০৫:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

রাস্তা মেরামতে নতুন সহকারী এআই, দুর্ঘটনা কমাতে দৌড়াচ্ছে ডেটা

এআই ড্যাশক্যাম ও স্মার্ট সিস্টেমের পরীক্ষা
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুরোনো ও ভাঙাচোরা সড়ক অবকাঠামো সামলাতে নতুন ভরসা হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আগে যেখানে বছরে কয়েকবার কর্মকর্তারা হাতে–কলমে টহল দিয়ে গর্ত, ভাঙা গার্ডরেল বা মুছে যাওয়া লেন মার্কিং খুঁজে বের করতেন, এখন অনেক রাজ্যই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের ওপর ভরসা করছে। হাওয়াই, সান হোসে বা টেক্সাসের মতো অঞ্চলগুলোতে গাড়িতে বসানো ক্যামেরা ও সেন্সর প্রতিদিন হাজার হাজার ছবি ও ডেটা পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে, যেখান থেকে অ্যালগরিদম বিপজ্জনক অংশগুলো চিহ্নিত করে। এর লক্ষ্য হলো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগে থেকেই ধরা, যাতে একটি গর্ত বা ভাঙা গার্ডরেল আর অনিরামিত থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় না গড়ায়।

হাওয়াই রাজ্যে “আইজ অন দ্য রোড” নামে নতুন উদ্যোগে নির্বাচিত চালকদের মধ্যে এক হাজার এআই–সমৃদ্ধ ড্যাশক্যাম তুলে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব ক্যামেরা গাড়ি চলার সময়ই গার্ডরেল, সাইনবোর্ড ও লেনের দাগ বিশ্লেষণ করে কোথাও ভাঙন বা ত্রুটি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সিগনাল পাঠায়। কয়েক বছর আগে ক্ষতিগ্রস্ত গার্ডরেল মেরামত না হওয়ায় এক মারাত্মক দুর্ঘটনার পর যে মামলা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে, তা রাজ্যকে আরও সতর্ক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং পরিবহন কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় হাওয়াইতে যন্ত্রপাতি ও কর্মী পাঠানো কঠিন; তাই সঠিক জায়গায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এই এআই প্ল্যাটফর্ম বড় সহায়ক হবে।

ডেটা, গোপনীয়তা ও স্বচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ
সান হোসে শহরে প্রথম দিকে কেবল রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া গাড়ি ও পার্কিং এনফোর্সমেন্ট ভেহিকেলে ছোট ক্যামেরা লাগিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায়, সিস্টেম প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ত শনাক্ত করতে পারে। এখন তা ধীরে ধীরে আরও এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে নাগরিকদের অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে আগে থেকেই ফাটল, গর্ত বা রাস্তার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা যায়। শহরটি অন্য অনেক স্থানীয় সরকারের সঙ্গে মিলে একটি জোট গড়েছে, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতে ডেটা বিনিময় করা হবে। এতে এক শহরের শেখা শিক্ষা ও ট্রেনিং অন্য শহরের এআই মডেলকেও সমৃদ্ধ করবে।

সব সমাধানের ভিত্তি ক্যামেরা নয়। একটি কোম্পানি স্মার্টফোনে সংগৃহীত ব্রেক চাপা ও গাড়ির হঠাৎ বাঁক নেওয়ার ডেটা বিশ্লেষণ করে এমন জায়গা চিহ্নিত করছে, যেখানে ডিজাইনের সমস্যার কারণে চালকেরা বারবার ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাস্তার এক কোণে গাড়িগুলো হঠাৎ করে প্রচুর ব্রেক করছে; অনুসন্ধানে দেখা যায় ঝোপগাছের আড়ালে লুকিয়ে গেছে স্টপ সাইন। মাত্র কিছু ডাল কেটে ফেলা দিয়েই সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো গেছে। টেক্সাসের মতো বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ক বিশিষ্ট অঞ্চলে একাই লাখ লাখ লেন মাইল পরিদর্শন করা কঠিন। সেখানে এআই–চালিত সিস্টেম পুরোনো সাইনবোর্ড, মেয়াদোত্তীর্ণ মার্কিং বা অনুপস্থিত গার্ডরেল দ্রুত চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে।

ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এআই এখন একটি ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার—অর্থাৎ মানুষের সিদ্ধান্তকে চাপা না দিয়ে বরং ছোট দলকে বিশাল নেটওয়ার্ক নজরে রাখতে সাহায্য করছে। তবে এত বিপুল পরিসরে ছবি ও লোকেশন ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা জরুরি বলে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। অনেক প্রযুক্তি–উদ্যোক্তার চোখ ইতিমধ্যে পরবর্তী ধাপে, যখন রাস্তায় মানুষের চালানো গাড়ির পাশাপাশি স্বচালিত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। সেসব যানবাহনের জন্য পরিষ্কার লেন মার্কিং, ভালো আলো, নিরাপদ বাঁক ও সুশৃঙ্খল সিগন্যাল দরকার হবে—যা নিশ্চিত করতে আবারও দরকার হবে সঠিক ডেটা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাস্তা মেরামতে নতুন সহকারী এআই, দুর্ঘটনা কমাতে দৌড়াচ্ছে ডেটা

০২:৫৯:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

এআই ড্যাশক্যাম ও স্মার্ট সিস্টেমের পরীক্ষা
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পুরোনো ও ভাঙাচোরা সড়ক অবকাঠামো সামলাতে নতুন ভরসা হয়ে উঠছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। আগে যেখানে বছরে কয়েকবার কর্মকর্তারা হাতে–কলমে টহল দিয়ে গর্ত, ভাঙা গার্ডরেল বা মুছে যাওয়া লেন মার্কিং খুঁজে বের করতেন, এখন অনেক রাজ্যই স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের ওপর ভরসা করছে। হাওয়াই, সান হোসে বা টেক্সাসের মতো অঞ্চলগুলোতে গাড়িতে বসানো ক্যামেরা ও সেন্সর প্রতিদিন হাজার হাজার ছবি ও ডেটা পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে, যেখান থেকে অ্যালগরিদম বিপজ্জনক অংশগুলো চিহ্নিত করে। এর লক্ষ্য হলো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা আগে থেকেই ধরা, যাতে একটি গর্ত বা ভাঙা গার্ডরেল আর অনিরামিত থেকে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় না গড়ায়।

হাওয়াই রাজ্যে “আইজ অন দ্য রোড” নামে নতুন উদ্যোগে নির্বাচিত চালকদের মধ্যে এক হাজার এআই–সমৃদ্ধ ড্যাশক্যাম তুলে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব ক্যামেরা গাড়ি চলার সময়ই গার্ডরেল, সাইনবোর্ড ও লেনের দাগ বিশ্লেষণ করে কোথাও ভাঙন বা ত্রুটি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সিগনাল পাঠায়। কয়েক বছর আগে ক্ষতিগ্রস্ত গার্ডরেল মেরামত না হওয়ায় এক মারাত্মক দুর্ঘটনার পর যে মামলা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে, তা রাজ্যকে আরও সতর্ক করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং পরিবহন কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় হাওয়াইতে যন্ত্রপাতি ও কর্মী পাঠানো কঠিন; তাই সঠিক জায়গায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এই এআই প্ল্যাটফর্ম বড় সহায়ক হবে।

ডেটা, গোপনীয়তা ও স্বচালিত গাড়ির ভবিষ্যৎ
সান হোসে শহরে প্রথম দিকে কেবল রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া গাড়ি ও পার্কিং এনফোর্সমেন্ট ভেহিকেলে ছোট ক্যামেরা লাগিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। দেখা যায়, সিস্টেম প্রায় ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ত শনাক্ত করতে পারে। এখন তা ধীরে ধীরে আরও এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে নাগরিকদের অভিযোগের অপেক্ষায় না থেকে আগে থেকেই ফাটল, গর্ত বা রাস্তার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করা যায়। শহরটি অন্য অনেক স্থানীয় সরকারের সঙ্গে মিলে একটি জোট গড়েছে, যেখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতে ডেটা বিনিময় করা হবে। এতে এক শহরের শেখা শিক্ষা ও ট্রেনিং অন্য শহরের এআই মডেলকেও সমৃদ্ধ করবে।

সব সমাধানের ভিত্তি ক্যামেরা নয়। একটি কোম্পানি স্মার্টফোনে সংগৃহীত ব্রেক চাপা ও গাড়ির হঠাৎ বাঁক নেওয়ার ডেটা বিশ্লেষণ করে এমন জায়গা চিহ্নিত করছে, যেখানে ডিজাইনের সমস্যার কারণে চালকেরা বারবার ঝুঁকির মুখে পড়ছেন। এক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রাস্তার এক কোণে গাড়িগুলো হঠাৎ করে প্রচুর ব্রেক করছে; অনুসন্ধানে দেখা যায় ঝোপগাছের আড়ালে লুকিয়ে গেছে স্টপ সাইন। মাত্র কিছু ডাল কেটে ফেলা দিয়েই সেখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো গেছে। টেক্সাসের মতো বিশাল সড়ক নেটওয়ার্ক বিশিষ্ট অঞ্চলে একাই লাখ লাখ লেন মাইল পরিদর্শন করা কঠিন। সেখানে এআই–চালিত সিস্টেম পুরোনো সাইনবোর্ড, মেয়াদোত্তীর্ণ মার্কিং বা অনুপস্থিত গার্ডরেল দ্রুত চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে।

ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এআই এখন একটি ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার—অর্থাৎ মানুষের সিদ্ধান্তকে চাপা না দিয়ে বরং ছোট দলকে বিশাল নেটওয়ার্ক নজরে রাখতে সাহায্য করছে। তবে এত বিপুল পরিসরে ছবি ও লোকেশন ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা রক্ষা জরুরি বলে তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। অনেক প্রযুক্তি–উদ্যোক্তার চোখ ইতিমধ্যে পরবর্তী ধাপে, যখন রাস্তায় মানুষের চালানো গাড়ির পাশাপাশি স্বচালিত গাড়ির সংখ্যা দ্রুত বাড়বে। সেসব যানবাহনের জন্য পরিষ্কার লেন মার্কিং, ভালো আলো, নিরাপদ বাঁক ও সুশৃঙ্খল সিগন্যাল দরকার হবে—যা নিশ্চিত করতে আবারও দরকার হবে সঠিক ডেটা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত।