পানীয়ের সঙ্গে কী খাওয়া উচিত—এর সহজ উত্তর নেই। সময়, শহর এবং প্রজন্মভেদে মানুষের পছন্দ বদলে যায়। লেখকের শৈশবে দেখা যেত, পানীয়ের সঙ্গে পাপড় বা বাদাম খেলেই সবাই সন্তুষ্ট থাকত।
শৈশবের স্মৃতি: পাপড় আর বাদাম
তখন বড়রা সাধারণত হুইস্কি বা দুপুরের বিয়ার খেতেন। সঙ্গে থাকত পাপড়, যা সেই সময় গুজরাটি ও সিন্ধি সম্প্রদায়ের প্রভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। বারের সাধারণ খাবার ছিল বাদাম, আর একটু ভালো জায়গায় পরিবেশন করা হতো কাজুবাদাম। বিশেষ আপ্যায়নে থাকত সবুজ অলিভ।
সেই সময় বারে খাবারের বৈচিত্র্য খুব কম ছিল। বোম্বাইয়ের পারমিট রুমে ‘মসলা বাদাম’ বিশেষভাবে জনপ্রিয় ছিল, যা বিয়ারের সঙ্গে খুব ভালো মানাত।
আজকের বার-সংস্কৃতি
এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। মনে হয় রেস্তোরাঁর চেয়ে বারই বেশি খোলা হচ্ছে। অনেক নতুন রেস্তোরাঁ মূলত বারের মতোই চলছে।
মানুষ এখন বেশি প্রাণবন্ত এবং জোরালো পরিবেশ খোঁজে। অনেক বারে গান এত জোরে বাজে যে কথা বলা কঠিন হয়ে পড়ে। যোগাযোগমাধ্যমের যুগে মানুষ সামনাসামনি কথা বলার সময় কম দিচ্ছে। সম্পর্কও আগের মতো দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ বছরের নিচে প্রায় অর্ধেক পুরুষ অবিবাহিত। তরুণেরা আগের তুলনায় অনেক কম সময় মুখোমুখি আড্ডা দিচ্ছে।
এমন পরিবেশে বার মানুষকে বেশি যোগাযোগ না করেও আনন্দ করার সুযোগ দেয়।
এখন মানুষ কখন খায়?
আগে মানুষ পান করার পরে কিছু খেতে চাইত। এখন অনেকেই বার বন্ধ হলে সরাসরি বাড়ি চলে যায়। তাই এখন পান করার সঙ্গেই হালকা কিছু খেয়ে ফেলে। খাবারের মান খুব উচ্চমানের না হলেও বেশিরভাগ মানুষ ককটেলের সৃজনশীলতায় বেশি আগ্রহী থাকে।
বেঙ্গালুরুর ‘দ্য মিডল রুম’: ভিন্নধারার অভিজ্ঞতা
বেঙ্গালুরুর কোর্টইয়ার্ড কমপ্লেক্সে অবস্থিত দ্য মিডল রুম একটি লিসনিং বার, যেখানে মূল আকর্ষণ সঙ্গীত। এখানে সাধারণত ভিনাইল রেকর্ড বাজানো হয়, মাঝে মাঝে থাকে লাইভ সঙ্গীত। এখানে শক্ত মদ পরিবেশন করা হয় না। সঙ্গীতের মান বজায় রাখতে ভলিউম ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়। এই কারণে এখানে খাবারের মান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অদিত্যের খাবার: পুরনো পাব-সংস্কৃতির আধুনিক রূপ
দ্য মিডল রুমের খাবারের দায়িত্বে আছেন অদিত্য কিদাম্বী। তিনি আগে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, পরে কোম্বুচা ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বেঙ্গালুরুর নব্বই দশকের পাব-সংস্কৃতির খাবারগুলোকে নতুনভাবে তৈরি করেছেন।
চিজ বল থেকে শুরু করে বিখ্যাত ‘বিরি দোসা’—সব খাবারেরই উন্নত রূপ তিনি বানিয়েছেন। বিরি দোসায় ধীরে রান্না করা খাসির মাংস ব্যবহার করা হয়। তাঁর মাটন বড়া এবং গার্লিক প্রন পুরনো দিনের পাব-ডিশের আধুনিক রূপ। তিনি নিজেই পাস্ত্রামি তৈরি করে রিউবেন স্যান্ডউইচ বানান। তাঁর বাটারমিল্ক ব্যাটারে ভাজা ফ্রাইড চিকেনও অত্যন্ত প্রশংসিত।
সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার হলো হাতের বানানো বানসহ চিজবার্গার—এমন মানের বার্গারের জন্য আলাদা দোকান খোলা যায়।
বার-ফুড কি এমন হওয়া উচিত?
লেখক মনে করিয়ে দেন যে কিছু জায়গায় যেমন ‘ওয়াইন প্রস্তুতি কেন্দ্র’-এ খুব ভালো স্ন্যাকস পরিবেশন করা হয়, আবার রবিবারে ওয়েস্টার আর শ্যাম্পেনও থাকে। তাহলে অন্য বারগুলো কেন এমন মান বজায় রাখতে পারে না?
যখন ককটেল বানাতে এত কল্পনা খরচ করা হয়, তখন খাবারের জন্য দক্ষ শেফ রাখা কেন সম্ভব নয়?
ইংল্যান্ডে মিশেলিন-তারকাপ্রাপ্ত পাব আছে। আমেরিকায় বার-ফুড বিখ্যাত। প্যারিসে ওয়াইন বারের খাবার অনেক রেস্তোরাঁর মতোই মানসম্মত। ভারতে এটি পুরোপুরি হয়নি, কারণ অনেক বারে গান এত জোরে বাজে যে মানুষ খাবারের স্বাদ নিয়ে মনোযোগ দিতে পারে না।
ভারতের অনেক রেস্তোরাঁ মালিক এখন বেশি আয়ের জন্য বারের দিকে ঝুঁকছেন। খুব শিগগিরই তারা বুঝতে পারবেন যে ভালো খাবারই সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি।
#খাবার #বারসংস্কৃতি #বেঙ্গালুরু #রেস্তোরাঁ #সঙ্গীতবার
সারাক্ষণ রিপোর্ট 




















