০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

অভিজাত জীবনের আড়াল উন্মোচন: টিকটকে ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস’

জার্মান-বাল্টিকের ৯০০ বছরের পুরোনো এক অভিজাত বংশের উত্তরসূরি লিওনি ফন উঙ্গার্ন-স্টার্নবার্গ টিকটকে নিজেকে পরিচিত করছেন ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস’ হিসেবে। তবে তিনি চান, মানুষ অভিজাত জীবনের গ্ল্যামারিক কল্পনা নয়, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা জানুক।

পারিবারিক পটভূমি এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি

লিওনি স্বীকার করেন যে তাঁর পরিবার বহু শতাব্দী ধরে ব্যারন এবং ব্যারোনেস উপাধি ধরে রেখেছে। কিন্তু আজকের দিনে উপাধিটি তাঁর কাছে কেবল একটি পরিচয়।

তিনি বলেন, উপাধি থাকলেও তাঁর ভূমি বা প্রাসাদ নেই—এটি শুধু বলে যে তিনি এক পুরোনো বংশ থেকে এসেছেন, কিন্তু তা তাঁর ব্যক্তিত্বকে নির্ধারণ করে না।

টিকটকে তাঁর লক্ষ্য

লিওনি টিকটকে ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস ডায়েরিজ’ সিরিজে তাঁর অভিজাত বংশ, আন্তর্জাতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা, এমনকি এক নামহীন প্রিন্সের সাথে অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেছেন।

তাঁর মূল লক্ষ্য হলো অভিজাত জীবনকে ঘিরে থাকা ধোঁয়াশা দূর করা। তিনি জানান, যেসব জ্ঞান—ভাষা, শিষ্টাচার, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, আত্মবিশ্বাস—তিনি ছোটবেলা থেকে প্রাইভেট স্কুল ও কূটনৈতিক পরিসরে শিখেছেন; সেগুলো তিনি সবার সঙ্গে ভাগ করতে চান।

তিনি মনে করেন, এসব জ্ঞান শুধুমাত্র কিছু মানুষের একচেটিয়া সম্পদ হওয়া উচিত নয়।

Who is Leonie von Ungern-Sternberg? Descendant of 'God of War' who once ruled Mongolia is a TikTok influencer | Hindustan Times

শিক্ষা এবং বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা

তিনি দুবাই ও কায়রোর আন্তর্জাতিক স্কুলে পড়েছেন, পরে জার্মান বোর্ডিং স্কুল লুইসেনলুন্ড থেকে ২০১৬ সালে স্নাতক হন।

জার্মান, ইংরেজি, স্প্যানিশ ও কিছুটা আরবি ভাষায় পারদর্শী লিওনি শিল্প, ক্লাসিক্যাল সংগীত, সাহিত্য ও দর্শন নিয়েও গভীরভাবে জানেন।

তাঁর শিক্ষা ও বংশ পরিচয় অভিজাততার ইঙ্গিত দিলেও তিনি বড় হয়েছেন তুলনামূলকভাবে সাধারণ পরিবেশে এবং ১৮ বছর থেকে নিজে উপার্জন করছেন।

প্রিভিলেজ সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি

লিওনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের চরম উদাহরণ চোখে পড়েছে। ফলে তিনি প্রিভিলেজকে কখনো রোমান্টিসাইজ করেননি।

তিনি মনে করেন, প্রিভিলেজের নাম উচ্চারণ করাই দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম ধাপ।

পরিবারের অতীত—গর্ব ও বেদনাদায়ক ইতিহাস

এক দর্শক তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় রোমান ফন উঙ্গার্ন-স্টার্নবার্গ ছিলেন বর্বরতা ও সহিংসতার জন্য কুখ্যাত ‘ব্লাডি ব্যারন’। লিওনি এ তথ্য গোপন করেননি।

আরেক ভিডিওতে তিনি জানান, তাঁর প্রপিতামহ-প্রমাতামহ মানবিক ছিলেন—তারা এক সময় তাঁদের ইহুদি বন্ধুদের নাৎসি জার্মানি থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। ধরা পড়ে গেলে তারা আত্মহত্যা করেন এবং তাঁর দাদা মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্টে যাত্রা

ইতিহাস ছাড়াও তিনি এখন স্কিন কেয়ার, পারফিউম, ব্যক্তিগত স্টাইল, বইয়ের পরামর্শ এবং বহু ভাষা শেখার কৌশল শেয়ার করেন।

এছাড়া তাঁর আগ্রহ রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা নিয়ে, যা নিয়ে তিনি সাবস্ট্যাকে লেখালেখি করেন।

ব্যবসা বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন এআই পরামর্শক।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি তাঁর বয়ফ্রেন্ড—যিনি মেক্সিকোর এবং অভিজাত নন—সম্পর্কেও খোলামেলা কথা বলেছেন।

এমনকি খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত মানসিক সমস্যার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন, যা দেখে তাঁর পরিবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

সমালোচনা, প্রশংসা ও তাঁর জনপ্রিয়তা

তিনি স্বীকার করেন যে অভিজাত সমাজের প্রথম নিয়ম হলো এসব নিয়ে প্রকাশ্যে না বলা। কিন্তু তিনি খোলামেলা হতে চান এবং মানুষও এটা পছন্দ করে।
যখন কেউ তাঁকে সমালোচনা করে, তিনি হাস্যরস দিয়ে জবাব দেন, যেমন:

“সবাই বলে ‘ইট দ্য রিচ’—আমার পূর্বপুরুষরা তো আগে থেকেই ‘খেয়ে ফেলা’ হয়েছে।”

ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্টে আসার পর তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি বেড়েছে।

বর্তমান পরিকল্পনা ও ভবিষ্যত

এই মাসে তিনি এমবিএ শেষ করছেন। এআই নীতিশাস্ত্রে পিএইচডি করতে চান, কিন্তু পড়াশোনার খরচ তিনি নিজেই বহন করেন বলে সেটা আপাতত কঠিন।

এখন তিনি চাকরির আবেদন করছেন এবং পাশাপাশি লিখছেন একটি বই—যা হবে “সাংস্কৃতিক জ্ঞানচর্চার পুনর্জাগরণের মেনিফেস্টো”।

আর নিয়মিতই টিকটক ভিডিও বানাচ্ছেন।

লিওনি বলেন, তিনি কখনো ভাবেননি যে টিকটকে অভিজাত জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি এমন জনপ্রিয় হবেন।

তিনি এটাকে পরিকল্পনা করে শুরু করেননি—স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু এসেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

অভিজাত জীবনের আড়াল উন্মোচন: টিকটকে ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস’

০৫:০০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

জার্মান-বাল্টিকের ৯০০ বছরের পুরোনো এক অভিজাত বংশের উত্তরসূরি লিওনি ফন উঙ্গার্ন-স্টার্নবার্গ টিকটকে নিজেকে পরিচিত করছেন ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস’ হিসেবে। তবে তিনি চান, মানুষ অভিজাত জীবনের গ্ল্যামারিক কল্পনা নয়, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা জানুক।

পারিবারিক পটভূমি এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি

লিওনি স্বীকার করেন যে তাঁর পরিবার বহু শতাব্দী ধরে ব্যারন এবং ব্যারোনেস উপাধি ধরে রেখেছে। কিন্তু আজকের দিনে উপাধিটি তাঁর কাছে কেবল একটি পরিচয়।

তিনি বলেন, উপাধি থাকলেও তাঁর ভূমি বা প্রাসাদ নেই—এটি শুধু বলে যে তিনি এক পুরোনো বংশ থেকে এসেছেন, কিন্তু তা তাঁর ব্যক্তিত্বকে নির্ধারণ করে না।

টিকটকে তাঁর লক্ষ্য

লিওনি টিকটকে ‘মিলেনিয়াল ব্যারোনেস ডায়েরিজ’ সিরিজে তাঁর অভিজাত বংশ, আন্তর্জাতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা, এমনকি এক নামহীন প্রিন্সের সাথে অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেছেন।

তাঁর মূল লক্ষ্য হলো অভিজাত জীবনকে ঘিরে থাকা ধোঁয়াশা দূর করা। তিনি জানান, যেসব জ্ঞান—ভাষা, শিষ্টাচার, সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া, আত্মবিশ্বাস—তিনি ছোটবেলা থেকে প্রাইভেট স্কুল ও কূটনৈতিক পরিসরে শিখেছেন; সেগুলো তিনি সবার সঙ্গে ভাগ করতে চান।

তিনি মনে করেন, এসব জ্ঞান শুধুমাত্র কিছু মানুষের একচেটিয়া সম্পদ হওয়া উচিত নয়।

Who is Leonie von Ungern-Sternberg? Descendant of 'God of War' who once ruled Mongolia is a TikTok influencer | Hindustan Times

শিক্ষা এবং বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা

তিনি দুবাই ও কায়রোর আন্তর্জাতিক স্কুলে পড়েছেন, পরে জার্মান বোর্ডিং স্কুল লুইসেনলুন্ড থেকে ২০১৬ সালে স্নাতক হন।

জার্মান, ইংরেজি, স্প্যানিশ ও কিছুটা আরবি ভাষায় পারদর্শী লিওনি শিল্প, ক্লাসিক্যাল সংগীত, সাহিত্য ও দর্শন নিয়েও গভীরভাবে জানেন।

তাঁর শিক্ষা ও বংশ পরিচয় অভিজাততার ইঙ্গিত দিলেও তিনি বড় হয়েছেন তুলনামূলকভাবে সাধারণ পরিবেশে এবং ১৮ বছর থেকে নিজে উপার্জন করছেন।

প্রিভিলেজ সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি

লিওনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের চরম উদাহরণ চোখে পড়েছে। ফলে তিনি প্রিভিলেজকে কখনো রোমান্টিসাইজ করেননি।

তিনি মনে করেন, প্রিভিলেজের নাম উচ্চারণ করাই দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম ধাপ।

পরিবারের অতীত—গর্ব ও বেদনাদায়ক ইতিহাস

এক দর্শক তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় রোমান ফন উঙ্গার্ন-স্টার্নবার্গ ছিলেন বর্বরতা ও সহিংসতার জন্য কুখ্যাত ‘ব্লাডি ব্যারন’। লিওনি এ তথ্য গোপন করেননি।

আরেক ভিডিওতে তিনি জানান, তাঁর প্রপিতামহ-প্রমাতামহ মানবিক ছিলেন—তারা এক সময় তাঁদের ইহুদি বন্ধুদের নাৎসি জার্মানি থেকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। ধরা পড়ে গেলে তারা আত্মহত্যা করেন এবং তাঁর দাদা মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্টে যাত্রা

ইতিহাস ছাড়াও তিনি এখন স্কিন কেয়ার, পারফিউম, ব্যক্তিগত স্টাইল, বইয়ের পরামর্শ এবং বহু ভাষা শেখার কৌশল শেয়ার করেন।

এছাড়া তাঁর আগ্রহ রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা নিয়ে, যা নিয়ে তিনি সাবস্ট্যাকে লেখালেখি করেন।

ব্যবসা বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি ছিলেন এআই পরামর্শক।

ব্যক্তিগত জীবন

তিনি তাঁর বয়ফ্রেন্ড—যিনি মেক্সিকোর এবং অভিজাত নন—সম্পর্কেও খোলামেলা কথা বলেছেন।

এমনকি খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত মানসিক সমস্যার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেন, যা দেখে তাঁর পরিবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

সমালোচনা, প্রশংসা ও তাঁর জনপ্রিয়তা

তিনি স্বীকার করেন যে অভিজাত সমাজের প্রথম নিয়ম হলো এসব নিয়ে প্রকাশ্যে না বলা। কিন্তু তিনি খোলামেলা হতে চান এবং মানুষও এটা পছন্দ করে।
যখন কেউ তাঁকে সমালোচনা করে, তিনি হাস্যরস দিয়ে জবাব দেন, যেমন:

“সবাই বলে ‘ইট দ্য রিচ’—আমার পূর্বপুরুষরা তো আগে থেকেই ‘খেয়ে ফেলা’ হয়েছে।”

ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্টে আসার পর তাঁর ফলোয়ার সংখ্যা ৪০ হাজারের বেশি বেড়েছে।

বর্তমান পরিকল্পনা ও ভবিষ্যত

এই মাসে তিনি এমবিএ শেষ করছেন। এআই নীতিশাস্ত্রে পিএইচডি করতে চান, কিন্তু পড়াশোনার খরচ তিনি নিজেই বহন করেন বলে সেটা আপাতত কঠিন।

এখন তিনি চাকরির আবেদন করছেন এবং পাশাপাশি লিখছেন একটি বই—যা হবে “সাংস্কৃতিক জ্ঞানচর্চার পুনর্জাগরণের মেনিফেস্টো”।

আর নিয়মিতই টিকটক ভিডিও বানাচ্ছেন।

লিওনি বলেন, তিনি কখনো ভাবেননি যে টিকটকে অভিজাত জীবনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি এমন জনপ্রিয় হবেন।

তিনি এটাকে পরিকল্পনা করে শুরু করেননি—স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু এসেছে।