০৮:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনার রায়: ধানমন্ডি ৩২–এ উত্তেজনা, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি শেখ হাসিনার সরকার: হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড ঐতিহাসিক রায় শহর ভবনের শূন্যতা: নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের সঙ্গে একটি দিন কলকাতার পিচে ধাক্কা খাওয়ার পর ভারতের ব্যাটিং দুর্বলতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভায় ভয়াবহ ভূমিধস: অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু, বহু মানুষ নিখোঁজ একটি জাজমেন্ট ও কিছু সমস্যা মুহুরী নদী: একটি আন্তঃসীমান্ত নদীর গল্প — উৎস, জীবন ও চিরস্থায়ী সংকট মার্কিন-দক্ষিণ কোরিয়া বাণিজ্য চুক্তির পর দেশে বড় বিনিয়োগ ঘোষণা স্যামসাং ও হিউন্দাইয়ের চীন সফরে জার্মান অর্থমন্ত্রী: বাণিজ্য ঘাটতি, রেয়ার আর্থ সংকট ও ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েনে নতুন উত্তেজনা

বিশাল উলি ম্যামথ ‘ইউকা’র জমাট দেহে চমকপ্রদ আবিষ্কার

সাইবেরিয়ার জমাট বাঁধা টুন্ড্রায় পাওয়া উলি ম্যামথ ‘ইউকা’ বিজ্ঞানীদের সামনে খুলে দিয়েছে অতীত প্রাণজগতের নতুন দরজা। সাধারণ ধারণা ছিল, অত্যন্ত ভঙ্গুর RNA দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু ৩৯ হাজার বছর পুরোনো এই ম্যামথের দেহ থেকে RNA শনাক্ত হওয়ায় সেই ধারণা বদলে গেছে।

RNA বিশ্লেষণে ম্যামথ সম্পর্কে নতুন তথ্য

ইউকা নামের ম্যামথটিকে আগে স্ত্রী বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু RNA বিশ্লেষণে দেখা যায়—তার দেহে Y ক্রোমোজোমের জিন ছিল। অর্থাৎ সে ছিল পুরুষ ম্যামথ।
বিজ্ঞানীরা ইউকার পেশি টিস্যু থেকে লাখ লাখ RNA-খণ্ড উদ্ধার করেন। এই খণ্ডগুলো জানায় কোন জিনগুলো সক্রিয় ছিল এবং কীভাবে তার পেশি কাজ করত।

জীবনের শেষ মুহূর্ত সম্পর্কে ইঙ্গিত

RNA–তে পাওয়া সংকেত বলছে—ইউকার দেহে স্থায়ী শক্তি লাগে এমন ‘স্লো-টুইচ’ পেশির জিন সক্রিয় ছিল। আরও দেখা যায়, বিপাকজনিত চাপ (metabolic stress) সামলানোর জিনও সক্রিয় ছিল।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মৃত্যুর আগে ইউকা একটি গুহা সিংহের আক্রমণের শিকার হয়েছিল।

স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, “RNA দেখে মনে হয় ম্যামথটি হয়তো শিকারির হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল।”

Mammoth Yuka.

RNA কি সত্যিই এত ভঙ্গুর?

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল—RNA এত দ্রুত নষ্ট হয় যে প্রাচীন নমুনায় তা পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু ইউকার দেহে জমাট অবস্থায় থাকা টিস্যু সেই বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করেছে।

এই গবেষণা প্রাচীন প্রাণীর দেহে জিনের কার্যক্রম পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে। এমনকি হাজার বছর পুরোনো RNA ভাইরাস—যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস—খুঁজে পাওয়ার পথও খুলে দিয়েছে।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি: প্রাচীন DNA থেকে RNA–র দিকে

গত কয়েক দশকে প্রাচীন DNA গবেষণা ব্যাপকভাবে এগিয়েছে। নিয়ানডারথাল থেকে শুরু করে বরফ যুগের প্রাণী—সবকিছুর DNA সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে।
কিন্তু RNA–কে দীর্ঘদিন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

১৯৮০-এর দশকে পুরোনো বীজে RNA পাওয়া গেলেও তা গুরুত্ব পায়নি। ২০১৯ সালে ১৪,৩০০ বছর পুরোনো বরফে জমে থাকা এক নেকড়ের বাচ্চা থেকে RNA শনাক্ত হওয়ায় গবেষণায় নতুন গতি আসে।

সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গবেষকরা এবার ম্যামথের RNA সাফল্যের সঙ্গে উদ্ধার করেন।

Laboratory work inside the ultra-clean labs at the Centre for Palaeogenetics in Stockholm, where the ancient RNA was extracted.

গবেষণার প্রক্রিয়া

গবেষকেরা ১০টি ম্যামথের পেশি ও চামড়ার অতি ক্ষুদ্র টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করেন। দূষণ এড়াতে বিশেষ ‘ক্লিন রুম’-এ কাজ করা হয়।

তিনটি নমুনা থেকে RNA পাওয়া যায়—সবচেয়ে বেশি তথ্য দেয় ইউকার নমুনা।

RNA–র খণ্ডে Y ক্রোমোজোমের জিন ধরা পড়ায় ইউকার লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

RNA সংরক্ষণ সম্ভব—সঠিক পরিবেশে

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের ধারণা ভুল ছিল না—RNA সত্যিই ভঙ্গুর। তবে অত্যন্ত ঠান্ডা বা ফ্রিজ-ড্রাই পরিবেশে দেহ জমে গেলে RNA টিকে থাকতে পারে।
গবেষকেরা মনে করেন, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও পুরোনো RNA ভবিষ্যতে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যৎ গবেষণার সম্ভাবনা

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের জন্য একটি পদ্ধতিগত গাইড হিসেবে কাজ করবে।

RNA বিশ্লেষণ শুধু প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী নয়—মধ্যযুগীয় জীবাশ্ম বা অতীত মানবদেহেরও জৈবিক কার্যক্রম বোঝার সুযোগ দেবে।

RNA সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা বদলে যাওয়ায় গবেষকেরা আশাবাদী—ভবিষ্যতে আরও বহু প্রাচীন জীবের কোষীয় কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাবে।

 

# বিজ্ঞান আবিষ্কার ম্যামথ গবেষণা RNA প্রাগৈতিহাসিক-জীবন TheWashingtonPost

জনপ্রিয় সংবাদ

শেখ হাসিনার রায়: ধানমন্ডি ৩২–এ উত্তেজনা, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ

বিশাল উলি ম্যামথ ‘ইউকা’র জমাট দেহে চমকপ্রদ আবিষ্কার

০৫:৩১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

সাইবেরিয়ার জমাট বাঁধা টুন্ড্রায় পাওয়া উলি ম্যামথ ‘ইউকা’ বিজ্ঞানীদের সামনে খুলে দিয়েছে অতীত প্রাণজগতের নতুন দরজা। সাধারণ ধারণা ছিল, অত্যন্ত ভঙ্গুর RNA দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু ৩৯ হাজার বছর পুরোনো এই ম্যামথের দেহ থেকে RNA শনাক্ত হওয়ায় সেই ধারণা বদলে গেছে।

RNA বিশ্লেষণে ম্যামথ সম্পর্কে নতুন তথ্য

ইউকা নামের ম্যামথটিকে আগে স্ত্রী বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু RNA বিশ্লেষণে দেখা যায়—তার দেহে Y ক্রোমোজোমের জিন ছিল। অর্থাৎ সে ছিল পুরুষ ম্যামথ।
বিজ্ঞানীরা ইউকার পেশি টিস্যু থেকে লাখ লাখ RNA-খণ্ড উদ্ধার করেন। এই খণ্ডগুলো জানায় কোন জিনগুলো সক্রিয় ছিল এবং কীভাবে তার পেশি কাজ করত।

জীবনের শেষ মুহূর্ত সম্পর্কে ইঙ্গিত

RNA–তে পাওয়া সংকেত বলছে—ইউকার দেহে স্থায়ী শক্তি লাগে এমন ‘স্লো-টুইচ’ পেশির জিন সক্রিয় ছিল। আরও দেখা যায়, বিপাকজনিত চাপ (metabolic stress) সামলানোর জিনও সক্রিয় ছিল।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, মৃত্যুর আগে ইউকা একটি গুহা সিংহের আক্রমণের শিকার হয়েছিল।

স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মার্ক ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, “RNA দেখে মনে হয় ম্যামথটি হয়তো শিকারির হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল।”

Mammoth Yuka.

RNA কি সত্যিই এত ভঙ্গুর?

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস ছিল—RNA এত দ্রুত নষ্ট হয় যে প্রাচীন নমুনায় তা পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু ইউকার দেহে জমাট অবস্থায় থাকা টিস্যু সেই বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করেছে।

এই গবেষণা প্রাচীন প্রাণীর দেহে জিনের কার্যক্রম পুনর্গঠনের সুযোগ তৈরি করেছে। এমনকি হাজার বছর পুরোনো RNA ভাইরাস—যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস—খুঁজে পাওয়ার পথও খুলে দিয়েছে।

বিজ্ঞানের অগ্রগতি: প্রাচীন DNA থেকে RNA–র দিকে

গত কয়েক দশকে প্রাচীন DNA গবেষণা ব্যাপকভাবে এগিয়েছে। নিয়ানডারথাল থেকে শুরু করে বরফ যুগের প্রাণী—সবকিছুর DNA সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে।
কিন্তু RNA–কে দীর্ঘদিন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

১৯৮০-এর দশকে পুরোনো বীজে RNA পাওয়া গেলেও তা গুরুত্ব পায়নি। ২০১৯ সালে ১৪,৩০০ বছর পুরোনো বরফে জমে থাকা এক নেকড়ের বাচ্চা থেকে RNA শনাক্ত হওয়ায় গবেষণায় নতুন গতি আসে।

সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গবেষকরা এবার ম্যামথের RNA সাফল্যের সঙ্গে উদ্ধার করেন।

Laboratory work inside the ultra-clean labs at the Centre for Palaeogenetics in Stockholm, where the ancient RNA was extracted.

গবেষণার প্রক্রিয়া

গবেষকেরা ১০টি ম্যামথের পেশি ও চামড়ার অতি ক্ষুদ্র টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করেন। দূষণ এড়াতে বিশেষ ‘ক্লিন রুম’-এ কাজ করা হয়।

তিনটি নমুনা থেকে RNA পাওয়া যায়—সবচেয়ে বেশি তথ্য দেয় ইউকার নমুনা।

RNA–র খণ্ডে Y ক্রোমোজোমের জিন ধরা পড়ায় ইউকার লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ করা সম্ভব হয়।

RNA সংরক্ষণ সম্ভব—সঠিক পরিবেশে

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের ধারণা ভুল ছিল না—RNA সত্যিই ভঙ্গুর। তবে অত্যন্ত ঠান্ডা বা ফ্রিজ-ড্রাই পরিবেশে দেহ জমে গেলে RNA টিকে থাকতে পারে।
গবেষকেরা মনে করেন, আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও পুরোনো RNA ভবিষ্যতে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

ভবিষ্যৎ গবেষণার সম্ভাবনা

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের জন্য একটি পদ্ধতিগত গাইড হিসেবে কাজ করবে।

RNA বিশ্লেষণ শুধু প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী নয়—মধ্যযুগীয় জীবাশ্ম বা অতীত মানবদেহেরও জৈবিক কার্যক্রম বোঝার সুযোগ দেবে।

RNA সংরক্ষণ সম্পর্কে ধারণা বদলে যাওয়ায় গবেষকেরা আশাবাদী—ভবিষ্যতে আরও বহু প্রাচীন জীবের কোষীয় কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যাবে।

 

# বিজ্ঞান আবিষ্কার ম্যামথ গবেষণা RNA প্রাগৈতিহাসিক-জীবন TheWashingtonPost