০৫:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

সেনকাকু ঘিরে চীনা টহল রেকর্ড সময় ধরে, জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে

চীনা জাহাজের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি
পূর্ব চীন সাগরের ছোট, জনশূন্য সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জকে ঘিরে নতুন জটিলতার মুখে পড়েছে জাপান। টোকিও জানিয়েছে, চীনা কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলো পরপর ৩০ দিন এই দ্বীপের আশপাশের কনটিগুয়াস জোনে ঘোরাফেরা করেছে, যা এ ধরনের নজিরবিহীন দীর্ঘতম টানা উপস্থিতি। জাপানের অভিযোগ, এভাবে প্রায় প্রতিদিন টহল দিয়ে বেইজিং ধীরে ধীরে নিজের উপস্থিতিকে “স্বাভাবিক” করে তুলতে চায় এবং দ্বীপের ওপর জাপানের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করছে। জাপান আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানালেও চীন সাধারণত এটিকে রুটিন টহল আখ্যা দেয় এবং দ্বীপগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে উল্লেখ করে। ফলাফল হিসেবে, এ অঞ্চলে জাহাজ ও টহল বিমানের ঘন ঘন মুখোমুখি অবস্থান থেকে ভুল হিসাব বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

জাপানের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, সর্বশেষ টহলের সময় চারটি চীনা জাহাজ দেখা যায়, যার মধ্যে অন্তত একটি জাহাজে কামানের মতো ভারী অস্ত্র বসানো ছিল বলে তাদের ধারণা। এসব জাহাজকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তারা জাপানের ১২ নটিক্যাল মাইল সীমার বাইরে থেকে ঘোরাফেরা করে। টোকিও বলছে, এসব ঘটনা শুধু সামুদ্রিক নিরাপত্তা নয়, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রশ্নেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন নিঃশব্দ কিন্তু নিয়মিত চাপের কৌশল চীনের জন্য নতুন কিছু নয়; দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ থেকে শুরু করে পূর্ব চীন সাগরের আকাশসীমা পর্যন্ত একই ধরণ দেখা যায়।

নিরাপত্তা জোট ও আঞ্চলিক সমীকরণ
এ বিরোধ এখন জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জোট রাজনীতিরও একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র বারবার স্পষ্ট করেছে, জাপান–যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা চুক্তি সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জেও প্রযোজ্য, কারণ দ্বীপগুলো কার্যত জাপানের প্রশাসনের অধীনে। সে কারণে এই এলাকায় যেকোনো সংঘাত বা সশস্ত্র হামলা বৃহত্তর জোট–সংকটে রূপ নিতে পারে। টোকিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে রাডার স্টেশন, ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ও কোস্ট গার্ড সক্ষমতা বাড়িয়ে দূরবর্তী দ্বীপ রক্ষায় জোর দিচ্ছে।

চীনের জন্য নিয়মিত টহল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক—দুই স্তরেই বার্তা বহন করে। অভ্যন্তরীণভাবে এটি সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে কঠোর অবস্থানের প্রদর্শন, আর আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়ে দেওয়া যে বেইজিং তার দাবি থেকে পিছিয়ে আসবে না। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ নিজেদের আকাশসীমা ও সামুদ্রিক দাবিতে চাপের মুখে রয়েছে। ফলে সেনকাকু ঘিরে প্রতিটি নতুন টানা টহল শুধু দুই দেশের দ্বন্দ্ব নয়, বরং পুরো ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা সমীকরণের দিকে নতুন করে দৃষ্টি টানছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কুষ্টিয়ায় ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া: ভোরের হামলায় বাড়ছে উদ্বেগ

সেনকাকু ঘিরে চীনা টহল রেকর্ড সময় ধরে, জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে

০২:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

চীনা জাহাজের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি
পূর্ব চীন সাগরের ছোট, জনশূন্য সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জকে ঘিরে নতুন জটিলতার মুখে পড়েছে জাপান। টোকিও জানিয়েছে, চীনা কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলো পরপর ৩০ দিন এই দ্বীপের আশপাশের কনটিগুয়াস জোনে ঘোরাফেরা করেছে, যা এ ধরনের নজিরবিহীন দীর্ঘতম টানা উপস্থিতি। জাপানের অভিযোগ, এভাবে প্রায় প্রতিদিন টহল দিয়ে বেইজিং ধীরে ধীরে নিজের উপস্থিতিকে “স্বাভাবিক” করে তুলতে চায় এবং দ্বীপের ওপর জাপানের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করছে। জাপান আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানালেও চীন সাধারণত এটিকে রুটিন টহল আখ্যা দেয় এবং দ্বীপগুলোকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে উল্লেখ করে। ফলাফল হিসেবে, এ অঞ্চলে জাহাজ ও টহল বিমানের ঘন ঘন মুখোমুখি অবস্থান থেকে ভুল হিসাব বা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে।

জাপানের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, সর্বশেষ টহলের সময় চারটি চীনা জাহাজ দেখা যায়, যার মধ্যে অন্তত একটি জাহাজে কামানের মতো ভারী অস্ত্র বসানো ছিল বলে তাদের ধারণা। এসব জাহাজকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তারা জাপানের ১২ নটিক্যাল মাইল সীমার বাইরে থেকে ঘোরাফেরা করে। টোকিও বলছে, এসব ঘটনা শুধু সামুদ্রিক নিরাপত্তা নয়, নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার প্রশ্নেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমন নিঃশব্দ কিন্তু নিয়মিত চাপের কৌশল চীনের জন্য নতুন কিছু নয়; দক্ষিণ চীন সাগরে দ্বীপ নির্মাণ থেকে শুরু করে পূর্ব চীন সাগরের আকাশসীমা পর্যন্ত একই ধরণ দেখা যায়।

নিরাপত্তা জোট ও আঞ্চলিক সমীকরণ
এ বিরোধ এখন জাপান, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জোট রাজনীতিরও একটি পরীক্ষাক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্র বারবার স্পষ্ট করেছে, জাপান–যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা চুক্তি সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জেও প্রযোজ্য, কারণ দ্বীপগুলো কার্যত জাপানের প্রশাসনের অধীনে। সে কারণে এই এলাকায় যেকোনো সংঘাত বা সশস্ত্র হামলা বৃহত্তর জোট–সংকটে রূপ নিতে পারে। টোকিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলে রাডার স্টেশন, ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট ও কোস্ট গার্ড সক্ষমতা বাড়িয়ে দূরবর্তী দ্বীপ রক্ষায় জোর দিচ্ছে।

চীনের জন্য নিয়মিত টহল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক—দুই স্তরেই বার্তা বহন করে। অভ্যন্তরীণভাবে এটি সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে কঠোর অবস্থানের প্রদর্শন, আর আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোকে জানিয়ে দেওয়া যে বেইজিং তার দাবি থেকে পিছিয়ে আসবে না। একই সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ নিজেদের আকাশসীমা ও সামুদ্রিক দাবিতে চাপের মুখে রয়েছে। ফলে সেনকাকু ঘিরে প্রতিটি নতুন টানা টহল শুধু দুই দেশের দ্বন্দ্ব নয়, বরং পুরো ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা সমীকরণের দিকে নতুন করে দৃষ্টি টানছে।