০২:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সন্ত্রাসী অস্থিরতা

মে মাসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের নতুন সন্ত্রাসবিরোধী নীতি ঘোষণা করেছিলেন—স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেছিলেন, “যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তবে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।” ১০ নভেম্বর, দিল্লির রেড ফোর্টের বাইরে একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হলে, যার ফলে অন্তত ৮ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হন, পুরো অঞ্চলই সজাগ হয়ে ওঠে। তবে এখন পর্যন্ত, যুদ্ধের আরেকটি ঝুঁকি তেমন দেখা যাচ্ছে না। এই বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যা ভারতীয় পুলিশ আগে দিনেই ফরিদাবাদে ভেঙে দিয়েছিল। পুলিশের কাছে অস্ত্র, গুলি এবং বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়। সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশি তদন্ত ও ষড়যন্ত্র

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি একটি “আন্তঃরাজ্য এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের” সদস্য ছিলেন, যা পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মুহাম্মদ (JeM) এবং আল-কায়েদা সম্পর্কিত গোষ্ঠী আনসার ঘাজওয়াতুল হিন্দের সঙ্গে জড়িত। দিল্লির বিস্ফোরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাড়িটি উমর আন-নবির নামে এক চিকিৎসকের ছিল, যিনি ওই অভিযানে পালিয়ে গেছেন।

পাকিস্তান সংক্রান্ত সন্দেহ

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু সাংবাদিককে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছে যে, এই হামলাকারীরা “পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষিত নির্দেশনায়” কাজ করছিলেন। তবে ভারতীয় নেতারা এই অভিযোগকে প্রকাশ্যে পুনর্ব্যক্ত করেননি। গুরুত্বপূর্ণ যে, এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে এক হত্যাযজ্ঞের পর মে মাসে যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে হামলাকারীরা পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী নয়, বরং ভারতীয় নাগরিক বলে মনে হচ্ছে। একজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞের মতে, জইশ-ই-মুহাম্মদ ও আল-কায়েদার মধ্যে সম্পর্ক ছিল না, এবং এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখত।

ভারতীয় সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি

ভারতে গত এক দশকে প্রধান শহরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা কম দেখা গেছে। গত বছর বেঙ্গালুরুতে আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট একটি কফি শপে বোমা হামলা ছিল এই ধরনের হামলার প্রথম ঘটনা। দিল্লির ওপর সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা ২০১১ সালে হয়েছিল, যখন এক ব্রিফকেস বোমা ১৫ জনকে হত্যা করেছিল। সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, সন্ত্রাসীরা কাশ্মীরের বাইরে কাজ করাটা অনেক সহজ মনে করতে পারে, কারণ কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপ অনেক বেশি।

মোদির সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যৎ পরিণতি

সাহনি মনে করেন, দিল্লির বিস্ফোরণ কোনওভাবে ৯০-এর দশক এবং ২০০০-এর দশকের মতো সন্ত্রাসী সহিংসতার নতুন ঢেউয়ের শুরু হতে পারে না। সেই সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শক্তিশালী ছিল এবং রাষ্ট্র দুর্বল ছিল, এখন পরিস্থিতি বিপরীত। ফরিদাবাদে সেলটি উন্মোচন এবং ধ্বংস হওয়া, সন্ত্রাসী হামলার আগে পুলিশ প্রশাসনের “ভাল হাতে থাকা” এর সাক্ষ্য। মোদির ভূটান সফর চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর ঝুঁকি কম, যতক্ষণ না বিদেশি নির্দেশনা সম্পর্কে নতুন কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায়।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা

তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। ১১ নভেম্বর, ইসলামাবাদে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। পাকিস্তানি তালেবান, একটি জিহাদি গোষ্ঠী, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। পাকিস্তানে এ বছর ১৬০০-এর বেশি সাধারণ মানুষ ও সেনা সদস্য সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন, যা গত দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যা। পাকিস্তানি নেতারা এই হামলার জন্য “ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস” কে দায়ী করেছেন, যা ভারত তাদের “স্পষ্টভাবে উন্মাদ পাকিস্তানি নেতৃত্বের” কাজ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

#বোমাবিস্ফোরণ #দিল্লি #সন্ত্রাস #ভারত #পাকিস্তান #কাশ্মীর #জইশইমুহাম্মদ #আলকায়েদা #মোদিরপ্রতিশ্রুতি #পাকিস্তানসন্ত্রাস #ইসলামাবাদ #পাকিস্তানতালেবান


জনপ্রিয় সংবাদ

সেনকাকু ঘিরে চীনা টহল রেকর্ড সময় ধরে, জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে

দিল্লিতে বোমা বিস্ফোরণ: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সন্ত্রাসী অস্থিরতা

১২:১৭:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

মে মাসে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের নতুন সন্ত্রাসবিরোধী নীতি ঘোষণা করেছিলেন—স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেছিলেন, “যদি ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা হয়, তবে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।” ১০ নভেম্বর, দিল্লির রেড ফোর্টের বাইরে একটি গাড়ি বিস্ফোরিত হলে, যার ফলে অন্তত ৮ জন নিহত এবং ২০ জন আহত হন, পুরো অঞ্চলই সজাগ হয়ে ওঠে। তবে এখন পর্যন্ত, যুদ্ধের আরেকটি ঝুঁকি তেমন দেখা যাচ্ছে না। এই বিস্ফোরণের সঙ্গে একটি ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যা ভারতীয় পুলিশ আগে দিনেই ফরিদাবাদে ভেঙে দিয়েছিল। পুলিশের কাছে অস্ত্র, গুলি এবং বিস্ফোরক তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়। সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশি তদন্ত ও ষড়যন্ত্র

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি একটি “আন্তঃরাজ্য এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের” সদস্য ছিলেন, যা পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মুহাম্মদ (JeM) এবং আল-কায়েদা সম্পর্কিত গোষ্ঠী আনসার ঘাজওয়াতুল হিন্দের সঙ্গে জড়িত। দিল্লির বিস্ফোরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গাড়িটি উমর আন-নবির নামে এক চিকিৎসকের ছিল, যিনি ওই অভিযানে পালিয়ে গেছেন।

পাকিস্তান সংক্রান্ত সন্দেহ

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু সাংবাদিককে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছে যে, এই হামলাকারীরা “পাকিস্তান-পৃষ্ঠপোষিত নির্দেশনায়” কাজ করছিলেন। তবে ভারতীয় নেতারা এই অভিযোগকে প্রকাশ্যে পুনর্ব্যক্ত করেননি। গুরুত্বপূর্ণ যে, এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে এক হত্যাযজ্ঞের পর মে মাসে যে যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে হামলাকারীরা পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারী নয়, বরং ভারতীয় নাগরিক বলে মনে হচ্ছে। একজন ভারতীয় বিশেষজ্ঞের মতে, জইশ-ই-মুহাম্মদ ও আল-কায়েদার মধ্যে সম্পর্ক ছিল না, এবং এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখত।

ভারতীয় সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি

ভারতে গত এক দশকে প্রধান শহরগুলোতে সন্ত্রাসী হামলা কম দেখা গেছে। গত বছর বেঙ্গালুরুতে আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট একটি কফি শপে বোমা হামলা ছিল এই ধরনের হামলার প্রথম ঘটনা। দিল্লির ওপর সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা ২০১১ সালে হয়েছিল, যখন এক ব্রিফকেস বোমা ১৫ জনকে হত্যা করেছিল। সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, সন্ত্রাসীরা কাশ্মীরের বাইরে কাজ করাটা অনেক সহজ মনে করতে পারে, কারণ কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপ অনেক বেশি।

মোদির সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যৎ পরিণতি

সাহনি মনে করেন, দিল্লির বিস্ফোরণ কোনওভাবে ৯০-এর দশক এবং ২০০০-এর দশকের মতো সন্ত্রাসী সহিংসতার নতুন ঢেউয়ের শুরু হতে পারে না। সেই সময় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী শক্তিশালী ছিল এবং রাষ্ট্র দুর্বল ছিল, এখন পরিস্থিতি বিপরীত। ফরিদাবাদে সেলটি উন্মোচন এবং ধ্বংস হওয়া, সন্ত্রাসী হামলার আগে পুলিশ প্রশাসনের “ভাল হাতে থাকা” এর সাক্ষ্য। মোদির ভূটান সফর চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও প্রমাণ করে যে, পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোর ঝুঁকি কম, যতক্ষণ না বিদেশি নির্দেশনা সম্পর্কে নতুন কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায়।

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা

তবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। ১১ নভেম্বর, ইসলামাবাদে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। পাকিস্তানি তালেবান, একটি জিহাদি গোষ্ঠী, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। পাকিস্তানে এ বছর ১৬০০-এর বেশি সাধারণ মানুষ ও সেনা সদস্য সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন, যা গত দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যা। পাকিস্তানি নেতারা এই হামলার জন্য “ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস” কে দায়ী করেছেন, যা ভারত তাদের “স্পষ্টভাবে উন্মাদ পাকিস্তানি নেতৃত্বের” কাজ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।

#বোমাবিস্ফোরণ #দিল্লি #সন্ত্রাস #ভারত #পাকিস্তান #কাশ্মীর #জইশইমুহাম্মদ #আলকায়েদা #মোদিরপ্রতিশ্রুতি #পাকিস্তানসন্ত্রাস #ইসলামাবাদ #পাকিস্তানতালেবান