ডিপফেক ঘেঁষা ভিডিও আর আইনি চাপ
গুগলের মালিকানাধীন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব সম্প্রতি একযোগে শত শত এআই–তৈরি বলিউড ভিডিও মুছে ফেলেছে, যেগুলোর মোট ভিউ ছিল প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। এসব ক্লিপে জনপ্রিয় অভিনেতা–অভিনেত্রীদের মুখাবয়ব জেনারেটিভ টুলের সাহায্যে পুনর্গঠন করে নতুন গানের দৃশ্য, সিনেমার রিমিক্স বা ফ্যান্টাসি–ধর্মী গল্প বানানো হয়েছিল। অনেক ভিডিওতেই বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবির ভিজ্যুয়াল স্টাইল অনুকরণ করে একেবারে নতুন দৃশ্য দাঁড় করানো হয়, যা দেখে প্রথম নজরে অনেকেরই মনে হয়েছে এগুলো আসল ফুটেজের অংশ। একটি আলোচিত তারকা দম্পতির ডিজিটাল ইমেজ রক্ষার আইনি লড়াই ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পরপরই এই কনটেন্টগুলো ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যায়।
দর্শকদের এক অংশ এগুলোকে নিছক ফ্যান–মেড পরীক্ষা বা কৌতূহল মনে করলেও, অন্যরা শুরু থেকেই সতর্ক ছিলেন। তাঁদের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট ভিডিওগুলো যদি প্রেক্ষাপট ছাড়া বা ভুল ক্যাপশন দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে ভুল তথ্য, মানহানি বা ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। অভিনেতা ও প্রযোজকদের চোখে, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে এখন এআই–সাহায্য নেওয়া এমন এক “ছায়া বাজার” গড়ে উঠেছে, যেখানে তারকাদের মুখ ও শরীরকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, অথচ তাদের অনুমতি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রচলিত কপিরাইট অভিযোগে সাধারণত পুরোনো ফুটেজ বা সাউন্ডট্র্যাক পুনঃব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে; কিন্তু এখানে মূল সমস্যা একেবারেই নতুন—কারও পুরো চেহারা আর ভঙ্গি “সিমুলেট” করে ফেলা।

প্ল্যাটফর্মের দায়িত্ব, শিল্পীর অধিকার
ইউটিউবের নীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই ভ্রান্তিকরভাবে সম্পাদিত বা প্রতারণামূলক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে, কিন্তু বাস্তবে তা অনেক সময় নির্ভর করে ব্যবহারকারী বা অধিকার–হোল্ডারদের অভিযোগের ওপর। এবার মনে হচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ এআই–ভিডিও গণমাধ্যমের নজরে আসার পর প্ল্যাটফর্ম নিজেই সেই ক্যাটাগরির অসংখ্য ভিডিও শনাক্ত করে একসঙ্গে নামিয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো অ্যালগরিদম ব্যবহার করে “প্যাটার্ন–ভিত্তিক” এই নজরদারি আরও বাড়বে, যেখানে একটি সমস্যাজনক ধারা ধরা পড়লে তার সঙ্গে মিল থাকা অন্য ভিডিওগুলোও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে। এতে একদিকে নিরাপত্তা বাড়লেও, অন্যদিকে সৃজনশীল পরীক্ষার ক্ষেত্র কতটা সংকুচিত হবে—সেই প্রশ্নও উঠছে।
বলিউড অঙ্গনে এই ঘটনা নতুন করে আলোচনা তুলেছে—ডিজিটাল যুগে তারকাদের মুখাবয়ব ও “ইমেজ” ঠিক কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে। কেউ চাইছেন, স্টুডিওর সঙ্গে চুক্তিতে শুরু থেকেই স্পষ্ট করে লেখা থাকুক, কোন পরিস্থিতিতে বডি স্ক্যান বা ফেস মডেল ব্যবহার করা যাবে আর কোন পরিস্থিতিতে একেবারেই নয়। অন্যরা বলছেন, শুধু চুক্তি যথেষ্ট নয়; আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে যে কোনো ব্যক্তির ডিজিটাল রূপ বিনা অনুমতিতে তৈরি, বিক্রি বা প্রচার করা যাবে না। এআই প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হচ্ছে, ইউটিউব থেকে ১৬ মিলিয়ন ভিউ–ধারী এই ভিডিও উধাও হওয়ার ঘটনাটি হয়তো ভবিষ্যতে স্মরণ করা হবে ব্যক্তিগত অধিকার বনাম প্রযুক্তিগত স্বাধীনতার লড়াইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















