০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
চীনের ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ গবেষণায় প্রথম উচ্চ-নির্ভুল ফলাফল রিমোর্সের রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তনে মেইদান রেসকোর্সে আলোড়ন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৯৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিকর সাইবার হামলার শিকার গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২১ নিহত বৈরুতে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর চিফ অব স্টাফ নিহত নাইজেরিয়ার ব্রোঞ্জ শিল্পীরা শতাব্দীপ্রাচীন কৌশল আঁকড়ে ধরে আছেন কুয়েতের নতুন ইকামা ও ভিসা ফি বৃদ্ধি কীভাবে চীনা আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাংক বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্কে পরিণত হলো জাতীয় অ্যানালিটিক্স প্ল্যাটফর্মে গবেষণা দ্রুততর, ডেটা সুরক্ষিত ভূমিকম্পে নতুন সচিবালয় ভবনে ফাটল

সিএনএন-এর প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশ তার সাবেক নেত্রীকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বাধা ভারত

তিনি এক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ নায়িক হিসেবে পরিচিত ছিলেন — এক অভ্যুত্থানকারী নেতার কন্যা, যার পরিবারকে ১৯৭০-৭৯ দশকের ঘটনাগুলোর পরিণামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেটিই ছিল তার রাজনৈতিক উত্থানের পটভূমি।

কিন্তু শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষে ওঠার পর ঘটে যায় এক চমকপ্রদ পতন — ক্ষমচ্যুতি এবং ভারতে স্ব-নিবাস। অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড এখন কার্যকর হতে পারে — যদি নয়াদিল্লি তাকে ফিরিয়ে দেয়।

প্রেক্ষাপট
বরখাস্ত করা এই নেত্রীকে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন দমন সংক্রান্ত অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি গত আগস্টে ভারতে আশ্রয় নেন— ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন শেষ হওয়ার পর আশ্রয় নেওয়ার উদ্দেশ্যে। এখন তিনি দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের খেলায় পড়েছেন, কারণ ঢাকা তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করতে চায়; তিনি নিজে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

“তিনি জনগণের ক্রোধ থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন,” বলেছিলেন বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবার্শার হাসান। “ভারতে থাকা অবস্থায় অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া — এটি এক অবাক করা গল্প।”

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথচলা: ট্র্যাজেডি, নির্বাসন ও ক্ষমতা

শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্টের এক রাতেই তার জীবন চরম মোড় নেয়।

একটি নির্মম সামরিক অভ্যুত্থানে তার পিতা, মাতাওসহ তিন ভাইকে তাদের ঢাকার বাসায় হত্যা করা হয়। হাসিনা ও তার বোন সেই সময় পশ্চিম জার্মানিতে হওয়ায় বেঁচে যান।

হামলার অশান্ত পরিণতিতে ক্ষমতায় ওঠেন জেনারেল জিয়াউর রহমান — যিনি ভবিষ্যতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার স্বামী হয়ে ওঠেন। তার শাসনামলে এমন একটি আইন তৈরী করা হয়েছিল যা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কয়েক দশক সুরক্ষা দেয়।

মুহূর্তের মধ্যে হাসিনার জীবন বদলে যায় এবং তিনি ছয় বছর নির্বাসনে ভারতে কাটান — যা ভবিষ্যতে ভারতের প্রতি তার রাজনৈতিক সমর্থনকে দৃঢ় করে তোলে।

প্রত্যাবর্তন ও ‘বেগমদের যুদ্ধ’

১৯৮১ সালে দেশে ফিরলে তিনি দেখেন, জাতি আবারও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি জানাচ্ছে। একই সময়ে রাজনীতিতে উঠে আসেন খালেদা জিয়া — আরেক নারী, যার রাজনৈতিক উত্থানও ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িত।

হাসিনা পরে স্মরণ করেন: “যেদিন আমি দেশে ফিরলাম, আমার কোনো আত্মীয় উপস্থিত ছিল না; কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম — সেটাই ছিল আমার শক্তি।”

এভাবেই শুরু হয় ‘বেগমদের যুদ্ধ’ — দুই নেত্রীর তিনদশকব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে গভীরভাবে বিভক্ত করে।

১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলে তিনি ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেন। ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে তিনি আরো দৃঢ় এবং সতর্ক ভূমিকায় ফিরে আসেন।

পনেরো বছরের শাসন: উন্নয়ন, দমন-নির্যাতন এবং ভারতের প্রতি সহায়তা
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি দ্রুত আর্থিক প্রবৃদ্ধির রূপকার হন। একই সঙ্গে তিনি ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্ত সমন্বয় গড়ে তোলেন, যা নয়াদিল্লির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে উন্নয়নের ছায়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক সহিংসতা, ভোট জালিয়াতি এবং মিডিয়াকে দমন করার অভিযোগ বাড়তে থাকে। সমালোচকরা বলছেন, একপক্ষীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন তিনি এবং তার প্রশাসন।

এক সময় দেশজুড়ে চাপ বাড়ার পর ও যুব নেতৃত্বাধীন আন্দোলন জোরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালে তার সরকারের পতন সূচিত হয়। সরকারি দমন-নিপীড়নে জাতিসংঘের তথ্যমতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে বলা হয়। কঠোর repress (দমন) আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হলে আন্দোলন আরো জোরাল হয়ে সরকারকে উৎখাত করে।

ভারতে নির্বাসন এবং অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড
শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) — বাংলাদেশি ঘরোয়া যুদ্ধাপরাধ আদালত — অনুপস্থিতিতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযোগগুলো মূলত ছিলেন: প্রতিবাদকারীদের হত্যার উস্কানি দেয়া, বিক্ষোভকারীদের ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া, এবং সংঘাত দমন করতে ড্রোন ও হেলিকপ্টারসহ প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার আদেশ করাসহয় বলে আদালতে বলা হয়েছে।

আদালত সিদ্ধান্তে জানিয়েছে যে “ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন — এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।” রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে কাঁদা ও কর্তাালের আবহ তৈরি হয়।

 

ভারত নীরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে — তারা রায়টিকে নোট করেছে এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হাসিনার পরিবারের পক্ষ থেকেও ভারতের আশ্রয় প্রদানের প্রশংসা করা হয়েছে।

তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, “ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু। ভারতের আশ্রয় না পেলে আমার মা বাঁচতে পারতেন না।“

ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, দিল্লি তাকে ফেরত পাঠাবে — এটা তিনি “খুবই সন্দেহজনক” মনে করেন। তার যুক্তিগুলো হলো: ভারতের প্রত্যর্পণ আইনে ‘রাজনৈতিক অপরাধ’ ব্যতিক্রম রয়েছে; হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিশোধের দাবি করতে পারেন; এবং এখনও সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তাই, সব আইনি পথ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত তাড়াহুড়ো করবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

ঢাকার চাপ
রায় ঘোষণার দিনেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে অনুরোধ করে দ্রুত হাসিনাকে হস্তান্তর করার জন্য। তাদের বক্তব্য ছিল, “বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের দায়িত্ব।”

নির্বাচন এবং অনিশ্চয়তার ভবিতব্য
আগামী ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং তার নেতৃত্ব ছড়িয়ে পড়ায় অন্তর্বর্তী সরকার, যে সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস — তাদের সামনে দেশকে গভীর দলীয় বিভাজন থেকে বের করে আনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাচ্ছে জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও অন্যান্য ছোট দলগুলো। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক বিভাজন সহজে মিটবে না।

মুবার্শার হাসান বলেন, “বাংলাদেশ এই মুহূর্তে পুনর্মিলনের অনেক দূরে আছে।” তিনি মনে করেন আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে, তবে হয়তো হাসিনার নেতৃত্বে নয়।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কি একটি দীর্ঘ বিভক্তির যুগের সমাপ্তি, নাকি অনিশ্চয়তার আরেকটি অধ্যায়ের শুরু — তা এখনই সুস্পষ্ট নয়।

রিপোর্টিং সহায়তা: সিএনএনের ইশা মিত্র ও আয়ুষি শাহ।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ গবেষণায় প্রথম উচ্চ-নির্ভুল ফলাফল

সিএনএন-এর প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশ তার সাবেক নেত্রীকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিকল্পনা করছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বাধা ভারত

১২:০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

তিনি এক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ নায়িক হিসেবে পরিচিত ছিলেন — এক অভ্যুত্থানকারী নেতার কন্যা, যার পরিবারকে ১৯৭০-৭৯ দশকের ঘটনাগুলোর পরিণামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং সেটিই ছিল তার রাজনৈতিক উত্থানের পটভূমি।

কিন্তু শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষে ওঠার পর ঘটে যায় এক চমকপ্রদ পতন — ক্ষমচ্যুতি এবং ভারতে স্ব-নিবাস। অনুপস্থিতিতে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড এখন কার্যকর হতে পারে — যদি নয়াদিল্লি তাকে ফিরিয়ে দেয়।

প্রেক্ষাপট
বরখাস্ত করা এই নেত্রীকে ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলন দমন সংক্রান্ত অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি গত আগস্টে ভারতে আশ্রয় নেন— ১৫ বছরের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন শেষ হওয়ার পর আশ্রয় নেওয়ার উদ্দেশ্যে। এখন তিনি দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের খেলায় পড়েছেন, কারণ ঢাকা তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচার করতে চায়; তিনি নিজে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

“তিনি জনগণের ক্রোধ থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন,” বলেছিলেন বাংলাদেশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবার্শার হাসান। “ভারতে থাকা অবস্থায় অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া — এটি এক অবাক করা গল্প।”

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পথচলা: ট্র্যাজেডি, নির্বাসন ও ক্ষমতা

শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্টের এক রাতেই তার জীবন চরম মোড় নেয়।

একটি নির্মম সামরিক অভ্যুত্থানে তার পিতা, মাতাওসহ তিন ভাইকে তাদের ঢাকার বাসায় হত্যা করা হয়। হাসিনা ও তার বোন সেই সময় পশ্চিম জার্মানিতে হওয়ায় বেঁচে যান।

হামলার অশান্ত পরিণতিতে ক্ষমতায় ওঠেন জেনারেল জিয়াউর রহমান — যিনি ভবিষ্যতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার স্বামী হয়ে ওঠেন। তার শাসনামলে এমন একটি আইন তৈরী করা হয়েছিল যা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কয়েক দশক সুরক্ষা দেয়।

মুহূর্তের মধ্যে হাসিনার জীবন বদলে যায় এবং তিনি ছয় বছর নির্বাসনে ভারতে কাটান — যা ভবিষ্যতে ভারতের প্রতি তার রাজনৈতিক সমর্থনকে দৃঢ় করে তোলে।

প্রত্যাবর্তন ও ‘বেগমদের যুদ্ধ’

১৯৮১ সালে দেশে ফিরলে তিনি দেখেন, জাতি আবারও ধর্মনিরপেক্ষতার দাবি জানাচ্ছে। একই সময়ে রাজনীতিতে উঠে আসেন খালেদা জিয়া — আরেক নারী, যার রাজনৈতিক উত্থানও ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির সঙ্গে জড়িত।

হাসিনা পরে স্মরণ করেন: “যেদিন আমি দেশে ফিরলাম, আমার কোনো আত্মীয় উপস্থিত ছিল না; কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম — সেটাই ছিল আমার শক্তি।”

এভাবেই শুরু হয় ‘বেগমদের যুদ্ধ’ — দুই নেত্রীর তিনদশকব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে গভীরভাবে বিভক্ত করে।

১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলে তিনি ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেন। ২০০৮ সালে আবার ক্ষমতায় ফিরে তিনি আরো দৃঢ় এবং সতর্ক ভূমিকায় ফিরে আসেন।

পনেরো বছরের শাসন: উন্নয়ন, দমন-নির্যাতন এবং ভারতের প্রতি সহায়তা
দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি দ্রুত আর্থিক প্রবৃদ্ধির রূপকার হন। একই সঙ্গে তিনি ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শক্ত সমন্বয় গড়ে তোলেন, যা নয়াদিল্লির কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে উন্নয়নের ছায়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক সহিংসতা, ভোট জালিয়াতি এবং মিডিয়াকে দমন করার অভিযোগ বাড়তে থাকে। সমালোচকরা বলছেন, একপক্ষীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছেন তিনি এবং তার প্রশাসন।

এক সময় দেশজুড়ে চাপ বাড়ার পর ও যুব নেতৃত্বাধীন আন্দোলন জোরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২০২৪ সালে তার সরকারের পতন সূচিত হয়। সরকারি দমন-নিপীড়নে জাতিসংঘের তথ্যমতে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে বলা হয়। কঠোর repress (দমন) আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হলে আন্দোলন আরো জোরাল হয়ে সরকারকে উৎখাত করে।

ভারতে নির্বাসন এবং অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড
শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) — বাংলাদেশি ঘরোয়া যুদ্ধাপরাধ আদালত — অনুপস্থিতিতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযোগগুলো মূলত ছিলেন: প্রতিবাদকারীদের হত্যার উস্কানি দেয়া, বিক্ষোভকারীদের ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া, এবং সংঘাত দমন করতে ড্রোন ও হেলিকপ্টারসহ প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার আদেশ করাসহয় বলে আদালতে বলা হয়েছে।

আদালত সিদ্ধান্তে জানিয়েছে যে “ছাত্র আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন — এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।” রায় ঘোষণার পর আদালত কক্ষে কাঁদা ও কর্তাালের আবহ তৈরি হয়।

 

ভারত নীরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে — তারা রায়টিকে নোট করেছে এবং সমস্ত সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হাসিনার পরিবারের পক্ষ থেকেও ভারতের আশ্রয় প্রদানের প্রশংসা করা হয়েছে।

তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বলেছেন, “ভারত সবসময়ই ভালো বন্ধু। ভারতের আশ্রয় না পেলে আমার মা বাঁচতে পারতেন না।“

ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুনায়েত বলেন, দিল্লি তাকে ফেরত পাঠাবে — এটা তিনি “খুবই সন্দেহজনক” মনে করেন। তার যুক্তিগুলো হলো: ভারতের প্রত্যর্পণ আইনে ‘রাজনৈতিক অপরাধ’ ব্যতিক্রম রয়েছে; হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিশোধের দাবি করতে পারেন; এবং এখনও সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। তাই, সব আইনি পথ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভারত তাড়াহুড়ো করবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

ঢাকার চাপ
রায় ঘোষণার দিনেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লিকে অনুরোধ করে দ্রুত হাসিনাকে হস্তান্তর করার জন্য। তাদের বক্তব্য ছিল, “বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে এটি ভারতের দায়িত্ব।”

নির্বাচন এবং অনিশ্চয়তার ভবিতব্য
আগামী ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তেজনাপূর্ণ করেছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং তার নেতৃত্ব ছড়িয়ে পড়ায় অন্তর্বর্তী সরকার, যে সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রাক্তন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস — তাদের সামনে দেশকে গভীর দলীয় বিভাজন থেকে বের করে আনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা যাচ্ছে জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও অন্যান্য ছোট দলগুলো। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক বিভাজন সহজে মিটবে না।

মুবার্শার হাসান বলেন, “বাংলাদেশ এই মুহূর্তে পুনর্মিলনের অনেক দূরে আছে।” তিনি মনে করেন আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারে, তবে হয়তো হাসিনার নেতৃত্বে নয়।

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কি একটি দীর্ঘ বিভক্তির যুগের সমাপ্তি, নাকি অনিশ্চয়তার আরেকটি অধ্যায়ের শুরু — তা এখনই সুস্পষ্ট নয়।

রিপোর্টিং সহায়তা: সিএনএনের ইশা মিত্র ও আয়ুষি শাহ।