বৈরুতে যুদ্ধবিরতির মাঝেই ইসরায়েলের বিমান হামলায় হিজবুল্লাহর চিফ অব জেনারেল স্টাফ হাইসম আলী তাবাতাবাই নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এই হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ২৮ জন আহত হন। ঘটনাটি লেবানন-ইসরায়েল উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের দাবি ও হামলার বিবরণ
ইসরায়েল জানায়, বৈরুতের হারেত হরেইক এলাকার একটি আবাসিক ভবনে লক্ষ্যভেদী হামলায় তারা তাবাতাবাইকে হত্যা করেছে। হিজবুল্লাহ-অধ্যুষিত এ জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিরতির পর এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের লক্ষ্যভেদী হামলা খুব কমই হয়েছে।
হামলার পর এলাকায় যুদ্ধবিমানগুলোর শব্দ শোনা যায় এবং বিস্ফোরণের তীব্র ধাক্কায় আশপাশের মানুষ ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ঘটনাস্থলে দমকল, অ্যাম্বুলেন্স এবং লেবানিজ সেনারা দ্রুত মোতায়েন হয়। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধারকর্মীরা একটি মরদেহ এবং কয়েকজন আহত নারীকে উদ্ধার করেন।
লেবাননের প্রতিক্রিয়া
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় পাঁচজন নিহত ও ২৮ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
ঘটনার পর লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান, যাতে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয় এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধ করা যায়।
হিজবুল্লাহর এক সিনিয়র কর্মকর্তা মাহমুদ কৌমাতি বলেন, হামলাটি “পরিষ্কারভাবে প্রতিরোধ আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে” এবং এটি “নতুন এক লাল রেখা অতিক্রম করা”।

হিজবুল্লাহ ও তাবাতাবাই সম্পর্কে প্রেক্ষাপট
তাবাতাবাই ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তার সম্পর্কে তথ্য দিতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে—যুদ্ধবিরতির পরও হিজবুল্লাহ পুনর্গঠন ও অস্ত্র মজুদের চেষ্টা করছে, আর এসব কার্যক্রম প্রতিহত করতেই তাদের হামলা অব্যাহত।
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কার্যালয় জানায়, তার নির্দেশেই এ হামলা পরিচালিত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈরুতের কেন্দ্রে হিজবুল্লাহর চিফ অব স্টাফকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যিনি সংগঠনের পুনঃঅস্ত্রীকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।”
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, “যে কেউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাত তুলবে, তার হাত কেটে ফেলা হবে।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েল সর্বোচ্চ কঠোরতার নীতি অব্যাহত রাখবে।
যুদ্ধবিরতি ও উত্তেজনার বিস্তার
নভেম্বর ২০২৪-এ এক বছরের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তার পর থেকে বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে এটি ইসরায়েলের পঞ্চম হামলা। সর্বশেষ জুন ৫ তারিখে ইসরায়েল দাবি করেছিল যে তারা হিজবুল্লাহর একটি ড্রোন কারখানা ধ্বংস করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামাসের পাশে দাঁড়িয়ে সীমান্তে হামলা চালানোয় হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের চাপ আরও বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল বারবার হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবি জানালেও সংগঠনটি তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
আঞ্চলিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
ঘটনাটি এমন সময় ঘটল যখন আর এক সপ্তাহ পর পোপ লিও চতুর্দশের লেবানন সফর নির্ধারিত।
ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান বলেন, “হিজবুল্লাহকে লেবাননের ভেতর পুনরায় সংগঠিত হতে দেওয়া হবে না। লেবাননকেও দায়িত্ব নিতে হবে।”
নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল “প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে” যাতে হিজবুল্লাহ পুনরায় শক্তি অর্জন করতে না পারে।
#রাজনীতি #মধ্যপ্রাচ্য #লেবানন | ইসরায়েল | হিজবুল্লাহ | যুদ্ধবিরতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















