০৫:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিরল সৌন্দর্য: সাদা মারিয়ান্থাসের রূপ ও বৈচিত্র্য

সাদা মারিয়ান্থাস, বৈজ্ঞানিক নাম Marianthus candidus, একটি ফুলগাছ প্রজাতি যা পিট্টোস্পোরেসি (Pittosporaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এই গাছটি সাধারণত একটি আরোহী বা লতানো ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ, যার ডিম্বাকার পাতা এবং সাদা ফুল থাকে। ফুলগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে হালকা বাদামী বা গোলাপি রঙ ধারণ করে।

উদ্ভিদের বর্ণনা

মারিয়ান্থাস ক্যান্ডিডুস একটি লতানো গুল্ম, যার কাণ্ড প্রথমে মসৃণ ও রেশমি লোমে ঢাকা থাকে, কিন্তু বয়স বাড়লে মসৃণ ও লোমহীন হয়ে যায়। পূর্ণবয়স্ক পাতাগুলি ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪০–৭০ মিমি এবং প্রস্থে ১২–১৫ মিমি, এবং ছোট ডাঁটি (পেটিওল) ২–৮ মিমি লম্বা। পাতার নিচের দিকটি রেশমি লোমে আবৃত থাকে।

ফুলগুলো সাধারণত দশ থেকে ত্রিশটি পর্যন্ত একত্রে জন্মে। ফুলের গুচ্ছের দৈর্ঘ্য ৪০–৫৫ মিমি, আর প্রতিটি ফুলের ডাঁটি ১০ মিমির কম লম্বা, সেপাল (বাইরের পাপড়ি) ডিম্বাকৃতি, দৈর্ঘ্য ৩.৫–৫.০ মিমি, এবং রঙে গোলাপি ও সাদা। ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে, প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২–২২ মিমি। প্রথমে সাদা থাকলেও পরে হালকা বাদামী বা গোলাপি হয়ে যায়। পাপড়িগুলো নিচের দিকে যুক্ত হয়ে একটি ছোট নল তৈরি করে এবং উপরে চামচের মতো ছড়িয়ে থাকে।

Marianthus candidus : White Marianthus | Atlas of Living Australia

ফুলের মৌসুম

এই প্রজাতির ফুল সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফোটে, যা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বসন্তকাল।

শ্রেণিবিন্যাস ও নামকরণ

মারিয়ান্থাস ক্যান্ডিডাস প্রজাতিটি প্রথম ১৮৩৭ সালে স্টিফান এন্ডলিখার (Stephan Endlicher) কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণনা করা হয়। তিনি এটি চার্লস ফন হিউগেল (Charles von Hügel) কর্তৃক সংগৃহীত একটি উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে লিখেছিলেন। উদ্ভিদটি সোয়ান নদী কলোনি (Swan River Colony) অঞ্চলে সংগৃহীত হয়েছিল।

এর বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ ‘candidus’ শব্দটির অর্থ হলো “বিশুদ্ধ চকচকে সাদা”, যা ফুলের রঙের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।

বিস্তার ও আবাসস্থল

Marianthus candidus - Wikipedia

সাদা মারিয়ান্থাস সাধারণত উপকূলীয় তৃণভূমিচুনাপাথরের সমভূমি, এবং গ্রানাইট পাথরের এলাকায় জন্মে। এটি নদীর তীরে বা বনাঞ্চলের মধ্যেও দেখা যায়। এই উদ্ভিদ পার্থ (Perth) থেকে কেপ লিউইন (Cape Leeuwin) এবং ম্যানজিমাপ (Manjimup) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Esperance PlainsJarrah ForestSwan Coastal Plain, এবং Warren bioregion এলাকায় সাধারণভাবে জন্মায়।

সংরক্ষণ অবস্থা

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Department of Biodiversity, Conservation and Attractions অনুযায়ী, Marianthus candidus বর্তমানে ‘অসংকটাপন্ন’ (Not Threatened) প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ, এটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে নেই, এবং তার প্রাকৃতিক পরিবেশে যথেষ্ট পরিমাণে টিকে আছে।

সাদা মারিয়ান্থাস একটি মনোরম ফুলগাছ যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পরিবেশে বিশেষভাবে অভিযোজিত। এর উজ্জ্বল সাদা ফুল ও প্রাকৃতিক আরোহী গঠন এটি স্থানীয় উদ্ভিদবৈচিত্র্যের এক অনন্য অংশ করে তুলেছে।

 

#Marianthus_candidus #অস্ট্রেলিয়ার_উদ্ভিদ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিরল সৌন্দর্য: সাদা মারিয়ান্থাসের রূপ ও বৈচিত্র্য

০২:৪৮:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

সাদা মারিয়ান্থাস, বৈজ্ঞানিক নাম Marianthus candidus, একটি ফুলগাছ প্রজাতি যা পিট্টোস্পোরেসি (Pittosporaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এই গাছটি সাধারণত একটি আরোহী বা লতানো ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ, যার ডিম্বাকার পাতা এবং সাদা ফুল থাকে। ফুলগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে হালকা বাদামী বা গোলাপি রঙ ধারণ করে।

উদ্ভিদের বর্ণনা

মারিয়ান্থাস ক্যান্ডিডুস একটি লতানো গুল্ম, যার কাণ্ড প্রথমে মসৃণ ও রেশমি লোমে ঢাকা থাকে, কিন্তু বয়স বাড়লে মসৃণ ও লোমহীন হয়ে যায়। পূর্ণবয়স্ক পাতাগুলি ডিম্বাকার, দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪০–৭০ মিমি এবং প্রস্থে ১২–১৫ মিমি, এবং ছোট ডাঁটি (পেটিওল) ২–৮ মিমি লম্বা। পাতার নিচের দিকটি রেশমি লোমে আবৃত থাকে।

ফুলগুলো সাধারণত দশ থেকে ত্রিশটি পর্যন্ত একত্রে জন্মে। ফুলের গুচ্ছের দৈর্ঘ্য ৪০–৫৫ মিমি, আর প্রতিটি ফুলের ডাঁটি ১০ মিমির কম লম্বা, সেপাল (বাইরের পাপড়ি) ডিম্বাকৃতি, দৈর্ঘ্য ৩.৫–৫.০ মিমি, এবং রঙে গোলাপি ও সাদা। ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে, প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১২–২২ মিমি। প্রথমে সাদা থাকলেও পরে হালকা বাদামী বা গোলাপি হয়ে যায়। পাপড়িগুলো নিচের দিকে যুক্ত হয়ে একটি ছোট নল তৈরি করে এবং উপরে চামচের মতো ছড়িয়ে থাকে।

Marianthus candidus : White Marianthus | Atlas of Living Australia

ফুলের মৌসুম

এই প্রজাতির ফুল সাধারণত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফোটে, যা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার বসন্তকাল।

শ্রেণিবিন্যাস ও নামকরণ

মারিয়ান্থাস ক্যান্ডিডাস প্রজাতিটি প্রথম ১৮৩৭ সালে স্টিফান এন্ডলিখার (Stephan Endlicher) কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ণনা করা হয়। তিনি এটি চার্লস ফন হিউগেল (Charles von Hügel) কর্তৃক সংগৃহীত একটি উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে লিখেছিলেন। উদ্ভিদটি সোয়ান নদী কলোনি (Swan River Colony) অঞ্চলে সংগৃহীত হয়েছিল।

এর বৈজ্ঞানিক নামের দ্বিতীয় অংশ ‘candidus’ শব্দটির অর্থ হলো “বিশুদ্ধ চকচকে সাদা”, যা ফুলের রঙের বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে।

বিস্তার ও আবাসস্থল

Marianthus candidus - Wikipedia

সাদা মারিয়ান্থাস সাধারণত উপকূলীয় তৃণভূমিচুনাপাথরের সমভূমি, এবং গ্রানাইট পাথরের এলাকায় জন্মে। এটি নদীর তীরে বা বনাঞ্চলের মধ্যেও দেখা যায়। এই উদ্ভিদ পার্থ (Perth) থেকে কেপ লিউইন (Cape Leeuwin) এবং ম্যানজিমাপ (Manjimup) পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Esperance PlainsJarrah ForestSwan Coastal Plain, এবং Warren bioregion এলাকায় সাধারণভাবে জন্মায়।

সংরক্ষণ অবস্থা

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার Department of Biodiversity, Conservation and Attractions অনুযায়ী, Marianthus candidus বর্তমানে ‘অসংকটাপন্ন’ (Not Threatened) প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ, এটি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে নেই, এবং তার প্রাকৃতিক পরিবেশে যথেষ্ট পরিমাণে টিকে আছে।

সাদা মারিয়ান্থাস একটি মনোরম ফুলগাছ যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের পরিবেশে বিশেষভাবে অভিযোজিত। এর উজ্জ্বল সাদা ফুল ও প্রাকৃতিক আরোহী গঠন এটি স্থানীয় উদ্ভিদবৈচিত্র্যের এক অনন্য অংশ করে তুলেছে।

 

#Marianthus_candidus #অস্ট্রেলিয়ার_উদ্ভিদ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট