স্ট্যান্ড-আপ থেকে হলিউড আইকন হয়ে ওঠার যাত্রা
স্ট্যান্ড-আপ কমেডি থেকে শুরু করে হলিউডের সর্বাধিক জনপ্রিয় তারকাদের এক জন হয়ে ওঠা—এডি মারফির সেই দীর্ঘ পথচলাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট। সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, আগামী বছর তিনি পাবেন তাদের ৫১তম লাইফ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। “স্যাটারডে নাইট লাইভ”–এ সাহসী স্কেচ কমেডি, “বেভারলি হিলস কপ”, “কামিং টু আমেরিকা” কিংবা “দ্য নাটি প্রফেসর”-এর মতো বক্স অফিস হিট—প্রায় পাঁচ দশকজুড়ে বিস্তৃত কাজের জন্যই তাকে এ সম্মান দেওয়া হচ্ছে। মেরিল স্ট্রিপ, টম হ্যাঙ্কস, মার্টিন স্করসেসি ও ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মতো কিংবদন্তিরা আগেও এই পুরস্কার পেয়েছেন; সেই তালিকাতেই নাম উঠছে মারফির। আগামী এপ্রিল মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে আয়োজিত তার সম্মাননা অনুষ্ঠানে অংশ নেবে হলিউডের অসংখ্য সহকর্মী ও ভক্ত।
শুধু দীর্ঘ ক্যারিয়ার নয়, সমকালীন সংস্কৃতিতে তার প্রভাবও এই স্বীকৃতির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ১৯৮০-এর দশকে তার স্ট্যান্ড-আপ স্পেশালগুলো মূলধারার আমেরিকান কমেডিকে নতুন ভাষা দিয়েছিল—তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ আর জাতি, খ্যাতি ও দৈনন্দিন জীবনের উপর তির্যক মন্তব্যের সাহসী মিশ্রণে। বড় পর্দায় একদিকে দ্রুত-বক্তা গোয়েন্দা, অন্যদিকে অ্যানিমেশন ছবিতে কথা বলা গাধা কিংবা একই ছবিতে একাধিক চরিত্রে অভিনয়—সব ক্ষেত্রেই উচ্চশক্তির অভিনয়শৈলী তাকে আলাদা করেছে। সেই সঙ্গে তিনি প্রথম দিককার কৃষ্ণাঙ্গ তারকাদের একজন, যিনি ব্লকবাস্টার ছবির সমান পারিশ্রমিক পেয়েছেন; অনেকের মতে, এর ফলে পরবর্তী প্রজন্মের কৃষ্ণাঙ্গ কৌতুকাভিনেতা ও অভিনেতাদের জন্যও দরজা খুলেছে। এএফআই বোর্ডের চেয়ার ক্যাথলিন কেনেডি তাকে “আমেরিকান আইকন” আখ্যা দিয়ে বলেছেন, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও স্ট্যান্ড-আপে তার কাজ আজও বিশ্বজুড়ে শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করে।

প্রজন্মজুড়ে টান ও নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনা
সাম্প্রতিক কাজগুলো প্রমাণ করছে, মারফি কেবল নস্টালজিয়ার নাম হয়ে যাননি। তিনি আবারও স্ট্যান্ড-আপে ফিরেছেন, প্রিয় চরিত্রগুলোকে নতুন করে পর্দায় এনেছেন এবং কিছু বেশি পরিণতধর্মী চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। ২০২৫ সালে নির্মিত এক প্রামাণ্যধর্মী স্ট্রিমিং প্রজেক্ট তার জীবন ও সৃজনশীল যাত্রাকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরেছে, যারা তাকে একই সঙ্গে মিম-সংস্কৃতি, অ্যানিমেটেড কণ্ঠদানের চরিত্র ও পুরোনো অ্যাকশন-কমেডির মাধ্যমে চেনে। শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, বক্স অফিস ইতিহাসের সঙ্গেই তার চলমান প্রাসঙ্গিকতার মিলনই এখন তাকে এই স্বীকৃতির স্বাভাবিক দাবিদার করেছে—বিশেষ করে এমন সময়ে যখন হলিউড প্রতিনিধিত্ব, স্ট্রিমিং অর্থনীতি এবং কমেডির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবছে।
এ পুরস্কার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করছে। মারফি হচ্ছেন মাত্র চতুর্থ কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী, যিনি এএফআই লাইফ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন; এর আগে এই তালিকায় ছিলেন সিডনি পয়তিয়ার, মর্গান ফ্রিম্যান ও ডেনজেল ওয়াশিংটন। অনেকে আশা করছেন, তাকে ঘিরে আয়োজিত উচ্চপ্রোফাইল এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হলিউডের কমেডি শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পী, লেখক ও পরিচালকের অবদানও নতুন করে আলোচনায় আসবে। অনেকেই মনে করছেন, এই সম্মাননার সুযোগকে ঘিরে নতুন করে ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও সাজানো হবে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো মারফির জনপ্রিয় ছবি ও শোর বিশেষ তালিকা প্রকাশ, নতুন ডকু-সিরিজ বা স্পেশাল আনার কথা ভাবছে; স্টুডিওগুলোও পরিবারকেন্দ্রিক কমেডি বা নস্টালজিয়া ঘরানার প্রকল্পে তাকে নিয়ে আলোচনায় রয়েছে। তাদের যুক্তি, আজকের তরুণ দর্শক যেমন অনলাইনে ভাইরাল ক্লিপের মাধ্যমে মারফিকে আবিষ্কার করছে, তেমনি অনেক বয়স্ক ভক্ত আছেন যারা তার পুরোনো ছবিগুলো আবার বড় পর্দা বা স্ট্রিমিংয়ে দেখতে চান। প্রজন্মজুড়ে এই টানই এমন এক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ, যখন ফ্র্যাঞ্চাইজ ক্লান্তি ও পরিবর্তিত দেখার অভ্যাসের কারণে হলিউডকে নতুন ধরনের তারকাখ্যাতি ও গল্প-ভিত্তিক আকর্ষণ খুঁজে বের করতে হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















