চীনের উত্তরাঞ্চলের অন্তর্মঙ্গোলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেয়ার আর্থ খনির এলাকা। এই সম্পদ সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে চীন বাওতো শহরকে একটি আন্তর্জাতিক মানের রেয়ার আর্থ শিল্পকেন্দ্রে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিকল্পনা চীনের বৈশ্বিক রেয়ার আর্থ সরবরাহ শৃঙ্খলে নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী করবে।
উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য
অন্তর্মঙ্গোলিয়া ২০২৫–২০৩৫ সময়কালের জন্য একটি ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে—
• গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের সুরক্ষা ও যৌথ ব্যবহার
• নতুন কৌশলগত খনির অনুসন্ধান
• উচ্চমানের রেয়ার আর্থ উপাদান উৎপাদনকে দ্রুততর করা
• সম্পদের ব্যবহার কাঠামো ও ভৌগোলিক পরিকল্পনা উন্নত করা
• খনিজ সম্পদের ব্যবহার দক্ষতা বৃদ্ধি করা
বিশ্বের প্রধান রেয়ার আর্থ উৎস
অন্তর্মঙ্গোলিয়ার বায়ান ওবো খনি বিশ্বের পরিচিত রেয়ার আর্থ মজুদের ৪০%–এর বেশি ধারণ করে এবং বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। এই কারণে অঞ্চলটি চীনের কৌশলগত শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র।

বাওতোকে নতুন শিল্পকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য
এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিকসের সিইও রাজিভ বিশ্বাস বলেন—
“বাওতোতে সমন্বিত রেয়ার আর্থ শিল্পশৃঙ্খলা গড়ে তোলার কৌশল চীনের বৈশ্বিক নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করবে।”
তিনি আরও যোগ করেন—
“ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উইন্ড টারবাইনে ব্যবহৃত চুম্বক উৎপাদনে বড় বিনিয়োগ চীনের অবস্থান আরও মজবুত করবে।”
নতুন খনিজ আবিষ্কার
সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্মঙ্গোলিয়ায় বিজ্ঞানীরা নতুন ধরনের এক রেয়ার আর্থ কার্বনেট খনিজ আবিষ্কার করেছেন, যা নিয়োডিমিয়ামে সমৃদ্ধ।
নিয়োডিমিয়াম উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন চুম্বক তৈরির জন্য অপরিহার্য, যা ইলেকট্রিক গাড়ির মোটর এবং অফশোর উইন্ড টারবাইনে ব্যবহৃত হয়।
চীনের দখল—খনি থেকে চুম্বক পর্যন্ত
• বৈশ্বিক রেয়ার আর্থ খনি উৎপাদনের ৬৯% চীনের নিয়ন্ত্রণে
• বৈশ্বিক চুম্বক সরবরাহের ৯০% চীন উৎপাদন করে (মরগ্যান স্ট্যানলি)
রেয়ার আর্থ বাজারে চীনের প্রভাব তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ
যুক্তরাষ্ট্রের চিপ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জবাবে চীন রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে।
ট্রিভিয়াম চায়নার বিশ্লেষক কোরি কম্বস বলেন—
“বেসরকারি খাত বিভিন্ন দেশ থেকে বিকল্প উৎস, মজুত এবং বাড়তি ব্যয়ের মাধ্যমে সরবরাহ চেইন সচল রাখতে উপায় খুঁজে পেয়েছে।”
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় আইন অনুযায়ী রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, পাশাপাশি বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
বৈশ্বিক চাহিদা—ইভি ও নবায়নযোগ্য শক্তির বিস্তার
বিশ্বাস অনুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলো দ্রুত ইলেকট্রিক গাড়ি ও নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাওতোতে গড়ে ওঠা রেয়ার আর্থ শিল্পকেন্দ্র প্রক্রিয়াজাত উপাদান সরবরাহে বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন—
“আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী রেয়ার আর্থ সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র্য আসতে পারে, তবে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনই প্রধান নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হিসেবে থাকবে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















