পরিচয়: ভুলে যাওয়া এক অধ্যায়কে পর্দায় ফিরিয়ে আনা
‘সাকসেশন’ সিরিজে টম ওয়্যাম্বসগ্যান্স চরিত্রে অভিনয়ের দুই বছরের বেশি সময় পর ম্যাথিউ ম্যাকফ্যাডিয়েন আবার পৌঁছালেন নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এলাকায়। এবার আর কোনো টিভি নেটওয়ার্কের দপ্তরে নয়—বরং নিউজউইকের সাক্ষাৎকার দিতে। তাঁর নতুন সিরিজ ‘ডেথ বাই লাইটনিং’-এ তিনি অভিনয় করেছেন চার্লস গুইতো চরিত্রে—যিনি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ডের ঘাতক।
গুইতো চরিত্রটি ‘সাকসেশন’-এর পরিপাটি কর্পোরেট নির্বাহী টমের থেকে একেবারেই আলাদা। দীর্ঘ দাড়ি, অস্থির মানসিকতা, আর্থিক সমস্যা—সব মিলিয়ে তিনি ছিলেন অগোছালো এক মানুষ। তবে দুই চরিত্রের মধ্যেই আছে এক সাধারণ সূত্র—ক্ষমতার কাছে পৌঁছতে মরিয়া ‘বহিরাগত’ মানসিকতা। ম্যাকফ্যাডিয়েনের ব্যক্তিত্বের ঠিক বিপরীত।
চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা
ম্যাকফ্যাডিয়েন বলেন, নিজস্ব স্বভাবের বিপরীত চরিত্রে অভিনয় করা তাঁর কাছে মুক্তির মতো। বিশেষত আমেরিকান উচ্চারণ ও ভাষার ছন্দে অভিনয় করতে তাঁর বিশেষ ভালো লাগে, কারণ এতে আলাদা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
‘ডেথ বাই লাইটনিং’ মাইক মাকাওস্কির তৈরি চার পর্বের একটি ঐতিহাসিক ড্রামা। এটি ক্যান্ডিস মিলার্ডের জনপ্রিয় বই ‘ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক’ অবলম্বনে নির্মিত। এতে ম্যাকফ্যাডিয়েনের সঙ্গে অভিনয় করেছেন মাইকেল শ্যানন, নিক অফারম্যান, বেটি গিলপিন ও শে হুইঘ্যাম।
বাস্তব ঘটনার সঙ্গে অস্বস্তিকর মিল
শুটিং শুরু হয় ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। কয়েক দিনের মধ্যেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ার একটি সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হন—গোলাটি তাঁর কানে ছুঁয়ে যায়। পরে আবার সেপ্টেম্বর মাসে ফ্লোরিডায় আরেক সম্ভাব্য হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়।
ম্যাকফ্যাডিয়েন বলেন, এসব ঘটনা তাঁদের কাজকে আরও জরুরি ও অর্থবহ মনে করিয়ে দেয়—কারণ ইতিহাস যেমন পুনরাবৃত্ত হয়, তেমনই আবারও মনে করিয়ে দেয় রাজনৈতিক সহিংসতা কতটা বাস্তব।

হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস
গারফিল্ড যুক্তরাষ্ট্রের ২০তম প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তাঁর হত্যাকাণ্ড আমেরিকার স্মৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে—গৃহযুদ্ধের পর ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে সময়ের ফাঁকে এই ঘটনা অনেকেরই অজানা। ম্যাকফ্যাডিয়েন স্বীকার করেন, তিনি নিজেও এই ইতিহাস সম্পর্কে আগে কিছুই জানতেন না।
গারফিল্ড ছিলেন সত্যিকারের এক সৎ রাষ্ট্রনায়ক—দলের ভেতরের পক্ষপাত, ঘুষ ও ক্ষমতার লোভকে তিনি দূরে রাখতে চাইতেন। দলীয় বিভাজন কমাতে চাইতেন। কিন্তু মানুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের প্রবণতাই তাঁর জীবন কেড়ে নেয়।
গুইতোর মানসিক অবস্থা ও উদ্দেশ্য
সিরিজে দেখা যায়—গুইতো ছিলেন মানসিক অসুস্থতায় ভোগা এক অস্থির মানুষ। নানা চাকরিতে ব্যর্থ, কোনো কাজেই স্থায়ী হতে পারেননি। একটি প্রেমের কমিউনিটি থেকেও তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।
তিনি বিশ্বাস করতেন, গারফিল্ড তাঁকে রাষ্ট্রদূতের পদ দেবেন। পদ না পেয়ে তিনি কেনা রিভলভার দিয়ে ২ জুলাই ১৮৮১ সালে ওয়াশিংটনের এক রেলস্টেশনে প্রেসিডেন্টকে গুলি করেন।
গুইতোর দাবি—এটি তিনি করেন দেশের ও দলের মঙ্গলের জন্য। এমনকি জেল থেকে লেখা তাঁর একটি কবিতায় তিনি বলেন, গারফিল্ডের মৃত্যু ছিল ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা।’
ম্যাকফ্যাডিয়েন মনে করেন, গুইতো ছিলেন একদিকে বিভ্রান্ত, অন্যদিকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকও নন। তিনি সত্যিই বিশ্বাস করতেন যে তিনি গারফিল্ডকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করেছেন।
১১ সপ্তাহ পর গারফিল্ড মারা যান। ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার প্রেসিডেন্ট হন।
আমেরিকান রাজনীতির স্থায়ী সংকট
গারফিল্ডের অস্বাভাবিক উত্থান, দলীয় দ্বন্দ্ব, গোপন চুক্তিগুলো দেখে ম্যাকফ্যাডিয়েন মনে করেন—এক শ বছর পরও আমেরিকার রাজনীতিতে কিছুই বদলায়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনো একই রকম।
এ ঘটনা তাঁকে মনে করিয়ে দেয়—আমেরিকার গণতন্ত্র এখনো ভঙ্গুর।
অভিনয়শিল্পী হিসেবে দৃষ্টিভঙ্গি
থিয়েটার থেকে ক্যারিয়ার শুরু করা ম্যাকফ্যাডিয়েন ১৯৯৮ সালে প্রথম বড় পর্দায় আসেন। ২০০৫ সালে ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’-এ মিস্টার ডার্সি চরিত্রে অভিনয়ের পর তাঁর জনপ্রিয়তা আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি পরে লক্ষ্য করেছেন—চরিত্রগুলোর ভেতর কিছু মিল রয়েছে, যা তিনি নিজেও আগে খেয়াল করেননি। তবে তিনি মজা করে বলেন, ‘হয়তো এখন কিছু ভিন্ন কিছু করা উচিত।’

চরিত্রকে সেটে রেখে বাড়ি ফেরা
ম্যাকফ্যাডিয়েন নিজে মেথড অ্যাক্টিং-এ বিশ্বাসী নন। তিনি মনে করেন, শিল্পীরা চরিত্রকে ব্যক্তিগত জীবনে টেনে আনলে সেটা অপেশাদার আচরণ। তাঁর মতে, ‘অন-স্ক্রিন আপনি চরিত্রে থাকবেন, কিন্তু অফ-স্ক্রিন আপনাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে হবে।’
তাই তিনি ‘সাকসেশন’-এর সহ-অভিনেতা নিকোলাস ব্রাউনের সঙ্গে অফ-স্ক্রিনে ছিলেন বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ—যদিও পর্দায় তাদের সম্পর্ক ছিল লেনদেনভিত্তিক ও ব্যঙ্গাত্মক।
ব্যক্তিগত জীবন
ম্যাকফ্যাডিয়েন যুক্তরাজ্যে স্ত্রী অভিনেত্রী কিলি হাওয়েস ও সন্তানদের সঙ্গে থাকেন। কাজের প্রয়োজনে দূরে থাকতে হয়—যা কখনো কখনো কঠিন হয়ে ওঠে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপ এড়াতে মাঝে মাঝে তিনি ‘দ্য লাইট ফোন’ ব্যবহার করেন—যেটিতে ইন্টারনেট বা অ্যাপ নেই।
বিনোদন ও নতুন প্রকল্প
কাজ না থাকলে তিনি বেশি টিভি দেখেন না, তবে সম্প্রতি ‘দ্য সেলিব্রিটি ট্রেইটর্স’ শো তাঁকে আকর্ষণ করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের পূর্ণাঙ্গ অডিয়োবুকে ভলডেমর্টের কণ্ঠ দিয়েছেন—যা তাঁর প্রথম ভয়েস-ওভার অভিজ্ঞতা। তিনি এটিকে কঠিন কিন্তু উপভোগ্য বলে মনে করেছেন।
#ম্যাথিউ_ম্যাকফ্যাডিয়েন #ডেথ_বাই_লাইটনিং #জেমস_গারফিল্ড #চার্লস_গুইতো #নেটফ্লিক্স #ইতিহাস #হত্যাকাণ্ড #সাকসেশন #মার্কিন_রাজনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















