জনপ্রিয় স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বাদাম বাটার
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে টোস্টে জ্যাম, স্যান্ডউইচে মেয়োনেজ বা ব্যাগেলে ক্রিম চিজের মতো নানা রকম স্প্রেডের ব্যবহার রয়েছে। তবে আজকের দিনে অনেকেই স্বাস্থ্যকর বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন—যেমন কম চর্বিযুক্ত মেয়োনেজ, অর্গানিক জেলি বা গ্রিক দই। এ পরিবর্তনের ধারায় নতুন এক জনপ্রিয় সংযোজন হলো বাদাম বাটার, যা পিনাট বাটারের মতোই পুষ্টিকর কিন্তু আরও বহুমুখী।
অ্যাকাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস-এর নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিনা কুক জানান, “বাদাম বাটার হলো এক ক্রিমি বিকল্প, যা পিনাট বাটারের সমান পুষ্টিগুণ বহন করে, তবে আরও নানা রকম ব্যবহারের সুযোগ দেয়।” ফিউচার মার্কেট ইনসাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বাদাম বাটারের বাজারমূল্য ১.৩ বিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে।
কীভাবে তৈরি হয় বাদাম বাটার
বাদাম বাটার তৈরি হয় কাঁচা বা ভাজা সম্পূর্ণ বাদাম, পেষে একটি মসৃণ বা সামান্য দানাদার পেস্ট আকারে। বাদাম ভাঙার সময় এর প্রাকৃতিক তেল বেরিয়ে আসে, যা বাটারটিকে দেয় ক্রিমি গঠন। অনেক ব্র্যান্ড এতে অল্প লবণ বা তেল যোগ করে, তবে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সংস্করণ হলো এক উপাদানের বাটার — শুধু বাদাম দিয়ে তৈরি।
![]()
এর স্বাদ সমৃদ্ধ ও বাদামের মতো মিষ্টি গন্ধযুক্ত। এটি পিনাট বাটারের মতো বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়—মসৃণ, দানাদার, কাঁচা, লবণযুক্ত, লবণবিহীন বা ভাজা। যদিও বাদাম চাষের ইতিহাস ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বহু পুরোনো, বাদাম বাটার তুলনামূলকভাবে আধুনিক উদ্ভাবন। বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও চীন বিশ্বজুড়ে বাদাম ও বাদাম বাটার সরবরাহের প্রধান উৎস।
পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা
বাদাম বাটার পুষ্টিতে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা অলিভ অয়েলেও পাওয়া যায়। এই চর্বি হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডায়েটিশিয়ান অ্যাবি গ্যালম্যানের মতে, বাদাম বাটার ভিটামিন ই-এরও উৎকৃষ্ট উৎস। পাশাপাশি এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা পেশি, হাড় ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর উচ্চ ফাইবার উপাদান হজমে সাহায্য করে এবং এটি প্রোটিনেরও ভালো উৎস।
তবে এর স্বাস্থ্যকর উপকারিতা সত্ত্বেও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
পরিমাণের সীমা ও সতর্কতা
প্রতিটি টেবিল চামচ বাদাম বাটারে প্রায় ১০০ ক্যালরি থাকে, যা এটিকে “ক্যালোরি-ঘন” খাদ্য হিসেবে পরিচিত করে। ক্রিস্টিনা কুকের পরামর্শ, “যদিও এর চর্বি স্বাস্থ্যকর, অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা প্রতিবার এক চামচের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুন।”

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বাদাম বাটারের উচ্চ ফ্যাট ও ফাইবারের কারণে হজমজনিত অস্বস্তি হতে পারে। তাছাড়া, বাদামে থাকা অক্সালেট নামক উপাদান অতিরিক্ত সেবনে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত যাদের এমন সমস্যা হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।
বাদাম বাটার পিনাট বাটারের চমৎকার বিকল্প—পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত। তবে এটি সঠিক পরিমাণে খাওয়াই শ্রেয়। এক চামচ বাদাম বাটার প্রতিদিনের পুষ্টি তালিকায় যোগ করলে আপনি উপভোগ করতে পারেন স্বাস্থ্য ও স্বাদের সুন্দর সমন্বয়।
#স্বাস্থ্যকরখাদ্য #বাদামবাটার #পুষ্টিগুণ #পিনাটবাটারবিকল্প #স্বাস্থ্যপরামর্শ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















