০৭:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্রিপ্টো সঞ্চয় ঠেকাতে কঠোর নিয়ম ভাবছে জাপান

জাপানে করপোরেট ট্রেজারিতে হঠাৎ ক্রিপ্টো ঝোঁক

জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনাকারী জাপান এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (জেপিএক্স) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্রিপ্টোকারেন্সি সঞ্চয়ের প্রবণতা নিয়ে নতুন নীতি বিবেচনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানি মূল ব্যবসা থেকে সরে গিয়ে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সম্পদ ব্যাপক পরিমাণে সংগ্রহ করতে শুরু করেছে—যা নিয়ন্ত্রকদের দৃষ্টি কাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মূল কার্যক্রমে বড় কোনো পরিবর্তন না এনে হঠাৎই ব্যালান্সশিটে ক্রিপ্টোর অনুপাত বাড়িয়ে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারদর বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। নিয়মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের আচরণে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার ঝুঁকি থাকে এবং বাজারে অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, হার্ডওয়্যার বা রিয়েল এস্টেট সেক্টর থেকে আসা কিছু প্রতিষ্ঠান “মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা” দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল সম্পদ কিনেছে। সমালোচকদের মতে, এসব কোম্পানির অনেকেরই ক্রিপ্টো ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত দক্ষতা নেই এবং তারা প্রযুক্তিগত যুক্তির চেয়ে জনপ্রিয়তার স্রোতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আসল ব্যবসার বাস্তব অবস্থার পরিবর্তে ক্রিপ্টোর ওঠানামার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন। ফলে বাজারের স্বচ্ছতা নষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। জেপিএক্স এখন আলোচনা করছে, ক্রিপ্টো-ভারী ব্যালান্সশিট কি আলাদা প্রকাশনা বা অতিরিক্ত নিরীক্ষার আওতায় পড়া উচিত কিনা।

Stricter Rules, Bigger Opportunities? How Japan's Crypto Market Could Transform

আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো রিভার্স মার্জার ও ব্যাকডোর লিস্টিং—যার মাধ্যমে কম আয়ের কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে প্রবেশ করে আচমকাই নিজেদের “ক্রিপ্টো ব্যবসা” হিসেবে উপস্থাপন করছে। প্রস্তাবিত নিয়মে বলা হচ্ছে, তালিকায় টিকে থাকতে হলে কোম্পানির নির্দিষ্ট একটি অংশের আয় মূল ব্যবসা থেকেই আসতে হবে; শুধুমাত্র ডিজিটাল সম্পদের গেইনে নির্ভর করা যাবে না। পাশাপাশি, ডিজিটাল সম্পদ সঞ্চয়ের হার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়ালে ঝুঁকিমূল্যায়ন, কাস্টডি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যালান্সশিটে ঘনত্বের বিষয়ে আলাদা রিপোর্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হতে পারে। যদিও এসব এখনো খসড়া মাত্র, তবুও পরিষ্কার যে বাজারে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে জাপান নতুন কাঠামো ভাবছে।

তবে কোম্পানিগুলোর একটি অংশ যুক্তি তুলেছে যে, বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহার করছে। যারা শিথিল নীতির পক্ষে, তাদের মতে জাপান যদি ক্রিপ্টো-সহায়ক নীতি গ্রহণ করে, তবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে আকর্ষণ করা সহজ হবে। পেনশন ফান্ডসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় আছে: কেউ মনে করছে কঠোর নীতি দরকার, আবার কেউ বলছে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক কোম্পানিগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।

Japan Moves to Allow Investment Funds to Hold Crypto - Bloomberg

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ক্রিপ্টো লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হলেও আগ্রহ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে। কিছু কোম্পানি রেমিট্যান্স বা ফিনটেক সমাধানে ব্লকচেইন ব্যবহার করছে। জাপানের আলোচনা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারেও করপোরেট ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাঠামো গঠনে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

পরিশেষে, ডিজিটাল সম্পদ এখন আর প্রান্তিক বিষয় নয়—এগুলো করপোরেট কৌশল ও আর্থিক বাজারের বাস্তব অংশ হয়ে উঠছে। চ্যালেঞ্জ হলো দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের সুযোগ রেখে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা। জাপান কোন পথে হাঁটে, তা এখন আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের নজরে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্রিপ্টো সঞ্চয় ঠেকাতে কঠোর নিয়ম ভাবছে জাপান

০৫:০০:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

জাপানে করপোরেট ট্রেজারিতে হঠাৎ ক্রিপ্টো ঝোঁক

জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনাকারী জাপান এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (জেপিএক্স) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ক্রিপ্টোকারেন্সি সঞ্চয়ের প্রবণতা নিয়ে নতুন নীতি বিবেচনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানি মূল ব্যবসা থেকে সরে গিয়ে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সম্পদ ব্যাপক পরিমাণে সংগ্রহ করতে শুরু করেছে—যা নিয়ন্ত্রকদের দৃষ্টি কাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মূল কার্যক্রমে বড় কোনো পরিবর্তন না এনে হঠাৎই ব্যালান্সশিটে ক্রিপ্টোর অনুপাত বাড়িয়ে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ারদর বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। নিয়মকর্তারা মনে করছেন, এ ধরনের আচরণে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার ঝুঁকি থাকে এবং বাজারে অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, হার্ডওয়্যার বা রিয়েল এস্টেট সেক্টর থেকে আসা কিছু প্রতিষ্ঠান “মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা ঝুঁকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা” দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল সম্পদ কিনেছে। সমালোচকদের মতে, এসব কোম্পানির অনেকেরই ক্রিপ্টো ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত দক্ষতা নেই এবং তারা প্রযুক্তিগত যুক্তির চেয়ে জনপ্রিয়তার স্রোতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা আসল ব্যবসার বাস্তব অবস্থার পরিবর্তে ক্রিপ্টোর ওঠানামার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন। ফলে বাজারের স্বচ্ছতা নষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনাও রয়েছে। জেপিএক্স এখন আলোচনা করছে, ক্রিপ্টো-ভারী ব্যালান্সশিট কি আলাদা প্রকাশনা বা অতিরিক্ত নিরীক্ষার আওতায় পড়া উচিত কিনা।

Stricter Rules, Bigger Opportunities? How Japan's Crypto Market Could Transform

আরেকটি বিতর্কিত দিক হলো রিভার্স মার্জার ও ব্যাকডোর লিস্টিং—যার মাধ্যমে কম আয়ের কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে প্রবেশ করে আচমকাই নিজেদের “ক্রিপ্টো ব্যবসা” হিসেবে উপস্থাপন করছে। প্রস্তাবিত নিয়মে বলা হচ্ছে, তালিকায় টিকে থাকতে হলে কোম্পানির নির্দিষ্ট একটি অংশের আয় মূল ব্যবসা থেকেই আসতে হবে; শুধুমাত্র ডিজিটাল সম্পদের গেইনে নির্ভর করা যাবে না। পাশাপাশি, ডিজিটাল সম্পদ সঞ্চয়ের হার নির্দিষ্ট সীমা ছাড়ালে ঝুঁকিমূল্যায়ন, কাস্টডি ব্যবস্থাপনা এবং ব্যালান্সশিটে ঘনত্বের বিষয়ে আলাদা রিপোর্ট দেওয়ার বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা হতে পারে। যদিও এসব এখনো খসড়া মাত্র, তবুও পরিষ্কার যে বাজারে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে জাপান নতুন কাঠামো ভাবছে।

তবে কোম্পানিগুলোর একটি অংশ যুক্তি তুলেছে যে, বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহার করছে। যারা শিথিল নীতির পক্ষে, তাদের মতে জাপান যদি ক্রিপ্টো-সহায়ক নীতি গ্রহণ করে, তবে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও উদ্ভাবনকে আকর্ষণ করা সহজ হবে। পেনশন ফান্ডসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি নিয়ে দ্বিধায় আছে: কেউ মনে করছে কঠোর নীতি দরকার, আবার কেউ বলছে অতিরিক্ত বিধিনিষেধ বাজার থেকে প্রতিযোগিতামূলক কোম্পানিগুলোকে দূরে ঠেলে দিতে পারে।

Japan Moves to Allow Investment Funds to Hold Crypto - Bloomberg

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে ক্রিপ্টো লেনদেন নিয়ন্ত্রিত হলেও আগ্রহ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে বাড়ছে। কিছু কোম্পানি রেমিট্যান্স বা ফিনটেক সমাধানে ব্লকচেইন ব্যবহার করছে। জাপানের আলোচনা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারেও করপোরেট ডিজিটাল সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাঠামো গঠনে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

পরিশেষে, ডিজিটাল সম্পদ এখন আর প্রান্তিক বিষয় নয়—এগুলো করপোরেট কৌশল ও আর্থিক বাজারের বাস্তব অংশ হয়ে উঠছে। চ্যালেঞ্জ হলো দায়িত্বশীল উদ্ভাবনের সুযোগ রেখে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা। জাপান কোন পথে হাঁটে, তা এখন আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের নজরে।