর্ষের কারণ

গোপালগঞ্জে ১৬ই জুলাই এনসিপি’র সমাবেশ ঘিরে দুই পক্ষই মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছিল।

তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে এনসিপি’র সারাদেশে সমাবেশ যখন গোপালগঞ্জে নাম পরিবর্তন হয়ে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়, সেখান থেকেই সংকট বেড়েছে।

তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই যে নাম পরিবর্তন করাটা মনে হয়েছে গোপালগঞ্জবাসীর ভুল বোঝাবুঝি-উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। তারই প্রেক্ষিতে প্রোগ্রামের ঠিক আগের দিন এবং ওইদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে হামলা, কিংবা ওসির গাড়িতে হামলা ককটেল বিস্ফোরণ। বিভিন্ন জায়গায় এই সবগুলো মনে হচ্ছিল যেন এনসিপির প্রোগ্রামটাকে তারা যেকোনোভাবে প্রতিহত করবে”।

“এই যে করতে দেবে না এবং এনসিপির পক্ষ থেকে করবেই–– এই যে বাস্তবতার সঙ্গে এনসিপির চিন্তার দূরত্ব, আর গোপালগঞ্জবাসীর বিশেষ এক ধরনের ট্রাইবালিজম এবং আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সারা দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে না নেওয়া; এই দুটো বিষয় আসলে কনফ্লিক্টটাকে কিংবা এই যে কার্নেজ যেটা হলো এটাকে একেবারে ইনএভিটেবল (অলঙ্ঘনীয়) করে তুলেছিল”।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী

                                                               তদন্দ কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

ওইদিন গোপালগঞ্জে যাওয়ার আগেই স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এনসিপির নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ভাঙা হতে পারে। এনসিপির সমাবেশের শেষ পর্যায়ে “মুজিববাদ মুর্দাবাদ” স্লোগান এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।

মি. সিদ্দিকী বলেন, এনসিপির সমাবেশে মুজিববাদ মুর্দাবাদ স্লোগান এলাকাবাসীকে এর ভিত্তিতে আরো উসকে দিয়েছিল।

“বিফোর এন্ডিং দ্যা প্রোগ্রাম, যেটা ছিল ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, এই মুজিববাদ মুর্দাবাদ ডিক্টাম একাডেমিকেলি আমরা যেভাবে রিড করি, গ্রাম ও মফস্বলের সাধারণ মানুষ কিন্তু সেভাবের রিড করে নাই। তাদের কাছে এটার ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম–– যে হয়তো তারা শেখ মুজিবের মাজারে এখন আক্রমণ করবে, এরকম মিসকন্সিভড একটা বিষয় আমাদের অ্যানালাইসিসে এসেছে”।

“তাদের মিসপারসেপশন (ভুল বোঝা) বা অজ্ঞতা বলেন, তারা এই বিষয়টাকে এইভাবে ধারণ করার প্রেক্ষিতে মসজিদে ঘোষণা করে গণজমায়েত করে এনসিপি নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ করা এবং পরিশেষে মিলিটারির হস্তক্ষেপে তাদের (এনিসিপি নেতাদের) প্রাণে বেঁচে যাওয়া, সর্বোপরি কনফ্লিক্টটি ভায়োলেন্ট ওয়েতে রিজলুশনটা (সহিংসতায় মোড় নেওয়া) কারোরই কাম্য ছিল না। ফলশ্রতিতে, এই কনফ্লিক্টটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল যেখানে দুপক্ষই রেসপন্সিবল- এরকমই একটা বিষয় দাঁড়িয়েছে”।

গোপালগঞ্জে ওই সংঘর্ষের আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের একটা ঘাটতি পেয়েছে তদন্ত কমিশন।

জড়িত কারা

গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্তে কমিশন নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ছবি, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

কমিশন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী জানান, যাদের নাম এসেছে কিংবা ভিডিও ফুটেজ বা পত্রপত্রিকায় যাদের অ্যাকশনে আসতে দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

“দলীয় লোকজনের নেতৃত্বেই স্থানীয় লোকজন সমবেত হয়েছে এবং তাদের উপরে আক্রমণ করেছে,” বলেন তিনি।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুর হয়

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুর হয়

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ শেষ করে যাওয়ার পথে অবরুদ্ধ এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হয়।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, যারা সেখানে সমাবেশ করতে গিয়েছিল তারা খুব তাড়াহুড়া করেছে বলে মনে হয়েছে।

যখন মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এনসিপির নেতাকর্মীরা স্থানীয়দের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং সবাইকে আহ্বান করা হয়—”আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে আসুন”—তখন সম্ভবত আর কেউই এলাকায় বসে থাকেনি; সবাই সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।

কমিশনের সুপারিশ

গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে করে ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পাঁচটি করণীয় উল্লেখ করেছে কমিশন।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ও করণীয় সম্পর্কে মি. সিদ্দিকী জানান, স্পর্শকাতর রাজনৈতিক কর্মসূচির ১৫ দিন আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তারা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া রাজনৈতিক বক্তব্যে শব্দ ব্যবহার, বাক্য চয়ন এই জায়গাগুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।

“যদি অসর্তকতা অবলম্বন করে কেউ ব্যবহার করে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ ব্যবহার করে, যার ফলে উসকানি অনুভব করে অন্য পক্ষ এবং এর ফলশ্রুতিতে একটা ভায়োলেন্ট কনফ্লিক্ট (সহিংস সংঘাত) হওয়ার চান্স তৈরি হতে পারে; এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে অ্যানালাইসিস করে তার বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে- এটা আমাদের স্পেসিফিক একটা রেকমেন্ডশন”।

বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

মি. সিদ্দিকীর ভাষায়, গোপালগঞ্জের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা একেবারেই দেখা গেছে একে অপরের প্রতি বিষোদগার থেকে। ফলে সংঘাতটা অবধারিত হয়ে গেছে।

“সারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই বিষয়গুলোকে যেন আরো বেশি করে আইনের দৃষ্টিতে দেখা হয় সেই রিকমেন্ডেশন আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিতর্কিত এবং উসকানিমূলক মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

এছাড়া মি. সিদ্দিকী জানিয়েছেন, যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি করবে তারা যেন আজ ঘোষণা দিয়ে কালই করতে না পারে সে ব্যাপারে যেন সতর্ক থাকে এই বিষয়টিও তারা তুলে ধরেছেন। বৃহত্তর কর্মসূচির ক্ষেত্রে একটা সমন্বয় যেন থাকে স্থানীয় প্রশাসন এবং যারা প্রোগ্রাম করবেন তাদের মধ্যে।

“স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে সে ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোনো অপারেশনের সময় বডি ক্যামের রাখার বিষয়টিও রয়েছে। প্রমাণ রাখার বিষয়টা যদি জনগণ জানে তাহলে সহিংস হওয়ার প্রবণতা হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হয়,” বলেন তিনি।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো মব দেখলে দায়িত্বপালনে যেন উদাসীনতা না দেখায় সে ব্যাপারে পেশাদারিত্বের জায়গা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়া গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

“যারা মারা গেছে তাদের প্রাণ তো আর ফিরে পাবে না তাদের পরিবার। আর তাদের আসলে তেমন বড় কোনো দলীয় কানেকশন দেখি নাই,” রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্বের কথা বলেছে তদন্ত কমিশন।

গোপালগঞ্জে ১৬ই জুলাই কারাগারেও হামলা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে কারা অধিদপ্তরের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে পুরস্কৃত করারও সুপারিশ করেছে কমিশন।

গুলির তদন্ত

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিতে মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা নিয়ে সমালোচনার পর চারজনের মরদেহ কবর থেকে উঠিয়ে পোস্টমর্টেম করা হয়।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গুলিতে মৃত্যুর বিষয়ে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, সবগুলো পোস্টমর্টেম রিপোর্টের একইরকম ভাষায় মতামত দেওয়া হয়েছে । পুলিশ সুপারের পাঠানো ইংরেজিতে লেখা সেই মতামতের অনুবাদ হলো-

“আমাদের অভিমত, মৃত্যুর কারণ ছিল রক্তক্ষরণ ও শক, যা পূর্ববর্তী আঘাতের ফলে ঘটেছে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃতির ছিল”।

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর ট্যাংক, ওপরে অস্ত্র হাতে বসে আছেন কয়েকজন সেনাসদস্য। পাশ দিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য

গোপালগঞ্জে কার গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু- তদন্ত কমিটির কাজের মধ্যেই ছিল না এই প্রশ্ন

এদিকে, গোপালগঞ্জে কার গুলিতে কীভাবে এই প্রাণহানি ঘটলো সেটা কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যেই ছিল না।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলছেন, “এটা টেকনিক্যাল বিষয়। সাবোটাজ হওয়ার সম্ভাবনা একপাশ থেকে যেরকম আছে, আবার যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের পক্ষ থেকেও গুলিতে মারা গেছে এই সন্দেহ ছিল। এই বিষয়গুলো আমাদের টিওআর এর মধ্যে ছিল না যে কার গুলিতে মারা গেছে”।

“একটা জীবন চলে যাওয়ার জায়গায় আমি যদি সঠিক কারণটাই উদ্ঘাটন করতে না পারলাম, এটার জন্য প্রয়োজনে সরকার আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। ফরেনসিক এক্সপার্ট, প্রয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে এক্ষেত্রে। দায় নির্ধারণ খুব জরুরি”।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায় কোন পর্যায়ে গুলি ছুড়তে পারে সেটি আইনে রয়েছে। কিন্তু মানুষের উপরে টার্গেট করে গুলি করা যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কোথাও অনুমোদন নেই।

“কেবল মানবাধিকার না, এটা যেকোনো সেন্সেই জঘন্য একটা অপরাধ। এই অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে যেন তারা লেথাল উইপন ব্যবহার না করে,” বলেন তিনি।

গোপালগঞ্জে গুলির বিষয়ে সামরিক বাহিনী থেকে কী ধরনের তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে–– সেব্যাপারে বিবিসি বাংলা জানতে চাইলে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গোপালগঞ্জের ঘটনায় জাতীয় পর্যায়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং কমিশন কর্তৃক ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইএসপিআর আরো বলছে, গত ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়’ বলে ওই সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল আইএসপিআর।

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট সরকার প্রকাশ করেনি।

কমিশন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “এখানে যে কয়টি টিওআর-(কার্যপরিধি) আছে এখানে কোনো সেনসিটিভ কিছু নাই। রুট কজ বের করতে বলেছে, ভবিষ্যৎ করণীয় কী এবং দায় কাদের। দায় হচ্ছে চিহ্নিত যাদের আমরা দেখতে পেয়েছি তারাই দায়ের আওতায় এসেছে। এখানে বস্তুনিষ্ঠতা এড়ানোর সুযোগ ছিল না। টিওআর এর মধ্যে থেকে আমরা যে কাজটুকু করতে পেরেছি সেই কাজটুকু সরকার চাইলে প্রকাশ করতে পারে”।

“আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সরকারের ট্রান্সপারেন্সির জন্য এবং সরকারের ইমেজ ডেভপমেন্টের জন্যও প্রয়োজন। সরকারের উপর আস্থা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। ওয়াকিবহাল করার মধ্য দিয়ে যদি তাদের ট্রাস্ট বৃদ্ধি পায়, সরকার তো সেই কাজটাই করবে। সেই কাজ করতে কার্পণ্য অপ্রোজনীয়”।

বিবিসি নিউজ বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

সিটি ব্যাংক ও ইউনিসেফের চুক্তি: প্রান্তিক যুবকদের সবুজ দক্ষতায় সক্ষম করে তুলতে উদ্যোগ

গোপালগঞ্জ সংঘর্ষে এনসিপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই দায়ী- তদন্ত কমিটি

০৬:০০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

গত জুলাই মাসে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পেছনে এই দলটি এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মী ও তাদের সমর্থক গোপালগঞ্জবাসী – দুই পক্ষই দায়ী বলে বিচার বিভাগীয় তদন্তে উঠে এসেছে।

উসকানী, গুজবসহ দুই পক্ষের অনঢ় অবস্থান এবং মাঠের বাস্তবতার সাথে গোয়েন্দা তথ্যের সমন্বয় করে পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাসময়ে প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতার অনীবার্য পরিণতি ছিল গোপালগঞ্জের সংঘাত–– বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সরকার গঠিত তদন্ত কমিশনের একজন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন এই তদন্ত প্রতিবেদনে ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পাঁচটি করণীয় তুলে ধরা হয়েছে।

তবে গোপালগঞ্জে কীভাবে ও কার গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়টি কমিশন তদন্ত করেনি। গুলির বিষয়টি তদন্তকারী কমিশনের টিওআর বা কার্যপরিধির মধ্যে ছিল না।

এ বছর ১৬ই জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষে গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনার পর সরকার সাবেক একজন বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে। ঘটনার মূল কারণ কী, কারা এর পেছনে দায়ী, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে করনীয় কী তার সুপারিশ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই কমিশনের।

গত সেপ্টেম্বরের শেষে ওই তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাখিল করা হয়েছে। যদিও সরকার গোপালগঞ্জের তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে এখনো প্রকাশ করেনি।

তদন্ত কমিশনের সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী গোপালগঞ্জের তদন্ত সম্পর্কে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে।

সংঘর্ষের কারণ

গোপালগঞ্জে ১৬ই জুলাই এনসিপি’র সমাবেশ ঘিরে দুই পক্ষই মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছিল।

তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে এনসিপি’র সারাদেশে সমাবেশ যখন গোপালগঞ্জে নাম পরিবর্তন হয়ে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়, সেখান থেকেই সংকট বেড়েছে।

তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এই যে নাম পরিবর্তন করাটা মনে হয়েছে গোপালগঞ্জবাসীর ভুল বোঝাবুঝি-উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। তারই প্রেক্ষিতে প্রোগ্রামের ঠিক আগের দিন এবং ওইদিন সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে হামলা, কিংবা ওসির গাড়িতে হামলা ককটেল বিস্ফোরণ। বিভিন্ন জায়গায় এই সবগুলো মনে হচ্ছিল যেন এনসিপির প্রোগ্রামটাকে তারা যেকোনোভাবে প্রতিহত করবে”।

“এই যে করতে দেবে না এবং এনসিপির পক্ষ থেকে করবেই–– এই যে বাস্তবতার সঙ্গে এনসিপির চিন্তার দূরত্ব, আর গোপালগঞ্জবাসীর বিশেষ এক ধরনের ট্রাইবালিজম এবং আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সারা দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে না নেওয়া; এই দুটো বিষয় আসলে কনফ্লিক্টটাকে কিংবা এই যে কার্নেজ যেটা হলো এটাকে একেবারে ইনএভিটেবল (অলঙ্ঘনীয়) করে তুলেছিল”।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী

                                                               তদন্দ কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

ওইদিন গোপালগঞ্জে যাওয়ার আগেই স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, এনসিপির নেতৃত্বে শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি ভাঙা হতে পারে। এনসিপির সমাবেশের শেষ পর্যায়ে “মুজিববাদ মুর্দাবাদ” স্লোগান এলাকাবাসীকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।

মি. সিদ্দিকী বলেন, এনসিপির সমাবেশে মুজিববাদ মুর্দাবাদ স্লোগান এলাকাবাসীকে এর ভিত্তিতে আরো উসকে দিয়েছিল।

“বিফোর এন্ডিং দ্যা প্রোগ্রাম, যেটা ছিল ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, এই মুজিববাদ মুর্দাবাদ ডিক্টাম একাডেমিকেলি আমরা যেভাবে রিড করি, গ্রাম ও মফস্বলের সাধারণ মানুষ কিন্তু সেভাবের রিড করে নাই। তাদের কাছে এটার ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম–– যে হয়তো তারা শেখ মুজিবের মাজারে এখন আক্রমণ করবে, এরকম মিসকন্সিভড একটা বিষয় আমাদের অ্যানালাইসিসে এসেছে”।

“তাদের মিসপারসেপশন (ভুল বোঝা) বা অজ্ঞতা বলেন, তারা এই বিষয়টাকে এইভাবে ধারণ করার প্রেক্ষিতে মসজিদে ঘোষণা করে গণজমায়েত করে এনসিপি নেতা-কর্মীদের উপর আক্রমণ করা এবং পরিশেষে মিলিটারির হস্তক্ষেপে তাদের (এনিসিপি নেতাদের) প্রাণে বেঁচে যাওয়া, সর্বোপরি কনফ্লিক্টটি ভায়োলেন্ট ওয়েতে রিজলুশনটা (সহিংসতায় মোড় নেওয়া) কারোরই কাম্য ছিল না। ফলশ্রতিতে, এই কনফ্লিক্টটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল যেখানে দুপক্ষই রেসপন্সিবল- এরকমই একটা বিষয় দাঁড়িয়েছে”।

গোপালগঞ্জে ওই সংঘর্ষের আগে থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। সবমিলিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের একটা ঘাটতি পেয়েছে তদন্ত কমিশন।

জড়িত কারা

গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্তে কমিশন নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত ছবি, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

কমিশন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী জানান, যাদের নাম এসেছে কিংবা ভিডিও ফুটেজ বা পত্রপত্রিকায় যাদের অ্যাকশনে আসতে দেখা গেছে, তাদের বেশিরভাগেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

“দলীয় লোকজনের নেতৃত্বেই স্থানীয় লোকজন সমবেত হয়েছে এবং তাদের উপরে আক্রমণ করেছে,” বলেন তিনি।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুর হয়

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ ও ভাঙচুর হয়

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ শেষ করে যাওয়ার পথে অবরুদ্ধ এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হয়।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, যারা সেখানে সমাবেশ করতে গিয়েছিল তারা খুব তাড়াহুড়া করেছে বলে মনে হয়েছে।

যখন মসজিদ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এনসিপির নেতাকর্মীরা স্থানীয়দের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে এবং সবাইকে আহ্বান করা হয়—”আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে বেরিয়ে আসুন”—তখন সম্ভবত আর কেউই এলাকায় বসে থাকেনি; সবাই সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে আসে।

কমিশনের সুপারিশ

গোপালগঞ্জের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে করে ৮-১০টি সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে পাঁচটি করণীয় উল্লেখ করেছে কমিশন।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশ ও করণীয় সম্পর্কে মি. সিদ্দিকী জানান, স্পর্শকাতর রাজনৈতিক কর্মসূচির ১৫ দিন আগে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তারা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া রাজনৈতিক বক্তব্যে শব্দ ব্যবহার, বাক্য চয়ন এই জায়গাগুলোতে সতর্ক থাকতে হবে।

“যদি অসর্তকতা অবলম্বন করে কেউ ব্যবহার করে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে কেউ ব্যবহার করে, যার ফলে উসকানি অনুভব করে অন্য পক্ষ এবং এর ফলশ্রুতিতে একটা ভায়োলেন্ট কনফ্লিক্ট (সহিংস সংঘাত) হওয়ার চান্স তৈরি হতে পারে; এই অনুমানের উপর ভিত্তি করে অ্যানালাইসিস করে তার বিরুদ্ধে যেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে- এটা আমাদের স্পেসিফিক একটা রেকমেন্ডশন”।

বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

বিবিসি বাংলাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তদন্ত কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী

মি. সিদ্দিকীর ভাষায়, গোপালগঞ্জের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা একেবারেই দেখা গেছে একে অপরের প্রতি বিষোদগার থেকে। ফলে সংঘাতটা অবধারিত হয়ে গেছে।

“সারা বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই বিষয়গুলোকে যেন আরো বেশি করে আইনের দৃষ্টিতে দেখা হয় সেই রিকমেন্ডেশন আমরা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিতর্কিত এবং উসকানিমূলক মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়েছে,” বলেন তিনি।

এছাড়া মি. সিদ্দিকী জানিয়েছেন, যারা রাজনৈতিক কর্মসূচি করবে তারা যেন আজ ঘোষণা দিয়ে কালই করতে না পারে সে ব্যাপারে যেন সতর্ক থাকে এই বিষয়টিও তারা তুলে ধরেছেন। বৃহত্তর কর্মসূচির ক্ষেত্রে একটা সমন্বয় যেন থাকে স্থানীয় প্রশাসন এবং যারা প্রোগ্রাম করবেন তাদের মধ্যে।

“স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে সে ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরো সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোনো অপারেশনের সময় বডি ক্যামের রাখার বিষয়টিও রয়েছে। প্রমাণ রাখার বিষয়টা যদি জনগণ জানে তাহলে সহিংস হওয়ার প্রবণতা হ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি হয়,” বলেন তিনি।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেকোনো মব দেখলে দায়িত্বপালনে যেন উদাসীনতা না দেখায় সে ব্যাপারে পেশাদারিত্বের জায়গা নিশ্চিতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়া গোপালগঞ্জে গুলিতে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিশন।

“যারা মারা গেছে তাদের প্রাণ তো আর ফিরে পাবে না তাদের পরিবার। আর তাদের আসলে তেমন বড় কোনো দলীয় কানেকশন দেখি নাই,” রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্বের কথা বলেছে তদন্ত কমিশন।

গোপালগঞ্জে ১৬ই জুলাই কারাগারেও হামলা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে কারা অধিদপ্তরের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে পুরস্কৃত করারও সুপারিশ করেছে কমিশন।

গুলির তদন্ত

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে গুলিতে মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। কোনো ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা নিয়ে সমালোচনার পর চারজনের মরদেহ কবর থেকে উঠিয়ে পোস্টমর্টেম করা হয়।

গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গুলিতে মৃত্যুর বিষয়ে নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, সবগুলো পোস্টমর্টেম রিপোর্টের একইরকম ভাষায় মতামত দেওয়া হয়েছে । পুলিশ সুপারের পাঠানো ইংরেজিতে লেখা সেই মতামতের অনুবাদ হলো-

“আমাদের অভিমত, মৃত্যুর কারণ ছিল রক্তক্ষরণ ও শক, যা পূর্ববর্তী আঘাতের ফলে ঘটেছে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃতির ছিল”।

রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর ট্যাংক, ওপরে অস্ত্র হাতে বসে আছেন কয়েকজন সেনাসদস্য। পাশ দিয়ে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন সদস্য

গোপালগঞ্জে কার গুলিতে পাঁচ জনের মৃত্যু- তদন্ত কমিটির কাজের মধ্যেই ছিল না এই প্রশ্ন

এদিকে, গোপালগঞ্জে কার গুলিতে কীভাবে এই প্রাণহানি ঘটলো সেটা কমিশনের কার্যপরিধির মধ্যেই ছিল না।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলছেন, “এটা টেকনিক্যাল বিষয়। সাবোটাজ হওয়ার সম্ভাবনা একপাশ থেকে যেরকম আছে, আবার যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের পক্ষ থেকেও গুলিতে মারা গেছে এই সন্দেহ ছিল। এই বিষয়গুলো আমাদের টিওআর এর মধ্যে ছিল না যে কার গুলিতে মারা গেছে”।

“একটা জীবন চলে যাওয়ার জায়গায় আমি যদি সঠিক কারণটাই উদ্ঘাটন করতে না পারলাম, এটার জন্য প্রয়োজনে সরকার আলাদাভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে। ফরেনসিক এক্সপার্ট, প্রয়োজনে ইন্টারন্যাশনাল এক্সপার্টদের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে এক্ষেত্রে। দায় নির্ধারণ খুব জরুরি”।

সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায় কোন পর্যায়ে গুলি ছুড়তে পারে সেটি আইনে রয়েছে। কিন্তু মানুষের উপরে টার্গেট করে গুলি করা যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কোথাও অনুমোদন নেই।

“কেবল মানবাধিকার না, এটা যেকোনো সেন্সেই জঘন্য একটা অপরাধ। এই অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে যেন তারা লেথাল উইপন ব্যবহার না করে,” বলেন তিনি।

গোপালগঞ্জে গুলির বিষয়ে সামরিক বাহিনী থেকে কী ধরনের তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে–– সেব্যাপারে বিবিসি বাংলা জানতে চাইলে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, গোপালগঞ্জের ঘটনায় জাতীয় পর্যায়ে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং কমিশন কর্তৃক ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইএসপিআর আরো বলছে, গত ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেও বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগে বাধ্য হয়’ বলে ওই সময় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল আইএসপিআর।

গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট সরকার প্রকাশ করেনি।

কমিশন সদস্য সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, “এখানে যে কয়টি টিওআর-(কার্যপরিধি) আছে এখানে কোনো সেনসিটিভ কিছু নাই। রুট কজ বের করতে বলেছে, ভবিষ্যৎ করণীয় কী এবং দায় কাদের। দায় হচ্ছে চিহ্নিত যাদের আমরা দেখতে পেয়েছি তারাই দায়ের আওতায় এসেছে। এখানে বস্তুনিষ্ঠতা এড়ানোর সুযোগ ছিল না। টিওআর এর মধ্যে থেকে আমরা যে কাজটুকু করতে পেরেছি সেই কাজটুকু সরকার চাইলে প্রকাশ করতে পারে”।

“আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সরকারের ট্রান্সপারেন্সির জন্য এবং সরকারের ইমেজ ডেভপমেন্টের জন্যও প্রয়োজন। সরকারের উপর আস্থা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। ওয়াকিবহাল করার মধ্য দিয়ে যদি তাদের ট্রাস্ট বৃদ্ধি পায়, সরকার তো সেই কাজটাই করবে। সেই কাজ করতে কার্পণ্য অপ্রোজনীয়”।

বিবিসি নিউজ বাংলা