০৪:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫
টেলিকম খাত পুনর্গঠনে গেজেট প্রকাশ, মধ্যস্বত্বভোগী লাইসেন্স বাতিল এবার বাইপাইলে ৩.৩ মাত্রার ভূমিকম্প নানা সমস্যা সত্ত্বেও বিজেপি কেন নীতীশ কুমারকেই আবারও মুখ্যমন্ত্রী করল? এএফআই লাইফ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন কমেডি তারকা এডি মারফি অস্থির সপ্তাহের পরও নতুন ধাক্কার শঙ্কায় বৈশ্বিক বাজার জলবায়ু গবেষণায় মার্কিন কাটছাঁটে বেসরকারি ‘পৃথিবী ডেটা’ ব্যবসার উত্থান মার্কিন শান্তি পরিকল্পনায় নতুন চাপে ইউক্রেন ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তেল খনন পরিকল্পনা ঘোষণা, তীব্র বিরোধিতায় রাজ্য সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে রিলায়েন্সের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ সিলিকন ভ্যালির বদলে যাওয়া বাস্তবতা ও অ্যান্টিট্রাস্টের দুর্বলতা

ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তেল খনন পরিকল্পনা ঘোষণা, তীব্র বিরোধিতায় রাজ্য সরকার

মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে নতুন করে অফশোর তেল খননের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে উপকূল সুরক্ষা নিয়ে লড়াই করা ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী ২০২৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ছয়টি লিজ বিক্রি করা হবে। প্রশাসনের দাবি, এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও জ্বালানি ক্ষেত্রে “আধিপত্যের” অবস্থানে নিয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ডগ বারগাম বলেন, বাইডেন প্রশাসন অফশোর লিজিং কার্যক্রম কমিয়ে দিয়ে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছিল, আর নতুন পরিকল্পনা কর্মসংস্থান ও উৎপাদন ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

সমালোচক ও চাহিদা-সংক্রান্ত বিতর্ক

তবে সমালোচকরা বলছেন, দেশের প্রয়োজনের তুলনায় ইতোমধ্যেই প্রচুর অফশোর এলাকা লিজ দেওয়া আছে যেগুলোর অনেকগুলো ব্যবহারই হচ্ছে না। নতুন সরবরাহেরও বিশেষ প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে বড় পরিসরে নতুন ড্রিলিং অবকাঠামো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে এমন টার্মিনাল, পাইপলাইন এবং সরঞ্জাম পরিবহনের সুবিধা নেই, যার ওপর বিশাল অফশোর রিগ নির্মাণ ও তেল পরিবহন নির্ভর করে। রাজ্য সরকারের কঠোর বিরোধিতা থাকায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া আরও কঠিন হবে। গভর্নর গ্যাভিন নিউজম আগেই এই পরিকল্পনাকে “ডেড অন অ্যারাইভাল” বলে মন্তব্য করেছেন।

Trump administration announces plan to drill oil off California and Florida

ফ্লোরিডা ও আলাস্কায় অতিরিক্ত খনন পরিকল্পনা

এই পরিকল্পনায় ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাপাশি ফ্লোরিডার পূর্ব উপসাগরীয় অঞ্চলেও ২০২৯ ও ২০৩০ সালে নতুন লিজ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। ফ্লোরিডার দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই আশঙ্কা করছে, নতুন ড্রিলিং শুরু হলে সামান্য তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও তাদের সমুদ্রতট ও পর্যটন শিল্পে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। একই সঙ্গে আলাস্কার বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে এবং আর্কটিক মহাসাগরের দূরবর্তী এলাকায় ২০টিরও বেশি লিজ বিক্রির প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত

তবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াকে ঘিরে। রাজ্যের নেতারা বলছেন, জাতীয়ভাবে নতুন তেল উত্তোলনের কোনো জরুরি প্রয়োজন নেই, বরং এটি পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ ও পর্যটনে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে “বিগ অয়েল” কোম্পানিগুলোর স্বার্থই রক্ষা করছেন এবং বৈজ্ঞানিক সতর্কতা উপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

আগের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস

Illustration shows United States Department of the Interior logo and U.S. flag

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরও ব্যাপক অফশোর ড্রিলিং পরিকল্পনা আনা হয়েছিল, যেখানে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলজুড়ে লিজ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, এমনকি ফ্লোরিডার কাছেও। কিন্তু রাজনীতিবিদ, পরিবেশবাদী সংগঠন, পর্যটন ব্যবসা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের তীব্র বিরোধিতায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। এবারকার পরিকল্পনায় ফ্লোরিডার বড় অংশ বাদ দেওয়া হলেও ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যাপক লিজ দেওয়ার প্রস্তাব থাকায় আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। নিউজম অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প নিজের ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টের কাছে ড্রিলিং নিষিদ্ধ রেখে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে রিগ বসাতে চাইছেন।

ইতিহাস: নিষেধাজ্ঞা, প্রত্যাহার এবং নতুন সিদ্ধান্ত

প্রশান্ত মহাসাগরে সর্বশেষ ফেডারেল তেল লিজ বিক্রি হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে ড্রিলিং নিষিদ্ধ করেন। পরে ২০০৮ সালে জর্জ ডব্লিউ. বুশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাস্তবে কোনো ড্রিলিং হয়নি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলসহ ৬২৫ মিলিয়ন একর ফেডারেল জলসীমাকে ড্রিলিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

তেল শিল্পের দাবি ও পরিবেশগত উদ্বেগ

তেল শিল্পের দাবি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্যমান অবকাঠামো নতুন সম্পদ উত্তোলনে সহায়ক হবে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ১৯৬৯ সালের সান্তা বারবারা তেল দূষণের ভয়াবহ স্মৃতি, যেখানে ৪.২ মিলিয়ন গ্যালন তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে ৮০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে আঠালো কালো স্তর তৈরি করেছিল। তাতে বহু পাখি ও সীল মারা যায়, পর্যটন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৎস্যশিকার বন্ধ হয়ে যায়।

Trump Officials Visit Key Operations At Alaska Oil Field Amid Push To  Expand Drilling

কংগ্রেসের বিরোধিতা

গত মাসে কংগ্রেসের ১০০ জনেরও বেশি সদস্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে এই পরিকল্পনা বাতিলের দাবি করেছেন। তাদের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশ, তবুও ২,০০০টিরও বেশি অফশোর লিজ থাকলেও কমপক্ষে ১,৫০০ লিজ কার্যক্রমহীন অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন লিজের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু আইন ও নীতিগত অসঙ্গতি

ক্যালিফোর্নিয়া আরও জানায়, তাদের আইন অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়াই নীতি—যা বিস্তৃত অফশোর ড্রিলিং পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ১৯৬৮ সালের পর থেকে রাজ্যের জলসীমায় কোনো নতুন লিজ দেওয়া হয়নি। ফলে ফেডারেল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গেলে বড় আইনি বাধার মুখে পড়বে।

এই পরিকল্পনা প্রকাশের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, উপকূলীয় অর্থনীতি ও রাজনীতির জটিল দ্বন্দ্ব আবারও সামনে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এগিয়ে যেতে চাইছে, আর ক্যালিফোর্নিয়া প্রতিরোধে প্রস্তুত—যা সামনে বড় আইনি ও রাজনৈতিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

টেলিকম খাত পুনর্গঠনে গেজেট প্রকাশ, মধ্যস্বত্বভোগী লাইসেন্স বাতিল

ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে তেল খনন পরিকল্পনা ঘোষণা, তীব্র বিরোধিতায় রাজ্য সরকার

০২:১৩:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫

মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে নতুন করে অফশোর তেল খননের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে উপকূল সুরক্ষা নিয়ে লড়াই করা ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে সরাসরি সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নতুন খসড়া অনুযায়ী ২০২৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ছয়টি লিজ বিক্রি করা হবে। প্রশাসনের দাবি, এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও জ্বালানি ক্ষেত্রে “আধিপত্যের” অবস্থানে নিয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী ডগ বারগাম বলেন, বাইডেন প্রশাসন অফশোর লিজিং কার্যক্রম কমিয়ে দিয়ে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছিল, আর নতুন পরিকল্পনা কর্মসংস্থান ও উৎপাদন ধরে রাখতে সহায়তা করবে।

সমালোচক ও চাহিদা-সংক্রান্ত বিতর্ক

তবে সমালোচকরা বলছেন, দেশের প্রয়োজনের তুলনায় ইতোমধ্যেই প্রচুর অফশোর এলাকা লিজ দেওয়া আছে যেগুলোর অনেকগুলো ব্যবহারই হচ্ছে না। নতুন সরবরাহেরও বিশেষ প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে বড় পরিসরে নতুন ড্রিলিং অবকাঠামো তৈরি করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে এমন টার্মিনাল, পাইপলাইন এবং সরঞ্জাম পরিবহনের সুবিধা নেই, যার ওপর বিশাল অফশোর রিগ নির্মাণ ও তেল পরিবহন নির্ভর করে। রাজ্য সরকারের কঠোর বিরোধিতা থাকায় নতুন অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া আরও কঠিন হবে। গভর্নর গ্যাভিন নিউজম আগেই এই পরিকল্পনাকে “ডেড অন অ্যারাইভাল” বলে মন্তব্য করেছেন।

Trump administration announces plan to drill oil off California and Florida

ফ্লোরিডা ও আলাস্কায় অতিরিক্ত খনন পরিকল্পনা

এই পরিকল্পনায় ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাপাশি ফ্লোরিডার পূর্ব উপসাগরীয় অঞ্চলেও ২০২৯ ও ২০৩০ সালে নতুন লিজ দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। ফ্লোরিডার দুই প্রধান রাজনৈতিক দলই আশঙ্কা করছে, নতুন ড্রিলিং শুরু হলে সামান্য তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাও তাদের সমুদ্রতট ও পর্যটন শিল্পে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। একই সঙ্গে আলাস্কার বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে এবং আর্কটিক মহাসাগরের দূরবর্তী এলাকায় ২০টিরও বেশি লিজ বিক্রির প্রস্তাব যুক্ত করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক সংঘাত

তবে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংঘাত তৈরি হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়াকে ঘিরে। রাজ্যের নেতারা বলছেন, জাতীয়ভাবে নতুন তেল উত্তোলনের কোনো জরুরি প্রয়োজন নেই, বরং এটি পরিবেশ, মৎস্যসম্পদ ও পর্যটনে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বোন্টা অভিযোগ করেন, ট্রাম্প নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে “বিগ অয়েল” কোম্পানিগুলোর স্বার্থই রক্ষা করছেন এবং বৈজ্ঞানিক সতর্কতা উপেক্ষা করছেন। তিনি আরও বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

আগের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার ইতিহাস

Illustration shows United States Department of the Interior logo and U.S. flag

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরও ব্যাপক অফশোর ড্রিলিং পরিকল্পনা আনা হয়েছিল, যেখানে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলজুড়ে লিজ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, এমনকি ফ্লোরিডার কাছেও। কিন্তু রাজনীতিবিদ, পরিবেশবাদী সংগঠন, পর্যটন ব্যবসা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের তীব্র বিরোধিতায় সেটি বাতিল হয়ে যায়। এবারকার পরিকল্পনায় ফ্লোরিডার বড় অংশ বাদ দেওয়া হলেও ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্যাপক লিজ দেওয়ার প্রস্তাব থাকায় আবারও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। নিউজম অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প নিজের ফ্লোরিডার মার-আ-লাগো রিসোর্টের কাছে ড্রিলিং নিষিদ্ধ রেখে ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে রিগ বসাতে চাইছেন।

ইতিহাস: নিষেধাজ্ঞা, প্রত্যাহার এবং নতুন সিদ্ধান্ত

প্রশান্ত মহাসাগরে সর্বশেষ ফেডারেল তেল লিজ বিক্রি হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ.ডব্লিউ. বুশ ক্যালিফোর্নিয়ার উপকূলে ড্রিলিং নিষিদ্ধ করেন। পরে ২০০৮ সালে জর্জ ডব্লিউ. বুশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাস্তবে কোনো ড্রিলিং হয়নি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহূর্তে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলসহ ৬২৫ মিলিয়ন একর ফেডারেল জলসীমাকে ড্রিলিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

তেল শিল্পের দাবি ও পরিবেশগত উদ্বেগ

তেল শিল্পের দাবি, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্যমান অবকাঠামো নতুন সম্পদ উত্তোলনে সহায়ক হবে। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ১৯৬৯ সালের সান্তা বারবারা তেল দূষণের ভয়াবহ স্মৃতি, যেখানে ৪.২ মিলিয়ন গ্যালন তেল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে ৮০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে আঠালো কালো স্তর তৈরি করেছিল। তাতে বহু পাখি ও সীল মারা যায়, পর্যটন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মৎস্যশিকার বন্ধ হয়ে যায়।

Trump Officials Visit Key Operations At Alaska Oil Field Amid Push To  Expand Drilling

কংগ্রেসের বিরোধিতা

গত মাসে কংগ্রেসের ১০০ জনেরও বেশি সদস্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে এই পরিকল্পনা বাতিলের দাবি করেছেন। তাদের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশ, তবুও ২,০০০টিরও বেশি অফশোর লিজ থাকলেও কমপক্ষে ১,৫০০ লিজ কার্যক্রমহীন অবস্থায় পড়ে আছে। নতুন লিজের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ক্যালিফোর্নিয়ার জলবায়ু আইন ও নীতিগত অসঙ্গতি

ক্যালিফোর্নিয়া আরও জানায়, তাদের আইন অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়াই নীতি—যা বিস্তৃত অফশোর ড্রিলিং পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ১৯৬৮ সালের পর থেকে রাজ্যের জলসীমায় কোনো নতুন লিজ দেওয়া হয়নি। ফলে ফেডারেল পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে গেলে বড় আইনি বাধার মুখে পড়বে।

এই পরিকল্পনা প্রকাশের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি নীতি, পরিবেশ সুরক্ষা, উপকূলীয় অর্থনীতি ও রাজনীতির জটিল দ্বন্দ্ব আবারও সামনে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এগিয়ে যেতে চাইছে, আর ক্যালিফোর্নিয়া প্রতিরোধে প্রস্তুত—যা সামনে বড় আইনি ও রাজনৈতিক সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।