ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় পরিবর্তন চলছে। এখানে অভিভাবকরা সরকারের দেওয়া ভাউচারের অর্থ ব্যবহার করে নিজেদের মতো করে সন্তানের শিক্ষাকে সাজানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এর ফলে প্রচলিত স্কুলিংয়ের সঙ্গে হোমস্কুলিং, চার্টার স্কুল এবং ছোট আকারের বিশেষায়িত মাইক্রোস্কুল মিলেমিশে তৈরি করছে এক নতুন ধরনের শিক্ষা-বাজার।
ট্যাম্পার হোমস্কুলারদের হোমকামিং
গত মাসে ট্যাম্পায় একটি হোমকামিং অনুষ্ঠানে কয়েকশ কিশোর-কিশোরী অংশ নেয়। মেয়েরা গ্লিটার করা ড্রেস পরে এসেছে, ছেলেরা স্যুট পরে এসেছে, আর গান বাজনায় পুরো সন্ধ্যা জমে ওঠে। রাত শেষে ‘কিং’ ও ‘কুইন’ নির্বাচনও হয়। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—এই শিশু-কিশোরীদের কেউই কোনো প্রচলিত স্কুলে পড়ে না। এটি আয়োজন করে শহরের বহু সংস্থার একটি, যারা হোমস্কুল পরিবারগুলোর জন্য নানা ধরনের ক্লাস ও কার্যক্রম সাজিয়ে দেয়।
শিক্ষা-বাজারের পরিবর্তন
ট্যাম্পায় এখন অভিভাবকেরা নিজেদের সন্তানকে কোথায় কোন ক্লাসে পড়াবে তা সম্পূর্ণ নিজেরাই ঠিক করছেন। রাজ্যের ভাউচারের মাধ্যমে প্রতি শিশুর জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থ পাওয়ায় তারা প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্লাস কিনে নিচ্ছেন। ফলে বাড়িতে পড়ানো, মিনি-স্কুলে পাঠ, বাইরে বিভিন্ন ক্লাস—সব মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে এক ‘আ লা কার্টে’ শিক্ষা-পদ্ধতি। হিলসবরো কাউন্টিতে এখন প্রতি পনেরো শিশুর মধ্যে অন্তত একজন হোমস্কুলড, যা পুরো রাজ্যে সবচেয়ে বেশি। সরকারি স্কুলগুলোও এ কারণে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে; শুধু এই বছরেই প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী এসব বিকল্প ব্যবস্থায় চলে গেছে।

প্যান্ডেমিকের পর ফ্লোরিডার আলাদা পথ
মহামারির সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অভিভাবক হোমস্কুলিং চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু বেশিরভাগ আবার স্কুলে ফিরিয়ে দেন। তবে ফ্লোরিডায় তারা আর ফিরে যাননি। গত পাঁচ বছরে হোমস্কুলড শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকের মতো বেড়ে ১,৫৫,০০০–এ পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার আয়ভেদ না দেখে সবাইকে স্কুল-চয়েস ভাউচার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই এই পরিবর্তন আরও দ্রুত হয়েছে।
মাইক্রোস্কুলের অভিজ্ঞতা
ট্যাম্পার একটি উন্নয়নশীল এলাকায় অবস্থিত Urban Cottage নামের মাইক্রোস্কুলটিতে শিশুরা মন্টেসরি পদ্ধতিতে কিছু সময়ের জন্য পড়তে আসে। এখানে তারা ফনিক্স পদ্ধতিতে পড়া শেখে, কারসিভ লেখে, কাঠের দানায় যোগ-বিয়োগ শেখে, মানচিত্রে নাম বসায় এবং ম্যাগনা কার্টার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। বাড়ির মতো পরিবেশে কয়েকটি ছোট ঘরে শিক্ষকরা ঘুরে ঘুরে শিশুদের সাহায্য করেন। এই স্কুলের পরিচালক মারিসা হেস জানান, এখানে কর্মরত মায়েদের সবারই নিজ নিজ বিষয়ে উচ্চ ডিগ্রি আছে।
শহরজুড়ে নানা ধরনের বিকল্প শিক্ষা
ট্যাম্পার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় আরও নানা ধরনের শিক্ষা-পদ্ধতি। কিছু পরিবার চার্চভিত্তিক কো-অপে যায়, যেখানে অর্থব্যবস্থা শেখা থেকে শুরু করে ‘Dungeons & Dragons’–এর মতো কল্পনার খেলাও শেখানো হয়। শহরের বাইরে ফার্ম-স্কুলে শিশুদের গবাদিপশুর দেখাশোনা আর কৃষিকাজ শেখানো হয়। অনেক পরিবার আবার বাড়িতে বসেই নির্দিষ্ট কারিকুলাম অনুসরণ করে। কিছু পরিবার এই ব্যবস্থাকে বেছে নেয় কারণ তারা চায় সন্তানরা বেশি সময় পরিবারে থাকুক, বাইরে খেলুক এবং নিজের আগ্রহ অনুযায়ী শিখুক।

প্রচলিত স্কুল ব্যবস্থার ওপর প্রভাব
নতুন এই শিক্ষা-বাজার প্রচলিত স্কুলগুলোকেও পরিবর্তনে বাধ্য করছে। অনেক প্রাইভেট স্কুল এখন সপ্তাহে একদিন ‘হোমস্কুল ডে’ চালু করেছে, যাতে হোমস্কুলড শিক্ষার্থীরা ওইদিন এসে ক্লাস করতে পারে। সরকারি স্কুলগুলোও শুরু করেছে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আলাদা কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। কেউ চাইলে শুধু গণিত বা পরিসংখ্যান শিখতে পারে, কিংবা স্কুলের ফুটবল দলে খেলতে পারে। ব্রাওয়ার্ড কাউন্টির সুপারিনটেনডেন্ট বলেন, আগে কখনো প্রচলিত স্কুলগুলোকে নিজেদের প্রচার করতে হয়নি, এখন তাদেরও প্রচারে নামতে হচ্ছে।
গবেষকদের উদ্বেগ
বহু শিক্ষা গবেষক মনে করছেন, ফ্লোরিডার হোমস্কুলিং-এর নিয়মগুলো অত্যন্ত শিথিল। সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, কিছু অভিভাবক নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রিপশন, ডিজনি ওয়ার্ল্ড টিকিট কিংবা বাড়ির জিম সরঞ্জামও ‘শিক্ষাসামগ্রী’ হিসেবে দেখিয়ে ভাউচারের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। অনেক রাজ্যে যদিও হোমস্কুলিং–এ গণিত, ইতিহাস ও পাঠ্য শেখানো বাধ্যতামূলক, কিন্তু বাস্তবে তা তদারকি খুব কমই হয়। হোমস্কুলড শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফলও সাধারণত প্রকাশ করা হয় না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও মান নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
বিধিনিষেধ কি সমাধান?
এই নিয়ে Urban Cottage–এর পরিচালক মারিসা হেসের মত ভিন্ন। তিনি মনে করেন নিয়মকানুন বাড়ালে সমস্যা আরও বাড়বে। তার মতে, অতিরিক্ত নিয়মের কারণে আমেরিকার সরকারি স্কুল ব্যবস্থা বিগত কয়েক দশকে ব্যর্থ হয়েছে, আর এখন দেশের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী শ্রেণি-মানের নিচে রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, মুক্ত প্রতিযোগিতার এই শিক্ষা-বাজারই আসলে সমস্যার সমাধান দিতে পারে। যদি এটি ফ্লোরিডায় সফল হয়, তাহলে দেশের অন্য রাজ্যও এই পথ অনুসরণ করতে পারে।
ফ্লোরিডার এই নতুন শিক্ষা-পরীক্ষা একদিকে পরিবারগুলোকে তাদের সন্তানদের জন্য বহুবিধ পন্থা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে, অন্যদিকে প্রচলিত স্কুলব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করছে। পুরো ব্যবস্থাটি এখনো গঠন-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল বা ঝুঁকি—দুটিই এখনো স্পষ্ট নয়।
# ফ্লোরিডা_শিক্ষা, #হোমস্কুলিং,# শিক্ষা_সংস্কার,# ট্যাম্পা, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















