কোম্পানির মধ্যে যখন প্রাথমিক মূল্যবোধ ও উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়, তখন তা পুনরায় খুঁজে বের করার প্রক্রিয়াকে ‘রিফাউন্ডিং’ বলা হয়। এটি এমন একটি ধারণা যেখানে কোম্পানি তার মৌলিক চরিত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে।
নতুন সিইওদের দায়িত্বে পরিবর্তন
২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, নাইকির নতুন সিইও এলিয়ট হিল তার কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে প্রথম উপস্থাপনা দেন। উপস্থাপনার প্রথম স্লাইডে তিনি দুইটি বিষয় উল্লেখ করেন। একটি হলো, নাইকি একটি ক্রীড়া কোম্পানি, এবং দ্বিতীয়টি হলো, নাইকি তার ক্রীড়া সংক্রান্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। হিল মনে করেন, নাইকির জন্য সফলতার রহস্য ছিল ক্রীড়াবিদদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, যা তিনি তার কোম্পানির নতুন দিকনির্দেশনায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
ঠিক একই সময়, স্টারবাক্সের নতুন সিইও ব্রায়ান নিকলও কোম্পানির দিকনির্দেশনা পরিবর্তন করতে চেষ্টা করছিলেন। তিনি তার প্রথম সপ্তাহে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করে জানান যে তিনি ‘স্টারবাক্সে ফিরে আসতে চান’। তিনি উল্লেখ করেন, “আমরা আমাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়েছি।” তার লক্ষ্য ছিল স্টারবাক্সকে আরও কমার্শিয়াল না করে, একটি এমন জায়গায় পরিণত করা যেখানে মানুষ একসাথে সময় কাটাতে আসবে এবং দীর্ঘসময় থাকবে।
রিফাউন্ডিং: একটি পরিচিত কৌশল
“রিফাউন্ডিং” একটি পরিচিত কৌশল যেখানে কোম্পানি তার মৌলিক দর্শন ও কৌশলকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। ইয়েল স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের জন ইওয়াতা বলেন, কিছু সিদ্ধান্ত যেমন নতুন বাজারে প্রবেশ করা বা নতুন পণ্য চালু করা যৌক্তিক হতে পারে, কিন্তু এই ধরনের সিদ্ধান্তগুলো কোম্পানিকে পথভ্রষ্ট করতে পারে।
অনেক সময়, রিফাউন্ডারেরা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হয়, যেমন স্টিভ জবস যখন ১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ফিরেছিলেন, তখন তিনি দেখেছিলেন যে কোম্পানি মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকভাবে করছে না। তিনি কোম্পানির পণ্যের পরিসর সীমিত করেছিলেন।

নতুন মুখ ও পুরোনো মূল্যবোধ
অনেক সময় রিফাউন্ডাররা নতুন মুখ হয়, যেমন নাইকির এলিয়ট হিল ও স্টারবাক্সের ব্রায়ান নিকল। তারা পুরোনো মূল্যবোধে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একইভাবে, বোয়িংয়ের নতুন সিইও কেলি অর্টবার্গও কোম্পানির প্রকৌশলিক উৎকর্ষতা পুনরুদ্ধার করতে চেষ্টা করছেন।
কোম্পানির উন্নতি ও উন্নয়নের মাঝে ভারসাম্য
কোম্পানির সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র গতির দিকে মনোনিবেশ করা যথেষ্ট নয়। বরং, কোম্পানির মৌলিক চরিত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে বৃদ্ধি অর্জন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, নেটফ্লিক্স তার ডিভিডি বিতরণ বন্ধ করলেও, এটি কেবলমাত্র ছবির বিতরণ মাধ্যম হিসেবে তাকে সীমাবদ্ধ করেনি।
ইয়াওটা বলেন, “কোম্পানির চরিত্র” হলো একটি স্থিতিশীল প্রয়োজন এবং একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সক্ষমতার মিশ্রণ। যেমন ডিজনি তার গ্রাহকদের দীর্ঘস্থায়ী প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য অনন্য পদ্ধতিতে বিশ্ব সৃষ্টির সক্ষমতা অর্জন করেছে।
রিফাউন্ডিংয়ের গুরুত্ব
কিছু কোম্পানি তাদের মূলসূত্র থেকে সরে যাওয়ার মাধ্যমে সফল হয়েছে, যেমন স্যামসাং যখন নুডলস বিক্রি করত, কিন্তু এখন আর তা করছে না। তবে একটি কোম্পানির অঙ্গীকারের প্রতি পুনরুদ্ধার এবং তাকে সম্মান জানানো বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
এটি একটি ধারণা যা সিইওদের মনে রাখা উচিত—কখনও ক্ষতি হয় না যদি কোম্পানির সাফল্য ও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা হয় এবং বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সেই সূত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
#রিফাউন্ডিং #কোম্পানির_পুনর্গঠন #সিইও_পরিবর্তন #কৌশল #বিক্রির_ধারণা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















