বিহারের বিধানসভা ভোটের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ধাপ শেষ হওয়ার পর এক্সিট পোলগুলো এনডিএকে বড় সুবিধা দেখাচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থা আলাদা আকারে প্রক্ষেপণ প্রকাশ করেছে—কোথাও এনডিএকে পরিষ্কার নেতৃত্ব দেখানো হচ্ছে, আবার কোথাও ফলাফল অজানা ও ঝুঁকিপূর্ণ। রাজ্যের ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ছিল; গণনা হবে ১৪ নভেম্বর।
এক্সিট পোল ও অনুমান (প্রধান সংস্থার প্রক্ষেপণ)
পিপলস ইনসাইট: এনডিএ ১৩৩–১৪৮, মহাজোটবন্ধন (এমজিবি) ৮৭–১০২, জন সুরাজ পার্টি (জেএসপি) ০–২, অন্যান্য/স্বতন্ত্র ৩–৬।
ম্যাট্রাইজ: এনডিএ ১৪৭–১৬৭, এমজিবি ৭০–৯০, জেএসপি ০–২।
পিপলস পালস ও অন্যান্য সংস্থাও এনডিএকে বড় দলে দেখাচ্ছে।
(প্রতিটি সংস্থার পদ্ধতি ও নমুনা ভিন্ন; তাই সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয়।)
ভোটার অংশগ্রহণ ও গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান
• দ্বিতীয় ধাপে প্রাথমিক হিসেবে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি হয়েছে আনুমানিক ৬৭.১৪%—এটি বিহারের ইতিহাসে রেকর্ড স্তরের অংশগ্রহণ।
• প্রথম ধাপে উপস্থিতি ছিল প্রায় ৬৫.০৮% (৫ ও ৬ নভেম্বরের রেকর্ড অনুযায়ী)।
• সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি: কিশনগঞ্জ ≈ ৭৬.২৬%; কাটিহার ≈ ৭৫.২৩%; পুরনিয়া ≈ ৭৩.৭৯%; সুপাউল ≈ ৭০.৬৯%। নওয়াদা ছিল নিম্নতর (প্রকৃত ফল ভিন্ন হতে পারে)।
• দ্বিতীয় ধাপের ১২ মন্ত্রী-সংক্রান্ত আসনগুলোর ভাগ এখানকার নির্বাচনী ফলকে নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে—যেমন সুপাউল, ধামদাহ, গয়া, বেত্তিয়া ইত্যাদি।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও দাবি-অভিযোগ
• ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আরজেডি-বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, নির্বাচনকালীন একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ‘ভোটপ্রভাবিতকারী’ এবং আদর্শ আচরণবিধি (এমসিসি) লঙ্ঘনের শামিল। এ বিষয়ে নির্বাচনী আধিকারিকদের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
• কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঞ্জহি এনডিএর পক্ষে আশাবাদী; তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে আনুমানিক ৮০টি আসন এনডিএ জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে।
• অন্যদিকে তেজস্বী যাদব (আরজেডি) ভোটে রেকর্ড উপস্থিতিকে জনগণের বদল চাওয়ার চিহ্ন হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ভোটে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন—‘আপনার কষ্ট আমার কষ্ট, আমাদের লক্ষ্য এক’—এই মূলক বক্তব্য রেখেছেন।
• বিজেপির শীর্ষ নেতারা আবার ১৮০–২০০ আসনের মতো বড় জয়ের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন। বিরোধীরা বলছে, জনমনে পরিবর্তন এসেছে এবং ইন্ডিয়া জোটের সমর্থন বাড়ছে।
নিরাপত্তা ও নির্বাচন প্রশাসনের প্রসঙ্গ
• দিল্লিতে একটি গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে; বিহারেও সীমান্ত ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় চৌকিতে সতর্কতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
• নির্বাচন কমিশন ভোটাবহির্ভূত সংবাদমাধ্যম ও এক্সিট পোলের উপর ৪৮ ঘণ্টার নীরবতা পর্ব এবং সরকারি নির্দেশনা জারি করেছে—নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করলে আইনি শাস্তি হতে পারে। এক্সিট পোল প্রকাশ ৬ নভেম্বর সকাল ৭টা থেকে ১১ নভেম্বর বিকেল ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল; তারপর থেকেই পোলগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশিত হতে শুরু করে।
এক্সিট পোলের নির্ভরযোগ্যতা—সতর্কতা জরুরি
পূর্বের নির্বাচনী পরিস্থিতি দেখিয়ে এসেছে যে এক্সিট পোল সবসময় সঠিক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড ও ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে পোলের পূর্বাভাস অনেক ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত ছিল। তাই এক্সিট পোলকে কেবল প্রাথমিক ধারণা হিসেবে দেখা উচিত; চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে গণনা শেষে (১৪ নভেম্বর)।
কিভাবে ও কোথায় দেখবেন ফলাফল
এক্সিট পোলগুলো সাধারণত সংবাদমাধ্যম ও জরিপ সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সন্ধ্যায় প্রকাশ করা হয়; কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলের অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনী গণনা শুরু হওয়া পর্যন্ত (নির্ধারিত তারিখ: ১৪ নভেম্বর)। ঘণ্টা-ঘণ্টা আপডেট ও আসনভিত্তিক ফলাফল গণনা শুরু হলে জানা যাবে।
পটভূমি—২০২০-এর ফলের সংক্ষিপ্তসার
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ ২৪৩ আসনের মধ্যে ১২৫ পেয়েছিল; বিজেপি ৭৪, জেডিইউ ৪৩, এইচএএম ৪। মহাজোটবন্ধন পায় ১১০ আসন—আরজেডি ৭৫, কংগ্রেস ১৯, সিপিআই-এমএল ১২, সিপিআই ও সিপিএম ২টি করে।
বর্তমান ভোটের ঘাত-প্রতিঘাত সেই ইতিহাসকে সামনে রেখে চলছে, এবং নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী (যেমন জন সুরাজ) পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
সংক্ষেপে যা জানা জরুরি
• এক্সিট পোলগুলো এনডিএকে সার্বিকভাবে সুবিধা দেখাচ্ছে, তবে সংস্থাভেদে পার্থক্য রয়েছে।
• ভোটার উপস্থিতি এইবার অত্যন্ত উচ্চ—এটি নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
• অভিযোগ, নিরাপত্তা উদ্বেগ ও রাজনৈতিক বক্তব্য নির্বাচনী আবহকে আরও তীব্র করেছে।
• চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে গণনা শেষে ১৪ নভেম্বর; ততক্ষণ এক্সিট পোলকে প্রাথমিক নির্দেশক হিসেবে দেখা উচিত—চূড়ান্ত নয়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















