৭২.৮ বিলিয়ন রুপির আইপিওর পরেও শেয়ার ১.৭% কমে শুরু, বিশ্লেষকদের মতে অতিমূল্যায়ন প্রধান কারণ
ভারতের সর্ববৃহৎ চশমা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লেন্সকার্ট সল্যুশনস সোমবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে আত্মপ্রকাশ করে, তবে এর প্রথম দিনের লেনদেনে শেয়ারমূল্য প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মূল্যের তুলনায় ১.৭% কমে শুরু হয়। সফটব্যাংক-সমর্থিত এই কোম্পানির ৭২.৮ বিলিয়ন রুপির (প্রায় ৮২১ মিলিয়ন ডলার) আইপিও গত সপ্তাহে ২৮ গুণেরও বেশি ওভারসাবস্ক্রাইব হয়েছিল।
প্রথম দিনের লেনদেন: সূচকের তুলনায় দুর্বল পারফরম্যান্স
লেন্সকার্টের শেয়ার ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে ৪০২ রুপি আইপিও মূল্যের তুলনায় ৩৯৫ রুপিতে লেনদেন শুরু করে, যা ১.৭৪% কম। দিনের মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ৪১৩.৭৫ রুপি পর্যন্ত উঠলেও শেষে ৪০৪.৫৫ রুপিতে বন্ধ হয়। অন্যদিকে, নিফটি ৫০ সূচক দিনশেষে আগের দিনের তুলনায় ০.৩২% বেশি ছিল।
লেন্সকার্টের প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা পেয়ুশ বন্সল বলেন, “২০০৮ সালে যখন আমরা শুরু করি, তখন স্টক এক্সচেঞ্জে ঘণ্টা বাজানোর স্বপ্নও দেখিনি। আমরা শুধু একটি মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছিলাম — মানুষের কাছে দৃষ্টিসেবা সহজলভ্য করে তোলা।”

উচ্চমূল্যায়ন নিয়ে বিতর্ক
বাজারে প্রবেশের আগেই বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কোম্পানির প্রায় ৭০০ বিলিয়ন রুপি মূল্যায়ন নিয়ে সমালোচনা উঠেছিল। স্বাধীন বিশ্লেষক ঈশাঙ্ক গুপ্তা বলেন, “আমি আশা করেছিলাম লেন্সকার্টের তালিকাভুক্তি আইপিও মূল্যের তুলনায় ৫-১০% কমে হবে।”
যদিও কোম্পানির ডেটা অ্যানালিটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহারে “প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা” রয়েছে, তবুও আইপিওর দাম অত্যন্ত উচ্চমানের ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তুলনামূলক মূল্য বিশ্লেষণ
এসবিআই সিকিউরিটিজের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, লেন্সকার্টের পিই (Price to Earnings) অনুপাত ছিল ৫০০ গুণেরও বেশি, যেখানে ফ্রান্সের এসিলর লুক্সোটিকা’র অনুপাত প্রায় ৫০ এবং জার্মানির ফিলম্যানের ২৯।
এসবিআই সিকিউরিটিজ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, “লেন্সকার্টের মূল্যায়ন অতিমাত্রায় প্রসারিত; ফলে তালিকাভুক্তির পর তাৎক্ষণিক লাভ সীমিত হতে পারে।” তবে প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিল।
আয় ও লাভের চিত্র
লেন্সকার্ট ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ২.৯৫ বিলিয়ন রুপি, যেখানে আগের বছরে ১৭৫ মিলিয়ন রুপির ক্ষতি হয়েছিল। একই সময়ে কোম্পানির আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬.৫৩ বিলিয়ন রুপি, যা আগের বছরের ৫৪.২৮ বিলিয়ন রুপি থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।

শেয়ার বিক্রি ও বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ
আইপিওতে কোম্পানিটি নতুন শেয়ার বিক্রি করেছে ২১.৫ বিলিয়ন রুপির, আর প্রতিষ্ঠাতা ও বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডাররা বিক্রি করেছেন ৫১.৩ বিলিয়ন রুপির শেয়ার। এসবিতে ও এইচডিএফসি-র মতো বড় ব্যাংক-নিয়ন্ত্রিত মিউচুয়াল ফান্ডসহ বিদেশি বিনিয়োগকারী ব্ল্যাকরক ও ফিডেলিটি এতে অংশ নিয়েছে।
ভারতের আইপিও বাজারে উন্মাদনা
লেন্সকার্টের তালিকাভুক্তি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারতের আইপিও বাজারে রেকর্ড উচ্ছ্বাস চলছে। শুধু অক্টোবর মাসেই ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল সংগ্রহ হয়েছে, যার মধ্যে দুটি আইপিওর পরিমাণই এক বিলিয়ন ডলারের বেশি— টাটা ক্যাপিটাল এবং এলজি ইলেকট্রনিকস ইন্ডিয়ার আইপিও।
দেশীয় বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো, এই উচ্ছ্বাসের নেতৃত্ব দিচ্ছে। চলতি বছরে আইপিওর মাধ্যমে মোট ১.৩৬ ট্রিলিয়ন রুপি তহবিল সংগ্রহ হয়েছে, যা গত বছরের ১.৬ ট্রিলিয়ন রুপির রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলতে পারে।
নতুন স্টার্টআপের তালিকাভুক্তির ধারা
লেন্সকার্টের তালিকাভুক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের স্টার্টআপগুলো মূল শেয়ারবাজারে প্রবেশের নতুন ঢেউ তুলছে। আগামী দিনে ব্রোকারেজ গ্রো, এডটেক প্রতিষ্ঠান ফিজিক্সওয়ালা এবং পেমেন্ট কোম্পানি পাইন ল্যাবস-ও শেয়ারবাজারে নামছে, প্রতিটি সংস্থাই কয়েক দশক বিলিয়ন রুপি সংগ্রহের লক্ষ্য স্থির করেছে।
#IPO #Lenskart #SoftBank #IndianStockMarket #BusinessNews #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















