চীন দক্ষিণ চীন সাগরের ইয়ংশিং বা উডি দ্বীপে (চীনা নাম ইয়ংশিং দাও) ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ অভিযান শুরু করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য—বিতর্কিত অঞ্চলে বেইজিংয়ের ভূখণ্ড দাবি আরও দৃঢ় করা।
পারাসেল দ্বীপপুঞ্জে ইতিহাস সংরক্ষণের প্রচেষ্টা
হাইনান প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক নিদর্শন ও প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের একদল সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ ছয় দিন ধরে একটি ঐতিহাসিক স্মারক পুনর্গঠন করেছেন।
এই স্মারকটি চীনের পারাসেল দ্বীপপুঞ্জ (চীনে শিসা) দখল পুনরুদ্ধারের স্মরণে তৈরি—যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে কুওমিনতাং (কেএমটি) সরকারের নৌবাহিনী স্থাপন করে।
দ্বীপটির নাম দেওয়া হয় ছিল নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ ‘ইয়ংশিং’-এর নামে।
২০১২ সালে চীন এই দ্বীপে সানশা শহর প্রতিষ্ঠা করে, যা দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের সমস্ত প্রশাসনিক দাবি পরিচালনা করে।
বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ: বহু দেশের দাবি
উডি দ্বীপটি যে পারাসেল দ্বীপপুঞ্জের অংশ—ভিয়েতনাম ওই অঞ্চলকে ‘হোয়াং সা’ বলে দাবি করে।
স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জ (চীনা নাম ‘নানশা’) নিয়ে দাবি রয়েছে চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের।

ক্ষয়প্রাপ্ত স্মারকে পুনর্গঠন
সানশা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, চীনা বিশেষজ্ঞ দল স্মারকটিতে বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করে কাঠামোগত মেরামত করেছে।
লবণাক্ত বাতাস ও আর্দ্রতার কারণে স্মারকটির পৃষ্ঠতল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, যা পরিষ্কার ও মজবুত করা হয়েছে।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়—
“শিসা পুনরুদ্ধার স্মারক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর ওপর চীনের সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার সাক্ষ্য বহন করে।”
আরও বলা হয়, দ্বীপের অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপনাতেও একই ধরনের সংরক্ষণ কাজ করা হবে।
হাইনান ইনস্টিটিউটের প্রত্নতত্ত্ববিদ ঝাও ইউ জানান, দ্বীপের অনন্য আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে ভবিষ্যতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
দাবি জোরদারে বেইজিংয়ের সাংস্কৃতিক কৌশল
দক্ষিণ চীন সাগরে প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষণ বাড়িয়েছে চীন।
২০১৬ সালে হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল চীনের “ঐতিহাসিক অধিকার” দাবিকে বাতিল করেছিল—ফিলিপাইনের মামলার রায়ে। বেইজিং সেই সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে।
এর পর থেকেই চীন পানির নিচের প্রত্নতত্ত্বেও ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যাতে প্রমাণ করা যায়—দীর্ঘ ইতিহাসে চীনা জনগণের উপস্থিতি ছিল এই কৌশলগত জলপথে।

পানির নিচে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
২০২২ সালে উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীন তিনটি প্রাচীন বণিকজাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়।
৩,০০০ মিটার গভীরতা থেকে মৃৎপাত্র, চীনামাটি, তামার মুদ্রাসহ ৬০টির বেশি নিদর্শন উদ্ধার করা হয়।
২০২৩ সালে হাইনানে একটি আন্ডারওয়াটার প্রত্নতত্ত্ব কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়—যা স্প্রাটলি ও পারাসেল দ্বীপপুঞ্জ তত্ত্বাবধানকারী প্রদেশের অধীনে পরিচালিত হয়।
জাতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রশাসনের তৎকালীন প্রধান লি কুন জানান—
এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীনা ঐতিহ্য রক্ষা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও সামুদ্রিক অধিকার সংরক্ষণে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ঐতিহাসিক স্মারক পুনর্গঠন, পানির নিচে নিদর্শন উদ্ধার ও প্রত্নতাত্ত্বিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেইজিং তার দক্ষিণ চীন সাগর দাবি সুসংহত করতে চাইছে।
বিতর্কিত অঞ্চলে চীনের এই ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে আঞ্চলিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















