০৮:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪ রান্নাঘর বাজার: পেঁয়াজের দাম ১১৫, ইলিশ এখনও নাগালের বাইরে ভারত চীন সীমান্তের কাছে নতুন সামরিক ঘাঁটি উদ্বোধন: কৌশলগত সক্ষমতা আরও জোরদার আগে গণভোট, ছাড়া সংসদ নির্বাচনে যাবে না জামায়াত উমর নাবির শেষ দিনের রহস্য: তদন্তে উঠে আসছে নতুন নতুন সূত্র মালয়েশিয়ার পাম অয়েল এত বেশি কেন ব্যবহার হয়? ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার পর চরম সতর্কতা—নিরাপত্তা ঘিরে আতঙ্কে নাগরিকরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে না: যুক্তরাজ্যকে জানালেন অধ্যাপক ইউনূস আফগানিস্তানে ভয়াবহ মানবিক সংকট—ক্ষুধা, ঋণ ও সেবাবঞ্চনায় বিপর্যস্ত ৯০% পরিবার পূর্ব আফ্রিকার মানুষের ক্ষমতায়নে  অবদানের জন্য  সুলতানের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা

ধন–বৈষম্য নিয়ে এলোন মাস্ককে ‘করুণ কাপুরুষ’ বললেন বিলি আইলিশ

বিলিয়নিয়ার সংস্কৃতি ও তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ

গ্র্যামি–জয়ী পপ তারকা বিলি আইলিশ এক সাক্ষাৎকারে প্রযুক্তি ধনকুবের এলোন মাস্কের সম্পদ ও আচরণকে প্রকাশ্যে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, কোটি কোটি ডলার ব্যক্তিগত ইমেজ আর অনলাইন প্রভাব বাড়ানোর পেছনে খরচ করার বদলে বাস্তব জীবনের সংকটে—যেমন দারিদ্র্য, আবাসন সঙ্কট বা জলবায়ু অভিযোজন—বেশি দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল এমন ব্যক্তিদের। আইলিশ উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি ক্ষুদ্র বিলিয়নিয়ার গোষ্ঠী মহামারির মধ্যেও যেভাবে সম্পদ বাড়িয়েছে, তা সাধারণ মানুষের স্থবির আয়ের সঙ্গে ভয়াবহ বৈপরীত্য তৈরি করেছে। তাঁর মতে, যখন লাখো তরুণ ভাড়া, টিউশন ফি ও স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপে দিশেহারা, তখন মহাকাশ দৌড় আর সোশ্যাল মিডিয়ার নাটক দেখতে দেখতে তাদের ক্ষোভ জমাট বেঁধে যাচ্ছে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু নিয়ে আগে থেকেই সোচ্চার আইলিশ এবার সরাসরি সম্পদ বৈষম্যকে নৈতিক প্রশ্ন হিসেবে তুলে ধরেছেন। একজন মানুষের হাতে এত বেশি অর্থ ও ক্ষমতা থাকা, যে চাইলে ছোট একটি দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সমান টাকা একাই ব্যয় করতে পারেন—তাঁর কাছে এটি “অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক”। তিনি বলেন, টেসলা বা স্পেসএক্স নতুন প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও, এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তিগত ক্ষমতাকে প্রশ্নহীন ভাবে মেনে নেওয়া উচিত নয়। মাস্কের সমর্থকেরা অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন—তিনি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ও বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিতে দারুণ অগ্রগতি এনেছেন; সমালোচকেরা বলছেন, সেই অর্জন তাকে অনলাইনে বিরোধীদের ট্রল করা বা অমানবিক ধন–সংকেন্দ্রিকতা থেকে দায়মুক্তি দেয় না।

পপ সংস্কৃতি ও ক্ষমতার নতুন সংঘাতরেখা

এই বিতর্ক আসলে বড় এক প্রেক্ষাপটের অংশ, যেখানে তরুণ প্রজন্ম সফলতা ও দায়িত্বের নতুন সংজ্ঞা খুঁজছে। একসময় সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠাতাদের “নতুন নায়ক” হিসেবে দেখা হতো—যারা প্রযুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কেউ কেউ যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, রাজনৈতিক বিভাজন বা ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন, তখন সেই নায়কত্বও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আইলিশের মতো প্রভাবশালী শিল্পীরা যখন খোলাখুলিভাবে এসব আচরণকে চ্যালেঞ্জ করছেন, তখন আলোচনা ঢুকে যাচ্ছে গানের ভক্তকূল থেকে শুরু করে টিকটক ও এক্স–এর ফ্যান কমিউনিটিতেও। ফলে “তারকাদের রাজনীতি না করার” পুরনো দাবির সঙ্গে নতুন করে ধাক্কা লাগছে “দায়িত্বশীল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের” যুক্তির।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মূল সমাধান আসবে সম্পদ কর, উত্তরাধিকার আইন ও কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের মতো নীতিগত পরিবর্তন থেকে, কোনো একক শিল্পীর বক্তব্য থেকে নয়। তবু তারা স্বীকার করছেন, উচ্চ প্রোফাইল অভিযোগ–প্রতিবাদ জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে, যা শেষ পর্যন্ত নীতি প্রণেতাদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। মাস্কের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রভাব হয়তো খুব কম হবে, কিন্তু তরুণ দর্শকের এক অংশের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি আরও বিভাজিত হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, আইলিশ নিজেও ঝুঁকি নিচ্ছেন—ক্যারিয়ারের সঙ্গে স্পষ্ট রাজনৈতিক ও নৈতিক ভাষ্য জুড়ে দেওয়ায় কেউ কেউ বিরক্তও হতে পারে। তবু বিনোদন ও রাজনীতির সীমানা যখন প্রতিদিন একটু একটু করে ঝাপসা হচ্ছে, তখন এমন শিল্পী–বিলিয়নিয়ার সংঘাত হয়তো আগামী দিনের পপ সংস্কৃতির স্বাভাবিক দৃশ্যেই পরিণত হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পটুয়াখালীর গলাচিপায় খাস জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ২৪

ধন–বৈষম্য নিয়ে এলোন মাস্ককে ‘করুণ কাপুরুষ’ বললেন বিলি আইলিশ

০৫:৫২:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

বিলিয়নিয়ার সংস্কৃতি ও তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ

গ্র্যামি–জয়ী পপ তারকা বিলি আইলিশ এক সাক্ষাৎকারে প্রযুক্তি ধনকুবের এলোন মাস্কের সম্পদ ও আচরণকে প্রকাশ্যে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, কোটি কোটি ডলার ব্যক্তিগত ইমেজ আর অনলাইন প্রভাব বাড়ানোর পেছনে খরচ করার বদলে বাস্তব জীবনের সংকটে—যেমন দারিদ্র্য, আবাসন সঙ্কট বা জলবায়ু অভিযোজন—বেশি দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল এমন ব্যক্তিদের। আইলিশ উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটি ক্ষুদ্র বিলিয়নিয়ার গোষ্ঠী মহামারির মধ্যেও যেভাবে সম্পদ বাড়িয়েছে, তা সাধারণ মানুষের স্থবির আয়ের সঙ্গে ভয়াবহ বৈপরীত্য তৈরি করেছে। তাঁর মতে, যখন লাখো তরুণ ভাড়া, টিউশন ফি ও স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপে দিশেহারা, তখন মহাকাশ দৌড় আর সোশ্যাল মিডিয়ার নাটক দেখতে দেখতে তাদের ক্ষোভ জমাট বেঁধে যাচ্ছে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু নিয়ে আগে থেকেই সোচ্চার আইলিশ এবার সরাসরি সম্পদ বৈষম্যকে নৈতিক প্রশ্ন হিসেবে তুলে ধরেছেন। একজন মানুষের হাতে এত বেশি অর্থ ও ক্ষমতা থাকা, যে চাইলে ছোট একটি দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সমান টাকা একাই ব্যয় করতে পারেন—তাঁর কাছে এটি “অস্বাভাবিক ও বিপজ্জনক”। তিনি বলেন, টেসলা বা স্পেসএক্স নতুন প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও, এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির অপ্রতিরোধ্য ব্যক্তিগত ক্ষমতাকে প্রশ্নহীন ভাবে মেনে নেওয়া উচিত নয়। মাস্কের সমর্থকেরা অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন—তিনি বিদ্যুৎচালিত গাড়ি ও বেসরকারি মহাকাশ প্রযুক্তিতে দারুণ অগ্রগতি এনেছেন; সমালোচকেরা বলছেন, সেই অর্জন তাকে অনলাইনে বিরোধীদের ট্রল করা বা অমানবিক ধন–সংকেন্দ্রিকতা থেকে দায়মুক্তি দেয় না।

পপ সংস্কৃতি ও ক্ষমতার নতুন সংঘাতরেখা

এই বিতর্ক আসলে বড় এক প্রেক্ষাপটের অংশ, যেখানে তরুণ প্রজন্ম সফলতা ও দায়িত্বের নতুন সংজ্ঞা খুঁজছে। একসময় সিলিকন ভ্যালির প্রতিষ্ঠাতাদের “নতুন নায়ক” হিসেবে দেখা হতো—যারা প্রযুক্তি দিয়ে সমস্যার সমাধান করবেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের কেউ কেউ যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, রাজনৈতিক বিভাজন বা ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন, তখন সেই নায়কত্বও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আইলিশের মতো প্রভাবশালী শিল্পীরা যখন খোলাখুলিভাবে এসব আচরণকে চ্যালেঞ্জ করছেন, তখন আলোচনা ঢুকে যাচ্ছে গানের ভক্তকূল থেকে শুরু করে টিকটক ও এক্স–এর ফ্যান কমিউনিটিতেও। ফলে “তারকাদের রাজনীতি না করার” পুরনো দাবির সঙ্গে নতুন করে ধাক্কা লাগছে “দায়িত্বশীল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের” যুক্তির।

অর্থনীতিবিদেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মূল সমাধান আসবে সম্পদ কর, উত্তরাধিকার আইন ও কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণের মতো নীতিগত পরিবর্তন থেকে, কোনো একক শিল্পীর বক্তব্য থেকে নয়। তবু তারা স্বীকার করছেন, উচ্চ প্রোফাইল অভিযোগ–প্রতিবাদ জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে, যা শেষ পর্যন্ত নীতি প্রণেতাদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে। মাস্কের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রভাব হয়তো খুব কম হবে, কিন্তু তরুণ দর্শকের এক অংশের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি আরও বিভাজিত হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, আইলিশ নিজেও ঝুঁকি নিচ্ছেন—ক্যারিয়ারের সঙ্গে স্পষ্ট রাজনৈতিক ও নৈতিক ভাষ্য জুড়ে দেওয়ায় কেউ কেউ বিরক্তও হতে পারে। তবু বিনোদন ও রাজনীতির সীমানা যখন প্রতিদিন একটু একটু করে ঝাপসা হচ্ছে, তখন এমন শিল্পী–বিলিয়নিয়ার সংঘাত হয়তো আগামী দিনের পপ সংস্কৃতির স্বাভাবিক দৃশ্যেই পরিণত হবে।