পাকিস্তান সিনেট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে। এর ফলে দেশে ফেডারেল সংবিধানিক আদালত গঠন, বিচার বিভাগের কাঠামোগত পরিবর্তন, সামরিক বাহিনীর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পথ খুলে গেল। বিশ্লেষকদের মতে, এটি পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোয় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
বিল পাসের প্রেক্ষাপট
পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন ও জিও নিউজ জানিয়েছে, ৯৬ সদস্যের উচ্চকক্ষে ৬৪ জন সদস্য বিলটির পক্ষে ভোট দেওয়ায় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়। বিরোধী দলীয় সদস্যরা ভোট বর্জন করায় বিলটি কোনো বিরোধিতা ছাড়াই সহজে পাস হয়।
বিলটি আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার উপস্থাপন করেন। এতে একটি ফেডারেল সংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা সংবিধান-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখবে এবং সুপ্রিম কোর্টের মামলার চাপ কমাবে। সংশোধনীতে পাকিস্তানের বিচার কমিশন (জেসিপি) ও সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর প্রশাসনিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সিনেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান সিদ্দিক ইউসুফ রেজা গিলানি। ধারাবাহিকভাবে ধারা অনুযায়ী ভোটগ্রহণ শেষে আনুষ্ঠানিক ভোট হয়। বিরোধী সদস্যরা স্লোগান দিতে দিতে বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলেন এবং ভোটের আগেই সভা ত্যাগ করেন।
বিলের মূল বিষয়বস্তু
• ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে নতুন পদ ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’, যিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হবেন।
• বর্তমান সেনাপ্রধান (চিফ অব আর্মি স্টাফ) ওই পদ গ্রহণ করবেন।
• ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব এয়ার ফোর্স ও অ্যাডমিরাল অব ফ্লিট পদবিগুলো আজীবন বহাল থাকবে।
• ফেডারেল সংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হবে।
• বিচারপতিদের নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।
• সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা নতুন আদালতের হাতে স্থানান্তরিত হবে।

সংসদীয় কমিটির ভূমিকা
ভোটের আগে সংসদের দুই কক্ষের যৌথ আইন ও বিচার কমিটি বিলটি পর্যালোচনা করে সামান্য পরিবর্তনসহ অনুমোদন দেয়। বিরোধী দল কমিটির আলোচনায় অংশ নেয়নি।
কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর ফারুক এইচ. নাইক জানান, দুই দিনের আলোচনায় খসড়া বিলটিতে “অনেক পরিবর্তন” আনা হয়। জিও নিউজ জানায়, কমিটির অনুমোদিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব হলো ফেডারেল সংবিধানিক আদালতের গঠন, যেখানে দেশের সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং ইসলামাবাদ হাইকোর্টের একজন বিচারপতিও অন্তর্ভুক্ত হবেন।
বিচারপতিদের যোগ্যতার শর্তও পরিবর্তন করা হয়েছে — আগের সাত বছরের পরিবর্তে এখন পাঁচ বছরের হাইকোর্ট অভিজ্ঞতা থাকলেই প্রার্থী হতে পারবেন। নাইক আরও জানান, আদালত স্বপ্রণোদিত ক্ষমতা (suo motu) বজায় রাখবে, তবে তা কেবল কোনো আবেদন পাওয়ার পরই প্রয়োগ করা যাবে, একতরফাভাবে নয়। এর লক্ষ্য হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রেখে প্রক্রিয়াগত ভারসাম্য রক্ষা করা।
বিচারপতি বদলি ও প্রশাসনিক পরিবর্তন
ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশোধনীতে বিচারপতিদের বদলির নিয়মও পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে একজন হাইকোর্টের বিচারপতিকে অন্য প্রদেশে স্থানান্তর করা যাবে বিচার কমিশন অব পাকিস্তানের মাধ্যমে, যেখানে সংসদ, নির্বাহী বিভাগ, নাগরিক সমাজ ও আইনজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
কমিটি আরও সুপারিশ করেছে, রাজস্ব-সংক্রান্ত মামলায় দেওয়া অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ (স্টে অর্ডার) এক বছরের মধ্যে রায় না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে — যা মামলার জট কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া জাতীয় পরিষদের স্পিকার এখন একজন নারী, অমুসলিম বা প্রযুক্তিবিদ সদস্যকে জেসিপির সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারবেন।
আইনমন্ত্রী তারার বলেন, এই সংশোধনী রাজনৈতিক দল ও আইনজীবী পরিষদগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি প্রতিফলিত করছে। এর মাধ্যমে সংবিধানের কাঠামো আধুনিক করা এবং সংবিধান-সংক্রান্ত বিশেষায়িত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন: “ফেডারেল সংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা হলে সুপ্রিম কোর্ট তার আপিল সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরও মনোযোগ দিতে পারবে এবং নাগরিক ও ফৌজদারি মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।”

পরবর্তী ধাপ
৫৯ ধারার এই বিলটি এখন জাতীয় পরিষদে উপস্থাপন করা হবে ভোটের জন্য। অনুমোদিত হলে এটি পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক সংস্কারগুলোর একটি হয়ে উঠবে — যা দেশের বিচারব্যবস্থা ও শাসন কাঠামো উভয়ের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
#Pakistan #SenateBill #PakistanPolitics #Judiciary #MilitaryPower #ConstitutionAmendment #SarakKhonReport
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















