মালয়েশিয়ার লাংকাওয়ি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে প্রতিবেদন,
মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড যৌথভাবে সমুদ্রপথে নিখোঁজ ডজনখানেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সন্ধানে উদ্ধার অভিযান পুনরায় শুরু করেছে। কয়েক দিন আগে দুই দেশের সীমান্তবর্তী জলসীমায় একটি নৌকা ডুবে কমপক্ষে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
নৌকাডুবিতে মৃত্যু ও উদ্ধার
গত শনিবার থেকে মালয়েশিয়ার জলসীমায় অন্তত ১৩ জন জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে ১২ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে, যাদের মধ্যে দুজন শিশু ছিল বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক সংস্থা। সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক রোমলি মোস্তাফা জানান, থাইল্যান্ডের কর্মকর্তারা আরও ৯টি মরদেহ উদ্ধার করেছেন। তবে থাইল্যান্ডের সাটুন প্রদেশের এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সেখানে ৬ জনের মরদেহই কেবল উদ্ধার করা গেছে।
উদ্ধার অভিযান অব্যাহত

মোস্তাফা বলেন, মালয়েশিয়ার উদ্ধার অভিযান শনিবার পর্যন্ত চলবে। এদিকে, থাই উদ্ধারকর্মীরা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তারা কো তারুতাও দ্বীপের আশপাশের এলাকায় অনুসন্ধান অভিযান আরও সম্প্রসারণ করবেন, কারণ এখানেই অধিকাংশ মরদেহ পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গাদের বিপজ্জনক যাত্রা
বিগত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা ভঙ্গুর কাঠের নৌকায় চেপে প্রতিবেশী দেশগুলো—বিশেষ করে মুসলিম-অধ্যুষিত মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে কিংবা বাংলাদেশের অতিরিক্ত ভিড়ের শরণার্থী শিবির থেকে মুক্তির আশায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করে।
মিয়ানমারের অস্বীকার ও অবস্থা
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তারা দাবি করে, রোহিঙ্গারা দেশটির নাগরিক নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী।

সাম্প্রতিক নৌযাত্রার বিবরণ
দুই সপ্তাহ আগে কয়েক শ রোহিঙ্গা মালয়েশিয়াগামী একটি বড় নৌকায় ওঠেন। পরে গত বৃহস্পতিবার তাদের দুটি ছোট নৌকায় ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি নৌকায় প্রায় ৭০ জন ছিল, যা অল্প সময়ের মধ্যেই ডুবে যায়। অন্য নৌকাটিতে থাকা আনুমানিক ২৩০ জনের ভাগ্য এখনও অজানা।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫১০০ রোহিঙ্গা সমুদ্রপথে দেশত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জন নিখোঁজ বা মৃত বলে জানা গেছে।
আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া ও নীতিগত জটিলতা

রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে পরিচালিত নৌযাত্রা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নীতির কড়া সমালোচনা করে আসছে।
মালয়েশিয়া আশ্রয়প্রার্থীদের “শরণার্থী” হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা রোহিঙ্গাদের আটক ও নৌকা ফেরত পাঠানোর নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে।
অ্যামনেস্টির আহ্বান
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সোমবার আসিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নৌকাগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়ার এই অমানবিক প্রথা বন্ধ করতে হবে। সংস্থাটি বলেছে, “সীমান্ত থেকে নৌকা ঠেলে দেওয়ার নীতিটি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। শরণার্থী ও অভিবাসীবাহী যেকোনো নৌযানকে নিকটতম নিরাপদ দেশে অবতরণের সুযোগ দিতে হবে।”


#রোহিঙ্গা #নৌকাডুবি #মালয়েশিয়া #থাইল্যান্ড #আসিয়ান #অ্যামনেস্টি #মানবাধিকার #সমুদ্রযাত্রা #রাখাইন #শরণার্থীসংকট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















