উইকেড–এর সিক্যুয়েল ‘উইকেড: ফর গুড’ প্রথম ছবির মতো উজ্জ্বল না হলেও দর্শকদের সামনে নতুন করে এক জাদুকরী দুনিয়া খুলে দেয়। গল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ছবির গতি বাড়ে, আর পরিচিত চরিত্রগুলোর আবেগঘন সম্পর্ক গল্পকে ধরে রাখে।
উপরের দিক থেকে ছবিতে দেখা যায় সিনথিয়া এরিভো ও আরিয়ানা গ্র্যান্ডে—দুজনের মনোমুগ্ধকর উপস্থিতি পুরো চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
গল্পের পটভূমি ও মূল কাঠামো
ছবিটি মূলত মিউজিক্যালের দ্বিতীয় অঙ্কের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। এখানে আমরা আবারও এমন সব ঘটনা দেখি যেগুলো বাস্তবে দেখা যায় না—কথা বলা সিংহ, উড়ন্ত বানর, এমনকি বন্ধুর দ্বারা বাগদত্তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরও ক্ষমা করে দেওয়া এক নারীর গল্প। তবে কিছু দৃশ্য টিনম্যানের জোড়া–লাগানো অংশের মতোই খানিকটা কঠিন লাগে।
প্রথম ছবির তুলনায় দুর্বলতা
ভক্তরা বরাবরই বলে আসছেন, নাটকের দ্বিতীয় অঙ্ক প্রথমটির তুলনায় দুর্বল। ছবিতেও সেই অনুভূতি স্পষ্ট। প্রথম ছবির সেরা গানগুলো—‘পপুলার’, ‘ডিফাইং গ্র্যাভিটি’—সবই ছিল প্রথম ভাগে। সেই সঙ্গে ছিল এলফাবা’র (সিনথিয়া এরিভো) অসাধারণ রূপান্তর—লাজুক মেয়ের থেকে আকাশে উড়ে বেড়ানো শক্তিশালী এক নারীতে পরিণত হওয়ার গল্প। সেই তুলনায় সিক্যুয়েল বড়সড় কিছু অর্জন করতে পারেনি।
তবে দুর্বলতা মানেই ব্যর্থতা নয়। ‘উইকেড: ফর গুড’–এও রয়েছে মনোমুগ্ধকর অনেক মুহূর্ত।
চমৎকার ভিজ্যুয়াল ও হৃদয়স্পর্শী বন্ধুত্ব
ছবিটির মূল শক্তি এর দৃষ্টিনন্দন প্রোডাকশন ডিজাইন, দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রের সম্পর্ক এবং কয়েকটি সুন্দর গান। বিশেষ করে ‘ফর গুড’ গানটি এলফাবা ও গ্লিন্ডা’র (আরিয়ানা গ্র্যান্ডে) বন্ধুত্বকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরে।
এলফাবা’র ঝাড়ুতে চড়ে আকাশে উড়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলো যেন কিশোরীদের জন্য ‘টপ গান’-এর মতো উত্তেজনা তৈরি করে। আকাশের মাঝে তার লাল আভাযুক্ত দুর্গের দৃশ্য কোনো কোনো সময়ে টিম বার্টনের সিনেমা বা জার্মান এক্সপ্রেশনিস্ট ফিল্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। নাথান ক্রাউলি ও পল টাজওয়েল—গত ছবির অস্কারজয়ী ডিজাইনারদ্বয়—এবারও তাদের সমস্ত সৃজনশীলতা ঢেলে দিয়েছেন।
চরিত্র ও অভিনয়
আরিয়ানা গ্র্যান্ডে’র গ্লিন্ডা চরিত্রে অভিনয় ছিল অনন্য। তুলোর মিছরির মতো নরম, বুদবুদের মতো ভাসমান, আবার অভিনয়ে খানিক ব্যঙ্গ—সব মিলিয়ে চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন তিনি।
অন্যদিকে সিনথিয়া এরিভো এলফাবা’র দুর্বলতা, রাগ, প্রতিবাদ—সবই চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
এলফাবা যখন আকাশে ধোঁয়ার সাহায্যে লেখেন “Our wizard lies”, তখন ওজের জাদুকরী মাদাম মরিব্ল (মিশেল ইয়ো) তা পাল্টে দেন “Oz dies”-এ। এটি মূলত ভুয়া তথ্য প্রচারের এক ব্যঙ্গাত্মক প্রতিফলন—আজকের পৃথিবীর মতোই।
সমাজ–রাজনীতির ইঙ্গিত
একদল প্রাণী ওজ ছেড়ে চলে যেতে চায় কারণ তাদের মনে হয় এই জায়গা আর তাদের জন্য নিরাপদ নয়—“আমরা আর থাকতে পারি না, জায়গাটা পচে গেছে”, বলে এক ভালুক। ছাগলটি হয়ে ওঠে ‘স্কেপগোট’ বা বলির পাঁঠা।
এই ধরনের ইঙ্গিত গল্পকে ভারী করে না, তবে ছবিতে একধরনের গম্ভীরতা তৈরি করে।
কিছু দুর্বল দিক
গল্পে কিছু অংশ খানিকটা ঢিলা—যেমন জোনাথন বেইলি’র ফিয়েরো চরিত্র আগের তুলনায় অনুজ্জ্বল, একটি বিব্রতকর প্রেমের দৃশ্য এবং সেই কুখ্যাত সংলাপ—“For the first time, I feel wicked.”
এছাড়া এলফাবা’র বোন নেসারোজ (মারিসা বোড) ও বক (ইথান স্লেটার)–এর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরিণতিও বেশ নাটকীয়।
ক্লাসিক চরিত্রগুলোর অপ্রয়োজনীয় উৎস–কাহিনি, দুটি নতুন গান—‘No Place Like Home’ ও ‘The Girl in the Bubble’—গল্পকে খুব বেশি এগিয়ে নিতে পারে না।
জাদুকর (জেফ গোল্ডব্লাম) ও এলফাবা’র ‘মহারণ’ও শেষ পর্যন্ত কথোপকথনেই সীমাবদ্ধ থাকে, যদিও তিনি পরিবেশন করা ‘Wonderful’ গানটি বেশ আকর্ষণীয়।

শেষার্ধের গতি ও শক্তিশালী সমাপ্তি
দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ছবিটি ধীরে ধীরে গতি ফিরে পায়। গল্পটি চমৎকারভাবে ১৯৩৯-এর ‘দ্য উইজার্ড অব ওজ’ চলচ্চিত্র ও ১৯০০ সালের এল. ফ্র্যাঙ্ক বাউমের উপন্যাসের সঙ্গে মিলেমিশে নতুন মোড় তৈরি করে।
শেষ দৃশ্যগুলো জন এম. চু’র দক্ষ পরিচালনায় সজোরে ধাবিত হয় উত্তেজনাপূর্ণ পরিসমাপ্তির দিকে, যেখানে ব্রডওয়ে সংস্করণের পোস্টারের সৃষ্টিশীল ইঙ্গিতও রয়েছে। পরিচালক জানেন গল্পটি কীভাবে শেষ করতে হয়—আর সত্যিই, বাড়ির মতো জায়গা আর কোথাও নেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















