০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি আল-ওথমান মসজিদের পুনঃস্থাপন কাজ শেষের পথে, রমজানের আগেই পুনরায় খোলা হবে ভুলভাবে উপস্থাপিত বক্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন মির্জা ফখরুল দিল্লিতে হামলার ছক তৈরির অভিযোগে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করল ঢাকা ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১২ জন সূত্রাপুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুনে আতঙ্ক হামাস যোদ্ধাদের আটকে থাকা পরিস্থিতি গাজা চুক্তির অগ্রগতি ব্যাহত করছে জাপানে উঁচু শহরের রোদে নতুন আতঙ্ক — ভাল্লুকের হামলা বাড়ছে, আতঙ্কে নাগরিকরা ডিএসইতে ১০ দিনের পতনের পর সূচক উত্থান; লেনদেন কমেছে সামান্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন: হাফিজ ভারতের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে, বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘাঁটি হিসেবে: গোয়েন্দা সূত্র

২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী: পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোয় কীভাবে বড় পরিবর্তন আনবে

  • Sarakhon Report
  • ০৫:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
  • 16

পাকিস্তানের সরকার সেনেটের মাধ্যমে ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল উপস্থাপন করেছে, যা দেশের সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোয় ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই বিলের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি হবে, আর বহুদিনের পুরোনো “চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি (সিজেসিসি)” পদটি বিলুপ্ত করা হবে।


নতুন কাঠামো: প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদ সৃষ্টি

এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যার ফলে দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব আরও বিস্তৃত ক্ষমতা ও সংবিধানিক সুরক্ষা পাবে।
“চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” পদটি তৈরি করে সেনাপ্রধানকে তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ অবস্থানে বসানো হবে।


২৪৩ অনুচ্ছেদে মূল পরিবর্তনগুলো

১. সেনাপ্রধানকে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
২. সিজেসিসি বা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি পদটি বিলুপ্ত হবে।
৩. “ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড” নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি হবে, যা পারমাণবিক ও কৌশলগত সম্পদের তত্ত্বাবধান করবে।
৪. রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেবেন।
৫. ফাইভ-স্টার অফিসারদের আজীবন সংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হবে।

Pakistan's 27th Constitutional Amendment bill approved by standing  committees after some changes: senator - Asia News NetworkAsia News Network

নতুন পদ ও ক্ষমতার বিবরণ

সংশোধনী খসড়া অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর প্রধান (চিফ অব আর্মি স্টাফ) একই সঙ্গে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানের সুপারিশে “ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড”-এর কমান্ডার নিয়োগ দেবেন, যিনি সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন।

ফাইভ-স্টার পদমর্যাদা — যেমন ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স বা অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট — পাওয়া কর্মকর্তারা আজীবন ইউনিফর্মে থাকবেন এবং তাদের অপসারণ কেবল সংসদের মাধ্যমে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সম্ভব হবে।
তাদের দায়িত্ব ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে।


সেনাপ্রধানের নতুন মর্যাদা

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার সিনেটে জানান, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটি কোনো পদ নয়, বরং সম্মানসূচক উপাধি। বিভিন্ন দেশে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর জাতীয় বীরদের এমন সম্মানসূচক উপাধি দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, “এই উপাধিগুলো আজীবনের জন্য। এটি কেবল সম্মানের প্রতীক।”
তিনি স্পষ্ট করেন যে, এই উপাধি প্রত্যাহারের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী নয়, বরং সংসদের হাতে থাকবে।
নভেম্বর ২৭, ২০২৫ তারিখে বর্তমান সিজেসিসি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার মেয়াদ শেষে এই পদটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে।


রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, এই সংশোধনী সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোকে আধুনিকায়ন এবং সাম্প্রতিক বিশেষ পদোন্নতিগুলোকে আইনি কাঠামোয় আনতে একটি “প্রযুক্তিগত আপডেট” মাত্র।
তবে বিরোধী দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে, এটি সামরিক প্রতিষ্ঠানের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করবে, যা বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বকে দুর্বল করতে পারে।

27th Constitutional Amendment: Will the bill give unchecked powers to  Pakistan army chief Asim Munir? – Firstpost

বিতর্কিত সময় ও প্রেক্ষাপট

বিলটি এসেছে এমন এক সময়, যখন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার অভ্যন্তরীণ আলোচনায় ব্যস্ত। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ৩ নভেম্বর, যখন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পিএমএল-এন দলের প্রতিনিধিরা তাদের সমর্থন চেয়েছেন সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য।

এই বিলের সময়কাল আরও বিতর্ক সৃষ্টি করে, কারণ এটি আসে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল পদোন্নতির পরপরই — যা পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা।


ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত

যদি বিলটি অনুমোদিত হয়, তবে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি অফিস বিলুপ্ত হবে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান জেনারেল মির্জা হবেন পাকিস্তানের ইতিহাসের শেষ সিজেসিসি।

এই ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী এখন ইসলামাবাদে এক উত্তপ্ত বিতর্কের কেন্দ্রে। এটি কার্যকর হলে পাকিস্তানের সামরিক কমান্ড কাঠামোয় ১৯৮০-এর দশকের পর সবচেয়ে বড় সাংবিধানিক পরিবর্তন ঘটবে।
এবং দেশের দীর্ঘদিনের বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের ভারসাম্যে নতুন অধ্যায় সূচিত হতে পারে।


#পাকিস্তান #সাংবিধানিক_সংশোধনী #সামরিক_নেতৃত্ব #আসিম_মুনির #বিলাওয়াল_ভুট্টো #পিএমএলএন

জনপ্রিয় সংবাদ

শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী: পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোয় কীভাবে বড় পরিবর্তন আনবে

০৫:৫৬:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের সরকার সেনেটের মাধ্যমে ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল উপস্থাপন করেছে, যা দেশের সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোয় ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই বিলের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি হবে, আর বহুদিনের পুরোনো “চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি (সিজেসিসি)” পদটি বিলুপ্ত করা হবে।


নতুন কাঠামো: প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান পদ সৃষ্টি

এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২৪৩ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যার ফলে দেশের শীর্ষ সামরিক নেতৃত্ব আরও বিস্তৃত ক্ষমতা ও সংবিধানিক সুরক্ষা পাবে।
“চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” পদটি তৈরি করে সেনাপ্রধানকে তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ অবস্থানে বসানো হবে।


২৪৩ অনুচ্ছেদে মূল পরিবর্তনগুলো

১. সেনাপ্রধানকে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।
২. সিজেসিসি বা জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি পদটি বিলুপ্ত হবে।
৩. “ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড” নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি হবে, যা পারমাণবিক ও কৌশলগত সম্পদের তত্ত্বাবধান করবে।
৪. রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ দেবেন।
৫. ফাইভ-স্টার অফিসারদের আজীবন সংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া হবে।

Pakistan's 27th Constitutional Amendment bill approved by standing  committees after some changes: senator - Asia News NetworkAsia News Network

নতুন পদ ও ক্ষমতার বিবরণ

সংশোধনী খসড়া অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর প্রধান (চিফ অব আর্মি স্টাফ) একই সঙ্গে “চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস” হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানের সুপারিশে “ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ড”-এর কমান্ডার নিয়োগ দেবেন, যিনি সেনাবাহিনীর মধ্য থেকেই নির্বাচিত হবেন।

ফাইভ-স্টার পদমর্যাদা — যেমন ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স বা অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট — পাওয়া কর্মকর্তারা আজীবন ইউনিফর্মে থাকবেন এবং তাদের অপসারণ কেবল সংসদের মাধ্যমে সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সম্ভব হবে।
তাদের দায়িত্ব ও সুবিধাদি নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে।


সেনাপ্রধানের নতুন মর্যাদা

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার সিনেটে জানান, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটি কোনো পদ নয়, বরং সম্মানসূচক উপাধি। বিভিন্ন দেশে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর জাতীয় বীরদের এমন সম্মানসূচক উপাধি দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, “এই উপাধিগুলো আজীবনের জন্য। এটি কেবল সম্মানের প্রতীক।”
তিনি স্পষ্ট করেন যে, এই উপাধি প্রত্যাহারের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী নয়, বরং সংসদের হাতে থাকবে।
নভেম্বর ২৭, ২০২৫ তারিখে বর্তমান সিজেসিসি জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার মেয়াদ শেষে এই পদটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হবে।


রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া

সরকারি কর্মকর্তাদের দাবি, এই সংশোধনী সামরিক নেতৃত্ব কাঠামোকে আধুনিকায়ন এবং সাম্প্রতিক বিশেষ পদোন্নতিগুলোকে আইনি কাঠামোয় আনতে একটি “প্রযুক্তিগত আপডেট” মাত্র।
তবে বিরোধী দল ও নাগরিক সংগঠনগুলো বলছে, এটি সামরিক প্রতিষ্ঠানের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করবে, যা বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বকে দুর্বল করতে পারে।

27th Constitutional Amendment: Will the bill give unchecked powers to  Pakistan army chief Asim Munir? – Firstpost

বিতর্কিত সময় ও প্রেক্ষাপট

বিলটি এসেছে এমন এক সময়, যখন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার অভ্যন্তরীণ আলোচনায় ব্যস্ত। বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে ৩ নভেম্বর, যখন পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে পিএমএল-এন দলের প্রতিনিধিরা তাদের সমর্থন চেয়েছেন সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য।

এই বিলের সময়কাল আরও বিতর্ক সৃষ্টি করে, কারণ এটি আসে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল পদোন্নতির পরপরই — যা পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ঘটনা।


ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত

যদি বিলটি অনুমোদিত হয়, তবে ২৭ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি অফিস বিলুপ্ত হবে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান জেনারেল মির্জা হবেন পাকিস্তানের ইতিহাসের শেষ সিজেসিসি।

এই ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী এখন ইসলামাবাদে এক উত্তপ্ত বিতর্কের কেন্দ্রে। এটি কার্যকর হলে পাকিস্তানের সামরিক কমান্ড কাঠামোয় ১৯৮০-এর দশকের পর সবচেয়ে বড় সাংবিধানিক পরিবর্তন ঘটবে।
এবং দেশের দীর্ঘদিনের বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের ভারসাম্যে নতুন অধ্যায় সূচিত হতে পারে।


#পাকিস্তান #সাংবিধানিক_সংশোধনী #সামরিক_নেতৃত্ব #আসিম_মুনির #বিলাওয়াল_ভুট্টো #পিএমএলএন