বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও সামগ্রিক অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। সংস্থাটির সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, উচ্চমূল্য, অবকাঠামো ঘাটতি ও ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশের জ্বালানি সরবরাহের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
জ্বালানি নির্ভরতার তিন চ্যালেঞ্জ
আইইএর ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক ২০২৫ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ একসঙ্গে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে—বর্ধিত জ্বালানি চাহিদা, দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের ঘাটতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
একসময় প্রাকৃতিক গ্যাসে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এখন মোট চাহিদার প্রায় এক পঞ্চমাংশ আমদানি করছে। সংস্থাটির হিসাবে, ২০৩৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের যৌথ এলএনজি আমদানি প্রায় ৮০ বিলিয়ন ঘনমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে—যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।
ঘূর্ণিঝড় ও অবকাঠামো সংকটে সরবরাহ ঝুঁকি
আইইএ জানায়, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে উপকূলীয় টার্মিনাল বন্ধ হয়ে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ গ্যাস সংকট দেখা দেয়, যার ফলে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
সংস্থাটি সতর্ক করেছে, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ না বাড়ালে ভবিষ্যতেও গ্যাস সরবরাহের নির্ভরযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের আহ্বান
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি। আইইএর মতে, দূষণ কমাতে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রাখতে নবায়নযোগ্য উৎসে বিনিয়োগ বাড়ানো এখন জরুরি।
সংস্থাটি পরামর্শ দিয়েছে, বৈদেশিক ঋণ ও আমদানি নির্ভরতা না বাড়িয়ে সৌর ও বায়ু বিদ্যুৎ খাতে দ্রুত সম্প্রসারণের মাধ্যমে টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা
বর্তমানে বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানি ও জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করছে। আইইএ মনে করে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য—২০৪০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ অগ্রগতি এখনো ধীর গতির।
#এলএনজি #বাংলাদেশ #আইইএ #জ্বালানি #অর্থনীতি #জলবায়ু #নবায়নযোগ্যজ্বালানি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















