কানাডার নায়াগ্রা-অন-দ্য-লেকে অনুষ্ঠিত জি–৭ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার বৈধতা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর সমালোচনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন নিজের জাতীয় নিরাপত্তা কীভাবে রক্ষা করবে—তা ইউরোপ নির্ধারণ করতে পারে না।
জি–৭ বৈঠকে উত্তেজনা: যুক্তরাষ্ট্রের বিবাদকে ঘিরে তীব্র সমালোচনা
ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ মাদকবাহী সন্দেহে নৌকা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৯টি হামলার সমালোচনা করেছে, যেখানে এখন পর্যন্ত ৭৬ জন নিহত হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন।
রুবিও এসব অভিযোগ গুরুত্বহীন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের তিনি “নার্কো-টেরোরিস্ট” হিসেবে দেখেন এবং যুক্তরাষ্ট্র মাদকবিরোধী যুদ্ধে সহযোগিতা করছে বলে ইউরোপের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
রুবিওর অবস্থান: যুক্তরাষ্ট্র নিজের নিরাপত্তা নিজেই ঠিক করবে
রুবিও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক আইন নির্ধারণ করে না, আর তারা কোনোভাবেই আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার পদ্ধতি ঠিক করতে পারে না।

তিনি আরও দাবি করেন — ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মাদকবিরোধী গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি স্থগিত করেছে — এমন খবর “মিথ্যা।” যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অংশীদারিত্ব আগের মতোই শক্তিশালী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
হামলার আইনি ভিত্তি ও সমালোচনা
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, যেসব নৌকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলো মাদক পরিবহন করছিল। তবে তারা কোনো প্রমাণ বা পরিষ্কার আইনি ব্যাখ্যা প্রকাশ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদের ‘আত্মরক্ষা’ অধিকারকে ভিত্তি হিসেবে দেখালেও, জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা: দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র ও জ্বালানি সহায়তার দাবি
জি–৭ বৈঠকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা পশ্চিমা দেশগুলোকে দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা জোরদার করতে এবং শীতের আগে ইউক্রেনের জ্বালানি খাতকে আরও সহায়তা দিতে অনুরোধ জানান।
ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করলেও যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই পক্ষের অবস্থান এখনও দূরত্বে। রুবিও বলেন — রাশিয়া শান্তি আলোচনায় আগ্রহী নয় এবং ডনেস্কের আরও অংশ চাইছে, যা ইউক্রেন কখনোই মেনে নেবে না।

জি–৭ বিবৃতি: রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়াকড়ি বাড়ানোর ঘোষণা
বৈঠকের পর জি–৭ মন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ানোর কথা বলেন। তারা একইসঙ্গে রাশিয়াকে সহায়তা করা দেশ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও ইঙ্গিত দেন।
ইউক্রেন নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে জানায় — পুতিনের যুদ্ধকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলতে হবে।
কানাডাও ড্রোন কর্মসূচি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’-এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
জি–৭ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি প্রধান আলোচ্য হলেও, যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া সংশ্লিষ্ট উত্তেজনাই আলোচনা ঘিরে নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। রুবিও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে কঠোর অবস্থান বজায় রাখলেও, জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ এবং লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশের প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে — এই ইস্যু আগামী দিনগুলোতে আরও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনার জন্ম দেবে।
#যুক্তরাষ্ট্ররাশিয়া #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #জি৭ #মার্কোরুবিও #রাশিয়া #যুক্তরাষ্ট্রনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















