নিনটেন্ডো সুইচ ২ এখন পর্যন্ত ইতিহাসের দ্রুততম বিক্রিত গেম কনসোল। এটি সনি প্লেস্টেশন ৫–কে পিছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়েছে। নিনটেন্ডোর সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র চার মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়েছে।
এটি আগের সুইচের তুলনায় দ্বিগুণ গতি। সনি প্লেস্টেশন ৫–এর ১ কোটি ইউনিট বিক্রিতে যেখানে আট মাস লেগেছিল, সুইচ ২ সেই মাইলফলক অতিক্রম করেছে কম সময়েই। ফলে নিনটেন্ডো ২০২৬ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৯০ লাখ ইউনিট করেছে। এদিকে পুরনো সুইচ এখনো বিক্রি হচ্ছে এবং নিনটেন্ডো ডিএস–এর ১৫ কোটি ৪০ লাখ ইউনিটের সর্বকালের বিক্রির রেকর্ড ছাড়ানোর মাত্র ১০ হাজার ইউনিট দূরে রয়েছে।
আমি পূর্বে লিখেছিলাম যে নিনটেন্ডোর পক্ষে সুইচের সাফল্য আবারও অর্জন করা কঠিন হবে, তবে কোম্পানিটি বহুবার সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করেছে। সুইচ ২–এর শক্তিশালী শুরুর ভিত্তিতে মনে হচ্ছে পূর্বাভাসটি সঠিক ছিল। তবে আসল পরীক্ষা হলো এই গতি ধরে রাখা।
৪৫০ ডলারে বাজারে আসা সুইচ ২ নিনটেন্ডোর ইতিহাসে সবচেয়ে দামী কনসোল। উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের সময়ে এমন মূল্য অনেককেই উদ্বিগ্ন করেছিল। এক্সক্লুসিভ গেম যেমন Donkey Kong Bonanza–ও ৬৯ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। তবুও বিশাল বিক্রি দেখাচ্ছে যে দাম ক্রেতাদের হতাশ করেনি। মারিও কার্ট ওয়ার্ল্ডের মতো লঞ্চ টাইটেলের বিক্রিও অত্যন্ত ভালো, যা প্রায়ই কনসোলের সাথে বান্ডলে বিক্রি হয়।
এখনো উৎসব মৌসুম শুরু হয়নি, যেখানে বড়দিন গেমিং শিল্পের সবচেয়ে বড় বিক্রির সময়। আর নতুন প্রকাশিত Pokémon Legends: Z-A—যা ১৬ অক্টোবর বাজারে এসেছে—এর বিক্রির প্রভাবও এখনো হিসাব করা হয়নি। ২০২৫ সালের শেষভাগে নিনটেন্ডো অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে আছে। পাশাপাশি টেক-টু ইন্টারঅ্যাকটিভ ঘোষণা করেছে যে GTA VI মুক্তি পিছিয়ে ১৯ নভেম্বর ২০২৬–এ নেওয়া হয়েছে। ফলে নিনটেন্ডোর সামনে আগামী বছরও বাজার “দখল” করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। মনে হয় বিক্রির পূর্বাভাসে তারা হয়তো খুব বেশি রক্ষণশীল ছিল।
শিল্পের পরিস্থিতিও বদলে গেছে। এটি প্রথম কনসোল প্রজন্ম, যেখানে এক্সবক্স সিরিজ এক্স ও প্লেস্টেশন ৫–এর বয়স বাড়লেও তাদের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। আগে কনসোলের দাম কমত কারণ চিপসেট ও যন্ত্রাংশ উৎপাদন খরচ সময়ের সাথে কমতো। এখন সেই নিয়ম আর কার্যকর নেই। সনি ইন্টারঅ্যাকটিভ এন্টারটেইনমেন্টের গ্লোবাল মার্কেটিং–এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসাবেল তমাতিস জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পিএস৫–এর দাম ৫০ ডলার বাড়ানো হয়েছে “চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির” কারণে।

প্লেস্টেশন ৫ এবং এক্সবক্স সিরিজ কনসোলগুলো তাদের জীবনচক্রের শেষের দিকে। পিএস৬ এবং নতুন প্রজন্মের এক্সবক্স নিয়ে আলোচনা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। GTA VI–এর মুক্তি মূলত সনি ও মাইক্রোসফটের কনসোল বিক্রি স্থিতিশীল করার কথা ছিল। কিন্তু এটি ২০২৬ সালের শেষে ঠেলে দেওয়ায় সেই সম্ভাবনা কমেছে। অন্যদিকে নিনটেন্ডো ঠিক এখনই তাদের নতুন যাত্রা শুরু করছে।
নিনটেন্ডো তাদের “ইন্টারনাল গেম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন” শক্তিশালী করছে এবং গেম ডেভেলপমেন্ট স্টুডিও অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে। এর ফলে নিনটেন্ডো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো অনিয়মিত বড় গেম প্রকাশের সমস্যায় পড়বে না। আরও স্টুডিও যোগ হওয়ার মানে হলো আরও আইপি (ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি), আরও বৈচিত্র্য এবং ধারাবাহিক রিলিজ—যা বর্তমানে শিল্পের একীকরণের যুগে বড় শক্তি।
প্রথম সুইচের তুলনায় সুইচ ২ অনেক বেশি শক্তিশালী। এটি তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপারদের জন্য নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি প্রতিদ্বন্দ্বীদের কনসোলের মতো বিশাল রিসোর্স–নির্ভর নয়—যেখানে অনেক গেম তৈরিতে বিপুল খরচ ও দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।
যদি নিনটেন্ডো ২০২৩ সালের সফল The Super Mario Bros. Movie–এর মতো আরও ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারে—যা বিশ্বব্যাপী ১.৩৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে—তাহলে তা কোম্পানির মুনাফা আরও বাড়াবে। সাধারণত ভিডিও গেম থেকে তৈরি সিনেমা বা সিরিজ সংশ্লিষ্ট গেমের বিক্রি বাড়িয়ে দেয়। নিনটেন্ডো ইতিমধ্যেই সুপার মারিও সিনেমার সিক্যুয়েল বানাচ্ছে এবং তাদের জনপ্রিয় Zelda গেম সিরিজের ভিত্তিতে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে।
সুইচ ২ তার সময়ের সাথে বেশ মানানসই। কনসোলগুলো যখন ক্রমেই দামী হয়ে উঠছে, তখন ৪৫০ ডলারের মূল্য তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। সহজ ব্যবহারযোগ্যতা, বহনযোগ্যতা এবং সুবিধাজনক ডিজাইন—এসব বিষয় এখন শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের প্রতিযোগিতার চেয়েও বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। ভ্যালভের স্টিম ডেক, যা একই দামের একটি বহনযোগ্য কনসোল, এই প্রবণতাকে আরও স্পষ্ট করছে।
আকর্ষণীয় গেমগুলোর ধারাবাহিক প্রকাশ বজায় রাখা কঠিন, কিন্তু নিনটেন্ডো দৃঢ়ভাবে চেষ্টা করছে। সুইচ ২ তার পূর্বসূরির আশ্চর্যজনক সাফল্য পুনরাবৃত্তি করবে—এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে শুরুর পরিসংখ্যান একে অসাধারণ সম্ভাবনাময় করে তুলেছে। মারিও, পিকাচু–এর মতো আইকনসহ নিনটেন্ডো কনসোল বাজারে নিজস্ব এক অনন্য অবস্থান তৈরি করেছে—যেখানে মনে হয়, তাদের প্রতিযোগী আসলে নিজেরাই। শিশু হোক বা বড়—নিনটেন্ডো সবাইকে “ক্যাচ ‘এম অল’” করতে প্রস্তুত।
লু-হাই লিয়াং 


















