বাংলাদেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ২০২৫। এ বছরের প্রতিপাদ্য “Diabetes and Well-being”, আর মূল জোর কর্মস্থলে ডায়াবেটিস ঝুঁকি ও প্রতিরোধ। দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, অনিয়মিত খাবার ও মানসিক চাপে ডায়াবেটিস এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে—শহর থেকে গ্রাম, সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে।
অনেকে রোগের লক্ষণ অনুভব করলেও পরীক্ষা করাতে দেরি করেন। ফলে জটিলতা দেখা দিলে তবেই রোগ শনাক্ত হয়, যা চিকিৎসাকে আরও কঠিন করে।
র্যালি, দৌড় আর দিনের শুরুতেই সচেতনতার ডাক
ঢাকায় সকালে আয়োজিত “Diabetes Day Run 2025” দৌড়ে অংশ নেন চিকিৎসক, শিক্ষার্থী ও শতাধিক মানুষ। তারা বার্তা দেন—ডায়াবেটিস প্রতিরোধে হাঁটা–দৌড়কে প্রতিদিনের অভ্যাসে আনতে হবে, বিশেষ করে অফিস–কেন্দ্রিক জীবনে যেখানে নড়াচড়া কম।
রাজধানীর হাসপাতালে চলছে স্ক্রিনিং ক্যাম্প, পুষ্টি–পরামর্শ ও ছোট সেমিনার। কেউ প্রথমবার পরীক্ষা করতে এসেছেন, কেউ এসেছেন পুরোনো রিপোর্ট নিয়ে। চিকিৎসকেরা ব্যাখ্যা করছেন—খাবারের পরিমাণ, বিশ্রাম, ওষুধ এবং হাঁটার নিয়ম ঠিক না হলে ডায়াবেটিস দ্রুত জটিল হয়ে ওঠে।
আশুলিয়া উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন হাসপাতাল র্যালি, সেমিনার এবং বিনা খরচে পরীক্ষার আয়োজন করেছে। কর্মজীবী নারী–পুরুষ, বাজারের কর্মচারী—অনেকেরই এই প্রথম ব্লাড সুগার পরীক্ষা।

জেলা শহরে মাঠ পর্যায়ের কাজ
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরেও র্যালি, আলোচনা সভা এবং অস্থায়ী পরীক্ষা কেন্দ্র বসেছে। ব্যস্ত বাজার, হাসপাতাল চত্বর ও পরিবহন স্ট্যান্ডে এসব বুথে দ্রুত রক্তে শর্করা পরীক্ষা চলছে।
স্বেচ্ছাসেবকেরা জানাচ্ছেন—কম আয়ের কর্মজীবী মানুষের অনেকেই কখনও ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাননি। তাই এলাকাভিত্তিক সহজ পরীক্ষাই তাদের কাছে সবচেয়ে কার্যকর।
টেলিভিশন ও রেডিওর আলোচনায় উঠে এসেছে—ইনসুলিনের দাম, নিয়মিত চেকআপের খরচ এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা সামলানোর বাস্তবতা।
এক দিনের কর্মসূচি নয়, কর্মস্থলের বাস্তব পরিবর্তন জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস এখন দেশের দীর্ঘমেয়াদি জনস্বাস্থ্য–ঝুঁকি। কারণগুলো স্পষ্ট—
কম শারীরিক পরিশ্রম, চিনি–সমৃদ্ধ খাবার, তামাক ব্যবহার এবং কর্মস্থলের মানসিক চাপ।
তাদের পরামর্শ—
- অফিসে ছোট হাঁটা–বিরতি নিশ্চিত করা
- ক্যান্টিনে তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর খাবার রাখা
- বছরে অন্তত একবার রুটিন সুগার পরীক্ষা
- খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ নিয়ে পরামর্শসেবা
এ ছাড়া, সুলভ দামে ওষুধের প্রাপ্যতা, শহরে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ ও খাদ্য সচেতনতা–কেন্দ্রিক ক্যাম্পেইনের ওপরও জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজকের র্যালি আর ক্যাম্প মানুষকে পরীক্ষা করাতে উদ্বুদ্ধ করেছে ঠিকই, কিন্তু স্থায়ী পরিবর্তনের জন্য কর্মস্থল ও জীবনযাত্রায় নতুন নিয়ম গড়ে ওঠা জরুরি—এটাই চিকিৎসকদের মূল বার্তা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















