প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান রিয়াদে অবতরণ করার আগেই বিশ্ব দাঁড়িয়েছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে—যেখানে একদিকে বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা, আর অন্যদিকে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা শেষ করে বহুবছরের সংকট সমাধানের সম্ভাবনা।
সাম্প্রতিক যুগটি অস্থিতিশীলতার মধ্য দিয়ে গেছে—আংশিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ভূমিকার স্পষ্টতা ও শক্তি হ্রাস পাওয়ার কারণে।
এর প্রমাণ চারদিকে ছড়িয়ে আছে: রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের স্থবিরতা, ভারত–পাকিস্তানের তীব্র উত্তেজনা, এবং ইরান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতা। এই নেতৃত্বশূন্যতার প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট।
তবে ট্রাম্পের সৌদি আরব সফর বিষয়টিকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে। এটি শুধু প্রতীকী নয়—এর ভিতরে ছিল উদ্দেশ্যের ভার।
এটি বিশ্বের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে যে তাঁর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের আসন্ন বছরগুলো প্রতিক্রিয়াশীল নীতি নয়—বরং সমাধানমুখী কৌশল দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।
রিয়াদ থেকেই তিনি ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রভাব পুনরায় জোরদার করার দৃষ্টিভঙ্গি—বক্তৃতা নয়, কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে। আর তিনি সে ক্ষমতা রাখেন।
প্রেসিডেন্ট থাকুন বা না থাকুন, ট্রাম্প এখনো আমেরিকান রাজনীতির এক নির্ধারণী শক্তি। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর সমন্বয় শুধু রাজনৈতিক বোঝাপড়া নয়—এটি ভূরাজনৈতিক সংযুক্তি। তাদের সহযোগিতা শুধু আঞ্চলিক গতিশীলতা নয়, বৈশ্বিক ভারসাম্যকেও পুনর্বিন্যাস করতে পারে।
এই সফর নির্বাচনী কৌশল নয়। এটি এমন এক নেতার সচেতন পদক্ষেপ, যিনি বোঝেন যে মধ্যপ্রাচ্যই বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু।
হোয়াইট হাউসের বাইরে থেকেও ট্রাম্প এখনো অগ্রাধিকার ও আলোচনা নির্ধারণের ক্ষমতা রাখেন।

রিয়াদে তাঁর উপস্থিতি একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়: সৌদি আরব কেবল আঞ্চলিক শক্তি নয়—এটি মূল ভিত্তি।
ইরান ও গাজা থেকে শুরু করে সিরিয়া এবং বৈশ্বিক তেলের বাজার—প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সমীকরণেই সৌদি আরব কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
যখন গাজা উত্তপ্ত, ইরান আরও আক্রমণাত্মক, সিরিয়া অনিশ্চয়তায় ভরপুর, আর পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেন-পরবর্তী অবস্থান নিয়ে ভাবনায়—তখন এই সফরের সময়টি মোটেই কাকতালীয় নয়। এটি সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং কৌশলগত।
যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্ক কোনো লেনদেননির্ভর ব্যবস্থা নয়, কিংবা কোনো একক প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্ব, যা গড়ে উঠেছে নিরাপত্তা, পারস্পরিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক জটিলতা বোঝার ভিত্তিতে।
তারপরও অস্বীকারের উপায় নেই যে ট্রাম্প প্রশাসন রিয়াদকে কখনো অধস্তন হিসেবে দেখেনি—বরং আঞ্চলিক নীতিনির্ধারণের কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করেছে।
সম্পর্কে ছিল স্পষ্টতা, সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান, এবং সৌদি আরবের উন্নয়নমূলক আকাঙ্ক্ষার প্রতি বাস্তবসম্মত সমর্থন।
বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের সময়ে কিছু সংকেত বিবৃতি থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রিয়াদে ট্রাম্পের আগমন হয়তো ইতিহাসে এমন এক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হবে, যা অঞ্চলকে পুনঃস্থাপন করেছিল—বলপ্রয়োগে নয়, প্রভাবের মাধ্যমে।
সুলতান আল-সাদ আল-কাহতানি 


















