০৫:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

আগামী ৫০ বছর চলবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: সাবেক ডব্লিউটিও প্রধানের সতর্কবার্তা

দীর্ঘমেয়াদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা: নতুন রূপে বিস্তার

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাবেক মহাপরিচালক পাস্কাল লামি সতর্ক করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী কয়েক দশক ধরে চলবে এবং তা বাণিজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়বে কৌশলগত খাত ও সরবরাহ শৃঙ্খলে। তিনি বলেছেন, এই সম্পর্ক “ঝাঁকুনি ও অস্থিরতা”-র মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাবে।

সাংহাইয়ের চায়না ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলে এক সংবাদ অনুষ্ঠানে লামি বলেন, “তাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কখনও থামবে না। যখন দুটি দেশই বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হতে চায় এবং পরস্পরকে হুমকি হিসেবে দেখে, তখন এমন সংঘাত অনিবার্য।”


সাময়িক বিরতি: ট্রাম্প ও শি-র চুক্তি

গত ৩০ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক বছরের জন্য বাণিজ্য যুদ্ধ স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তারা শুল্ক কমানো ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা শিথিলতা আনতে সম্মত হন। এই পদক্ষেপে এপ্রিল থেকে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের ভেদাভেদ নেই—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়ই এই অবস্থান সমর্থন করছে। অন্যদিকে, বেইজিংও দেখিয়ে দিয়েছে যে নিজের স্বার্থে আঘাত এলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।


প্রতিযোগিতার নতুন ধারা: ‘অস্ত্রায়িত অর্থনীতি’

লামি ব্যাখ্যা করেন, ট্রাম্পের সময়ে আরোপিত শুল্কই এখন একমাত্র সমস্যা নয়। বরং এখন একটি বৃহত্তর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—যেখানে কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল পণ্য উৎপাদন থেকে দেশগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের আলাদা করছে (‘ডিকাপলিং’), এবং অপরদিকে নিজেদের প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সুবিধাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

তার ভাষায়, “একদিকে আপনি এমন ক্ষেত্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন যা কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে আপনি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগামী, সেগুলোকে ব্যবহার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপের মুখে ফেলতে।”


পাস্কাল লামির মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি ভবিষ্যতে প্রযুক্তি, সরবরাহ ব্যবস্থা, এমনকি কূটনৈতিক প্রভাবেও বিস্তার লাভ করবে। এই ভূরাজনৈতিক সংঘাত তাই কেবল অস্থায়ী নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কাঠামোকেই দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করবে।

#চীন #যুক্তরাষ্ট্র #বাণিজ্যযুদ্ধ #পাস্কাললামি #ডব্লিউটিও #ভূরাজনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী ৫০ বছর চলবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা: সাবেক ডব্লিউটিও প্রধানের সতর্কবার্তা

০২:২৩:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

দীর্ঘমেয়াদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা: নতুন রূপে বিস্তার

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সাবেক মহাপরিচালক পাস্কাল লামি সতর্ক করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগামী কয়েক দশক ধরে চলবে এবং তা বাণিজ্য থেকে ছড়িয়ে পড়বে কৌশলগত খাত ও সরবরাহ শৃঙ্খলে। তিনি বলেছেন, এই সম্পর্ক “ঝাঁকুনি ও অস্থিরতা”-র মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাবে।

সাংহাইয়ের চায়না ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলে এক সংবাদ অনুষ্ঠানে লামি বলেন, “তাদের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা কখনও থামবে না। যখন দুটি দেশই বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হতে চায় এবং পরস্পরকে হুমকি হিসেবে দেখে, তখন এমন সংঘাত অনিবার্য।”


সাময়িক বিরতি: ট্রাম্প ও শি-র চুক্তি

গত ৩০ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এক বছরের জন্য বাণিজ্য যুদ্ধ স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন। তারা শুল্ক কমানো ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা শিথিলতা আনতে সম্মত হন। এই পদক্ষেপে এপ্রিল থেকে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের ভেদাভেদ নেই—ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয়ই এই অবস্থান সমর্থন করছে। অন্যদিকে, বেইজিংও দেখিয়ে দিয়েছে যে নিজের স্বার্থে আঘাত এলে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।


প্রতিযোগিতার নতুন ধারা: ‘অস্ত্রায়িত অর্থনীতি’

লামি ব্যাখ্যা করেন, ট্রাম্পের সময়ে আরোপিত শুল্কই এখন একমাত্র সমস্যা নয়। বরং এখন একটি বৃহত্তর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—যেখানে কৌশলগতভাবে সংবেদনশীল পণ্য উৎপাদন থেকে দেশগুলো ধীরে ধীরে নিজেদের আলাদা করছে (‘ডিকাপলিং’), এবং অপরদিকে নিজেদের প্রযুক্তিগত বা অর্থনৈতিক সুবিধাকে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে।

তার ভাষায়, “একদিকে আপনি এমন ক্ষেত্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন যা কৌশলগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, অন্যদিকে আপনি যেসব ক্ষেত্রে অগ্রগামী, সেগুলোকে ব্যবহার করছেন প্রতিদ্বন্দ্বীকে চাপের মুখে ফেলতে।”


পাস্কাল লামির মতে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল বাণিজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি ভবিষ্যতে প্রযুক্তি, সরবরাহ ব্যবস্থা, এমনকি কূটনৈতিক প্রভাবেও বিস্তার লাভ করবে। এই ভূরাজনৈতিক সংঘাত তাই কেবল অস্থায়ী নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কাঠামোকেই দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করবে।

#চীন #যুক্তরাষ্ট্র #বাণিজ্যযুদ্ধ #পাস্কাললামি #ডব্লিউটিও #ভূরাজনীতি