হাল্টার-নেক বাতিক প্রিন্টের পোশাকে যখন নোয়েল কান উপস্থিত হন, তখন সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কারণ এটি শুধু একটি পোশাক নয়—এটি তার নিজের ফ্যাশন লেবেল ‘কানু’-র নকশা। ঐতিহ্যবাহী বাতিক কাপড় যখন আধুনিক কাটে তৈরি হয়, তখন তা নতুন প্রজন্মের রুচির সঙ্গে মিশে ভিন্ন মাত্রা পায়।
কান বিশ্বাস করেন, বাতিকের সৌন্দর্য সময়ের সীমায় বাঁধা নয়। এই কাপড়ের বহুমুখী ব্যবহারের সুযোগ এবং অসামান্য স্টাইলিং ক্ষমতাই তাকে বাতিক-ভিত্তিক ফ্যাশন লেবেল শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
শৈশব থেকে শুরু হওয়া সৃজনশীল যাত্রা
কানের পরিবারে সৃজনশীলতার প্রভাব ছিল বরাবরই প্রবল। তার বাবা একজন স্থপতি—সেখান থেকেই তিনি নকশা ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ক্ষমতা পেয়েছেন। ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে যাওয়া, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা—এসবই তাকে ডিজাইনের পথে এগিয়ে দিয়েছে।
জোহরে জন্মানো কানের দুই ভাইবোন স্থাপত্য পড়লেও তিনি প্রথমে বিজ্ঞান পড়তে অস্ট্রেলিয়া যান, কারণ তিনি জীববিজ্ঞানে দক্ষ ছিলেন। পরিকল্পনা ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক পেশায় প্রবেশ করবেন, কিন্তু তার মনের টান ছিল ফ্যাশনের দিকে।
অস্ট্রেলিয়ায় পড়ার সময় তিনি একটি সেলাই মেশিন কেনেন এবং নিজে নিজে সেলাই শেখেন। পরে সাহস করে বাবাকে জানান যে তিনি ফ্যাশনেই ক্যারিয়ার করতে চান—এবং আশ্চর্যের বিষয়, বাবা তাকে সম্পূর্ণ সমর্থন দেন।

১৩ বছর বয়স থেকেই তিনি পোশাকের রঙ মিলিয়ে পরতেন এবং নকশা আঁকতেন। কিন্তু চারপাশ থেকে বারবার শুনতেন—ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ ততটা স্থায়ী নয়।
অবশেষে তিনি বিজ্ঞান ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ার একটি ফ্যাশন স্কুলে ভর্তি হন—যা তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। পরবর্তীতে তিনি ইতালিতেও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
আধ্যাত্মিক বিরতির পর নতুনভাবে শুরু
ইতালি থেকে ফিরে তিনি কিছুটা দ্বিধায় ছিলেন, কীভাবে ক্যারিয়ার শুরু করবেন। ঠিক তখনই তিনি খ্রিস্টান মিশনারি কাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে ফিলিপাইনের এক দ্বীপে কয়েক বছর শিশুদের পড়িয়েছেন।
সেই সময়ই তার পাস্টর তাকে মনে করিয়ে দেন—তার প্রতিভা লুকিয়ে রাখা উচিত নয়। তার উচিত নিজের স্বপ্নকে অনুসরণ করা।
এ থেকেই ২০১৬ সালে কানের ‘কানু’ ব্র্যান্ডের জন্ম।
বাতিককে নতুনভাবে দেখা
কান প্রশ্ন তুললেন—ফ্যাশনে আমরা কেন সবসময় পশ্চিমা অনুপ্রেরণার দিকে তাকাই? কেন আমরা নিজেদের সংস্কৃতির সৌন্দর্যকে নতুনভাবে তুলে ধরি না?
তার মতে, বাতিক অনন্য—এতে রয়েছে ঐতিহ্যের গভীরতা এবং আধুনিক নকশার সম্ভাবনা।
বাতিককে আধুনিক করা মানে এর শিকড়কে উপেক্ষা করা নয়; বরং সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। কিমোনো টপ, আধুনিক ড্রেস, কিংবা তরুণদের জন্য ট্রেন্ডি অ্যাকসেসরিজ—এসবই বাতিককে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।

কারিগরদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় কানুর পোশাক
কান কাজ করেন কেলান্তান ও তেরেঙ্গানুর বাতিক কারিগরদের সঙ্গে। তাদের হাতে তৈরি কাপড় নিয়ে তিনি তৈরি করেন সমসাময়িক ফ্যাশন। এই যাত্রায় তিনি নতুন করে উপলব্ধি করেছেন—বাতিক শুধুই কাপড় নয়, এটি ঐতিহ্য, দক্ষতা এবং কৃষ্টি।
তার ভাষায়—এটি আমাদের সংস্কৃতিকে ধারণ করার সুযোগ এবং সেই সৌন্দর্য বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পথ।
#tags #fashion #batik #Malaysia #Kanoe
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















