০২:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত এক পথচারী গাজীপুরে আবার গ্রামীণ ব্যাংকে হামলা — এক সপ্তাহে ৫ জেলার ৬টি শাখায় বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা ফ্লোরিডায় শিক্ষায় র‍্যাডিক্যাল পরীক্ষা কাশিয়ানীতে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা মধ্যরাতে নোয়াখালীতে টায়ার জ্বালিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহে কভার্ড ভ্যানে আগুন ভারতের উন্নয়নের দুই উদীয়মান রাজ্য দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সন্ত্রাসী অস্থিরতা দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতি: বাস্তববাদে নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের উত্থান

দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতি: বাস্তববাদে নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের উত্থান

দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ক্ষমতায় এসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং কূটনীতিতে নতুন বাস্তবতার চর্চা শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন—সব দিকের চাপ সামলে তিনি দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ভূমিকা পালন করছেন।


সারাক্ষণ রিপোর্ট

শিন উ-সক মূলত চমকপ্রদ কে-পপ মিউজিক ভিডিও নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বানানো সর্বশেষ ভিডিওতে দেখা যায় কে-পপ তারকা জি-ড্রাগন একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান রেস্টুরেন্টে ঢুকে ফুটবলার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও একজন জনপ্রিয় ডিজেকে খুঁজে পান। এরপর আসে চমক—দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং নিজেই বিমানকে রানওয়েতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এপেক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৈরি এই চকচকে ভিডিওটি শেষ হয় বার্তাটি দিয়ে: “বিশ্ব আসছে কোরিয়ায়।”

ভিডিওর মূল উদ্দেশ্য—এক ঝড়ঝাপটা সময় পার করে দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক পুনরুত্থান তুলে ধরা। জুনে আগাম নির্বাচনে লি জে মিয়ং জয়ী হন; এর আগে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন ঘোষণার অভিযোগে অভিশংসিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই লি জে মিয়ংকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ—আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য টানাপড়েন থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়ার রাশিয়া–চীন সম্পর্ক জোরদার হওয়ার উদ্বেগ পর্যন্ত। তবে তিনি কার্যকরভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে পেরেছেন।

প্রচারিত বাস্তববাদ ও বাস্তবে প্রয়োগ

বাম ঘরানার ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) নেতা হিসেবে লি জে মিয়ং উত্তর কোরিয়ার প্রতি উন্মুক্ততা এবং জাপানের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতায় ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি বাস্তববাদী নীতি প্রতিশ্রুতি দেন—এবং তিনি তা বাস্তবেও প্রয়োগ করছেন। তিনি আমেরিকা, জাপান এবং এমনকি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে তাঁর দলের নীতির মতো উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করলেও তেমন প্রতিক্রিয়া আসেনি।

ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক সংকট সমাধান

লি জে মিয়ংয়ের সবচেয়ে জরুরি কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক সংকট সমাধান করা। ২০১২ সালে দুই দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলেও এই বছর ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেন। জুলাইয়ে ট্রাম্প এই হার ১৫%-এ নামাতে রাজি হন, তবে গাড়ির ক্ষেত্রে নয়—ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।

এপেক সম্মেলনের ফাঁকে লি–ট্রাম্প বৈঠকে অবশেষে সমঝোতা হয়—দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং এর বিনিময়ে গাড়িসহ বেশিরভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫%-এ নামানো হবে। দক্ষিণ কোরিয়া নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনায় সম্মতি দেন—যে প্রযুক্তিটিতে আমেরিকা আগে অনাগ্রহী ছিল।

পারমাণবিক জ্বালানি চুক্তি পুনঃআলোচনা

দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি পুনঃআলোচনার বিষয়েও সম্মতি হয়। চুক্তি পরিবর্তিত হলে দক্ষিণ কোরিয়া নিজে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করতে পারবে—ফলে দেশটি বিদেশি জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং পারমাণবিক বর্জ্য হ্রাস করবে। তবে এর একটি নীরব বাড়তি সুবিধা রয়েছে—কোনোদিন প্রয়োজন হলে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথও কিছুটা সহজ হবে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র এ কারণেই চুক্তি পরিবর্তনে অনাগ্রহী ছিল। ট্রাম্প বিষয়টি বোঝেননি—অথবা গুরুত্ব দেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার এই আত্মরক্ষামূলক ঝোঁক আমেরিকার জোটব্যবস্থার প্রতি আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

জাপানের সঙ্গেও দক্ষিণ কোরিয়ার একই ধরনের উদ্বেগ আছে। তবে ডিপি যখন ক্ষমতায় ছিল, বিশেষত মুন জে-ইনের শাসনামলে, ঔপনিবেশিক অতীতের ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল। তখন বিরোধী নেতা হিসেবে লি জাপানের প্রতি ইউন সুক-ইওলের নরম অবস্থানের প্রতিবাদে অনশনও করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বাস্তববাদী। এপেক সম্মেলনে তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি সানায়ে’র সঙ্গে সদ্ভাবপূর্ণ প্রথম বৈঠক করেন। এখন দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তারা বলছেন—জাপানই তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, কারণ দুই দেশই মিলিত হুমকির মুখে রয়েছে।

চীনের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক

চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার—একই সঙ্গে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে সিউলের তেমন সুযোগ নেই। সম্প্রতি চীন আমেরিকার জাহাজ নির্মাণশিল্পে সহায়তাকারী দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। লি জে মিয়ং এই উত্তেজনা কমাতে চান। এপেকে শি জিনপিংয়ের উপস্থিতি ছিল ১০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মুখোমুখি বৈঠক। বৈঠকে দুজনই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেন, এবং এরপর শি–ট্রাম্প বাণিজ্য সমঝোতার পর চীন সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু করতেও চীন গুরুত্বপূর্ণ। লি জে মিয়ং ও ট্রাম্প দুজনেরই কিম জং উনকে দেওয়া বার্তা ফলহীন হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় কিম জং উন আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন এবং বলেছেন—উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি ছাড়া আলোচনায় তিনি রাজি নন।

সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা

এপেক হয়তো লি জে মিয়ংয়ের জন্য সফল ছিল, তবে এটি তাঁর দীর্ঘমেয়াদের পরীক্ষার একটি সূচনা মাত্র। ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাখ্যাগত বিভেদ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া–জাপান সম্পর্কও অতীতের বিতর্কে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একজন দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তা তাই প্রশ্ন তুলেছেন—“বৃষ্টি এলে সম্পর্ক কতটা টিকবে? কারণ নিশ্চয়ই আমাদের সামনে বৃষ্টির দিন আসবে।”


#দক্ষিণ_কোরিয়া ·# কূটনীতি · #এপেক · #লি_জে_মিয়ং ·# ট্রাম্প ·# জাপান ·# চীন · #উত্তর_কোরিয়া


জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত এক পথচারী

দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনীতি: বাস্তববাদে নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের উত্থান

১২:১১:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর ক্ষমতায় এসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং কূটনীতিতে নতুন বাস্তবতার চর্চা শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন—সব দিকের চাপ সামলে তিনি দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষায় তৎপর ভূমিকা পালন করছেন।


সারাক্ষণ রিপোর্ট

শিন উ-সক মূলত চমকপ্রদ কে-পপ মিউজিক ভিডিও নির্মাতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বানানো সর্বশেষ ভিডিওতে দেখা যায় কে-পপ তারকা জি-ড্রাগন একটি ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান রেস্টুরেন্টে ঢুকে ফুটবলার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও একজন জনপ্রিয় ডিজেকে খুঁজে পান। এরপর আসে চমক—দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং নিজেই বিমানকে রানওয়েতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এপেক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তৈরি এই চকচকে ভিডিওটি শেষ হয় বার্তাটি দিয়ে: “বিশ্ব আসছে কোরিয়ায়।”

ভিডিওর মূল উদ্দেশ্য—এক ঝড়ঝাপটা সময় পার করে দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক পুনরুত্থান তুলে ধরা। জুনে আগাম নির্বাচনে লি জে মিয়ং জয়ী হন; এর আগে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক আইন ঘোষণার অভিযোগে অভিশংসিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই লি জে মিয়ংকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ—আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য টানাপড়েন থেকে শুরু করে উত্তর কোরিয়ার রাশিয়া–চীন সম্পর্ক জোরদার হওয়ার উদ্বেগ পর্যন্ত। তবে তিনি কার্যকরভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে আসতে পেরেছেন।

প্রচারিত বাস্তববাদ ও বাস্তবে প্রয়োগ

বাম ঘরানার ডেমোক্রেটিক পার্টির (ডিপি) নেতা হিসেবে লি জে মিয়ং উত্তর কোরিয়ার প্রতি উন্মুক্ততা এবং জাপানের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির ধারাবাহিকতায় ছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তিনি বাস্তববাদী নীতি প্রতিশ্রুতি দেন—এবং তিনি তা বাস্তবেও প্রয়োগ করছেন। তিনি আমেরিকা, জাপান এবং এমনকি চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছেন। তবে তাঁর দলের নীতির মতো উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপের চেষ্টা করলেও তেমন প্রতিক্রিয়া আসেনি।

ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক সংকট সমাধান

লি জে মিয়ংয়ের সবচেয়ে জরুরি কাজ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শুল্ক সংকট সমাধান করা। ২০১২ সালে দুই দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করলেও এই বছর ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেন। জুলাইয়ে ট্রাম্প এই হার ১৫%-এ নামাতে রাজি হন, তবে গাড়ির ক্ষেত্রে নয়—ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি নির্মাতারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।

এপেক সম্মেলনের ফাঁকে লি–ট্রাম্প বৈঠকে অবশেষে সমঝোতা হয়—দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং এর বিনিময়ে গাড়িসহ বেশিরভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক ১৫%-এ নামানো হবে। দক্ষিণ কোরিয়া নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, এবং ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন কেনার পরিকল্পনায় সম্মতি দেন—যে প্রযুক্তিটিতে আমেরিকা আগে অনাগ্রহী ছিল।

পারমাণবিক জ্বালানি চুক্তি পুনঃআলোচনা

দুই দেশের মধ্যে পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি পুনঃআলোচনার বিষয়েও সম্মতি হয়। চুক্তি পরিবর্তিত হলে দক্ষিণ কোরিয়া নিজে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করতে পারবে—ফলে দেশটি বিদেশি জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে এবং পারমাণবিক বর্জ্য হ্রাস করবে। তবে এর একটি নীরব বাড়তি সুবিধা রয়েছে—কোনোদিন প্রয়োজন হলে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথও কিছুটা সহজ হবে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র এ কারণেই চুক্তি পরিবর্তনে অনাগ্রহী ছিল। ট্রাম্প বিষয়টি বোঝেননি—অথবা গুরুত্ব দেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার এই আত্মরক্ষামূলক ঝোঁক আমেরিকার জোটব্যবস্থার প্রতি আস্থার ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।

জাপানের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

জাপানের সঙ্গেও দক্ষিণ কোরিয়ার একই ধরনের উদ্বেগ আছে। তবে ডিপি যখন ক্ষমতায় ছিল, বিশেষত মুন জে-ইনের শাসনামলে, ঔপনিবেশিক অতীতের ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল। তখন বিরোধী নেতা হিসেবে লি জাপানের প্রতি ইউন সুক-ইওলের নরম অবস্থানের প্রতিবাদে অনশনও করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বাস্তববাদী। এপেক সম্মেলনে তিনি জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি সানায়ে’র সঙ্গে সদ্ভাবপূর্ণ প্রথম বৈঠক করেন। এখন দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তারা বলছেন—জাপানই তাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী, কারণ দুই দেশই মিলিত হুমকির মুখে রয়েছে।

চীনের সঙ্গে জটিল সম্পর্ক

চীন দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার—একই সঙ্গে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে সিউলের তেমন সুযোগ নেই। সম্প্রতি চীন আমেরিকার জাহাজ নির্মাণশিল্পে সহায়তাকারী দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। লি জে মিয়ং এই উত্তেজনা কমাতে চান। এপেকে শি জিনপিংয়ের উপস্থিতি ছিল ১০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য প্রথম গুরুত্বপূর্ণ মুখোমুখি বৈঠক। বৈঠকে দুজনই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেন, এবং এরপর শি–ট্রাম্প বাণিজ্য সমঝোতার পর চীন সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপ পুনরায় শুরু করতেও চীন গুরুত্বপূর্ণ। লি জে মিয়ং ও ট্রাম্প দুজনেরই কিম জং উনকে দেওয়া বার্তা ফলহীন হয়েছে। রাশিয়া ও চীনের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় কিম জং উন আরও শক্ত অবস্থান নিয়েছেন এবং বলেছেন—উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি ছাড়া আলোচনায় তিনি রাজি নন।

সামনে আরও কঠিন পরীক্ষা

এপেক হয়তো লি জে মিয়ংয়ের জন্য সফল ছিল, তবে এটি তাঁর দীর্ঘমেয়াদের পরীক্ষার একটি সূচনা মাত্র। ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাখ্যাগত বিভেদ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া–জাপান সম্পর্কও অতীতের বিতর্কে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। একজন দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তা তাই প্রশ্ন তুলেছেন—“বৃষ্টি এলে সম্পর্ক কতটা টিকবে? কারণ নিশ্চয়ই আমাদের সামনে বৃষ্টির দিন আসবে।”


#দক্ষিণ_কোরিয়া ·# কূটনীতি · #এপেক · #লি_জে_মিয়ং ·# ট্রাম্প ·# জাপান ·# চীন · #উত্তর_কোরিয়া