পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের আর্থিক ধসের প্রেক্ষিতে সরকার দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যাংকগুলো একীভূত করে খাতকে স্থিতিশীল করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ সামনে আনা হচ্ছে।
দায়ীদের চিহ্নিতকরণ ও আইনগত ব্যবস্থা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ সম্প্রতি একই মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। এতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—
- • কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আর্থিক সংকটের জন্য দায়ী তা চিহ্নিত করা,
- • মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ,
- • সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার জন্য আইনগত পদক্ষেপের সুপারিশ করা।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ দ্রুত পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংককে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানানোর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাওয়ার পর পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঁচ ব্যাংক একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক
পাঁচটি ব্যাংক—
- • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক
- • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক
- • এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম ব্যাংক)
- • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক
- • ইউনিয়ন ব্যাংক
এগুলোকে একীভূত করে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ গঠন করা হচ্ছে, যা দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে।

নতুন ব্যাংকের মূলধন কাঠামো
- • মোট পরিশোধিত মূলধন: ৩৫,০০০ কোটি টাকা
- • সরকারের বরাদ্দ: ২০,০০০ কোটি টাকা
- • আমানতকারীদের অর্থ থেকে মালিকানা শেয়ারে রূপান্তর: ১৫,০০০ কোটি টাকা
নতুন ব্যাংকের চেয়ারপার্সন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।
সংকটের চিত্র
পাঁচ ব্যাংকে মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা ৭৫ লাখ আমানতকারীর হাতে। অন্যদিকে মোট ঋণ-পোর্টফোলিও ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা—অর্থাৎ ৭৬ শতাংশ—খেলাপি ঋণ।
ব্যাংকভেদে খেলাপি ঋণের হার
- • ইউনিয়ন ব্যাংক: ৯৮%
- • ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ৯৭%

- • গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৯৫%
- • সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৬২.৩০%
- • এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক: ৪৮.২০%
ব্যাংকগুলোর বিস্তৃতি
সম্মিলিতভাবে এই ব্যাংকগুলোর রয়েছে—
- • শাখা: ৭৬০টি
- • উপশাখা: ৬৯৮টি
- • এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট: ৫১১টি
- • টাকা তোলার বুথ (এটিএম): ৯৭৫টি
শরিয়াভিত্তিক পাঁচ ব্যাংকের এই গভীর আর্থিক সংকট দেশের ব্যাংকিং খাতকে বড় চাপে ফেলেছে। এ অবস্থায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও দুর্বল সম্পদ পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















