ভয়—এটাই ছিল ২৬তম সংশোধনী পাস হওয়ার মূল কারণ। ভয় ছিল, সুপ্রিম কোর্ট কোনোভাবে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্তি দিতে পারে এবং এমনকি সাম্প্রতিক নির্বাচন পর্যন্ত বাতিল করে দিতে পারে—যে নির্বাচনে অনেকে বিশ্বাস করেন, নির্বাচনী ফলাফল প্রকৃত জনরায়ের প্রতিফলন নয়। ২৭তম সংশোধনী সেই আশঙ্কাকে বাস্তবতার পরিণতি দিয়েছে।
এই সংশোধনী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ভাষায় একটি “হাইব্রিড” ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক বৈধতা দিয়েছে এবং একই সাথে স্বীকার করেছে যে এই ব্যবস্থার সিনিয়র অংশীদারের নেতৃত্ব সরকারি মেয়াদ ছাড়িয়ে আরও দীর্ঘ সময় বিস্তৃত থাকবে।
সমালোচকরা বলেন, এখন উচ্চ আদালত নির্বাহী শাখার প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের অধীনে চলে যেতে পারে। বেসামরিক ও সামরিক ক্ষমতার ভারসাম্য বিবেচনায়, আদালতের কিছু অংশ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আটকা পড়তে পারে।
এ কথা সত্য হলেও এটাও স্পষ্ট যে বহুদিন ধরেই যা চলছিল, এবার শুধু তা সংবিধানে বৈধ রূপ পেয়েছে। খুব সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের উচ্চ আদালত বরাবরই চাপের মুখে প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেছে।
ফেডারেল কোর্টের সময় থেকে—মুনিরের সেই কুখ্যাত রায়, যা মৌলভী তমিজউদ্দীনের পক্ষে সিন্ধ প্রধান আদালতের রায় উল্টে দিয়েছিল—সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো প্রায় সব সময়ই প্রভাবশালী ক্ষমতাকেন্দ্রের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করেছে, আইনের শাসন বা সংবিধানের আত্মা নয়।
এই বাস্তবতায় ব্যর্থতার দায় অনেকটাই চাপানো হয়েছে রাজনীতিবিদদের ওপর।

আইয়ুব খান যুগ থেকে শুরু করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর অপসারণ ও মৃত্যুদণ্ড, ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত একের পর এক নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করা—সবই এর উদাহরণ। সুপ্রিম কোর্ট কবে জনতার পাশে দাঁড়িয়েছে? কবে আইনের শাসন রক্ষা করেছে? যদি আদালত একসময় দুর্বল, খালি কাঠামোতে পরিণত হয়ে থাকে, তা বহু আগেই হয়েছিল—২৭তম সংশোধনীর অনেক আগে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আদালত দুটি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করতেও প্রতিষ্ঠানের পথেই হেঁটেছে। এখন যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে, তা মূলত এই কারণে যে আদালত দীর্ঘদিন ধরে যে বাস্তবতায় অভ্যস্ত ছিল, এবার তা যৌক্তিকভাবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্যতিক্রমগুলো ব্যতিক্রমই—একজন বিচারপতি প্রতিবাদ করলে ডজনখানেক রাজি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
এই হলো প্রকৃত ট্র্যাজেডি।
আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা—সবই আক্রান্ত। মূল্যবোধগুলো পশ্চাদপসরণ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গঠিত বয়ান এবং প্রচলিত গণমাধ্যমের প্রভাব কমে আসায় সম্পূর্ণ নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে—এ পথ কোথায় যাচ্ছে তা সময় বলবে।
পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বহুবিধ বাহ্যিক হুমকি, সন্ত্রাসবাদের পুনরুত্থান এবং তুলনামূলক ভালো গণতন্ত্র বাদ দিয়ে হাইব্রিড ব্যবস্থায় প্রবেশ—এসবের ফলে সব কর্তৃত্ব এখন একজন ব্যক্তির হাতে। কেউ কেউ বলেন, বৈধতার ঘাটতি থাকা রাজনীতিবিদরাই তাকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দিয়েছে। এখন থেকে সফলতা বা ব্যর্থতা—সবই তার একার দায়।
আমি আশা করি, অন্তত জাতীয় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাওয়া সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবেন এবং বিশেষ বিনিয়োগ সুবিধা কাউন্সিল—যা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে—এখন তা উন্নত করতে পারবেন।
এগিয়ে যেতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা। আমাদের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত ব্যর্থতার দায় মূলত চাপানো হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর, যদিও অনেক সময়ই তারা সফল সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনির্বাচিত ক্ষমতাশালীদের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাই বহুবার জাতীয় স্বার্থের জায়গা দখল করেছে।

হাইব্রিড ব্যবস্থার সংজ্ঞাই হলো যৌথ দায়ভার। এখানে সিনিয়র অংশীদার ব্যর্থতার দায় শুধু বেসামরিক অংশীদারের ওপর চাপাতে পারে না। ভুল হলে দুই পক্ষকেই জবাবদিহি করতে হবে।
২৭তম সংশোধনী বিরোধীদের ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ আরও কঠিন করে দিয়েছে। তারা রাস্তায় আন্দোলন করে পরিবর্তন আনতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে। একমাত্র আশা ছিল আদালতের মাধ্যমে আইনগত প্রতিকার—কিন্তু এখন সেই দরজাটিও বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রতিষ্ঠানের ভেতরের সহানুভূতিশীল কর্মকর্তারাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিরোধীদের কৌশলে বড় পরিবর্তন ছাড়া উপায় নেই; শক্তির কেন্দ্রগুলো থেকে কোনো সহায়তা আর মিলবে না।
ইমরান খানের সমর্থকরা বলেন, তিনি নীতিগতভাবে অটল। অনেকে মনে করেন, তিনি দৃঢ়তা ও জেদ দেখিয়েছেন এবং বহু চাপে সত্ত্বেও ‘জুনিয়র অংশীদার’-এর সঙ্গে আপোষে যাননি।
আইনগত মুক্তির পথ বন্ধ হওয়ায় এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে—তা সময়ই বলবে। তার সহকারীরা অভিযোগ করেন, তিনি প্রায়ই যোগাযোগের বাইরে থাকেন—ফলে কৌশলগত পরিবর্তনের কোনো সংকেত পেতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যেতে পারে।
লেখক ডনের সাবেক সম্পাদক।
আব্বাস নাসির 


















