০৪:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
ভারতের আকাশে আগ্নেয়গিরির ছাই কবে সরবে? সেলিনা জেটলির স্বামী পিটার হেগের বিরুদ্ধে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ, ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি লন্ডনের চাকরি ছেড়ে ভারতে ফেরা নারীর অনুশোচনা: ‘বড় ভুল করেছি’ তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে আকর্ষণীয় নায়ক ধর্মেন্দ্র: ভালোবাসার ক্ষুধায় বেঁচে থাকা এক চলচ্চিত্র-দিগন্ত সুনেরাহ বিনতে কামাল: জীবনের পথচলা জেমস ক্যামেরনকে নিয়ে বিলি আইলিশের নতুন বাজি, আসছে ৩ডি কনসার্ট ফিল্ম দুই দশক পর আবার ভারত বাজারে ব্রিটিশ কসমেটিক ব্র্যান্ড লাশ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে শান্তি আলোচনার আশা, তেলের দামে নতুন পতন ব্ল্যাক ফ্রাইডে ২০২৫: টেক দুনিয়ার ডিসকাউন্ট দৌড়ে ক্রেতার বাস্তব পরীক্ষা পেশাওয়ারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদরদপ্তরে আত্মঘাতী হামলা, নিহত পুলিশ কর্মকর্তা অন্তত ৩

চীনের ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ গবেষণায় প্রথম উচ্চ-নির্ভুল ফলাফল

চীন দীর্ঘদিন ধরে রহস্যময় নিউট্রিনো কণা নিয়ে গবেষণা করছে। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই কণাকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। এবার গুয়াংডং প্রদেশে তৈরি জিয়াংমেন আন্ডারগ্রাউন্ড নিউট্রিনো অবজারভেটরি (জুনো) প্রথমবারের মতো অত্যন্ত নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করেছে। এটি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বশক্তি হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।

জুনো কীভাবে তৈরি
২.৭ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ে নির্মিত জুনো ২০২৫ সালের আগস্টে কাজ শুরু করে। ভূগর্ভের ৭০০ মিটার নিচে থাকা বিশাল অ্যাক্রিলিক গোলকের চারদিকে বসানো হয়েছে ৪০,০০০-এর বেশি আলোক সেন্সর। নিউট্রিনো তরলের মধ্যে কোনো পরমাণুর সাথে ধাক্কা খেলে ক্ষুদ্র আলো বের হয়। সেই আলো ধরে বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোর আচরণ বিশ্লেষণ করেন।

নিউট্রিনো কী
নিউট্রিনো হলো মৌলিক কণা—বস্তুর ক্ষুদ্রতম উপাদানগুলোর একটি। প্রতি সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন নিউট্রিনো মানুষের শরীর ভেদ করে চলে যায়, অথচ কিছুই টের পাওয়া যায় না। এদের আচরণ এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময়। নিউট্রিনো সম্পর্কে জানলে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গভীর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

প্রথম গবেষণার ফল
জুনোর বিজ্ঞানীরা সূর্য থেকে আসা নিউট্রিনো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সেটি আগের সব পরীক্ষার তুলনায় বেশি নির্ভুলভাবে মাপতে সক্ষম হয়েছেন। জুনোর প্রধান গবেষক ড. ওয়াং ইফাং জানান, মাত্র দুই মাসেই এমন সাফল্য প্রমাণ করে যে গবেষণাকেন্দ্রটি নিখুঁতভাবে কাজ করছে।

বিশ্বে জুনোর অবস্থান
জুনো বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত নিউট্রিনো গবেষণা কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউন (DUNE) ও জাপানের হাইপার-কামিওকান্ডে এখনো নির্মাণাধীন, তাই চীন এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।
ডায়া বে প্রকল্পের (২০১১–২০২০) পর চীন নিউট্রিনো গবেষণায় আগেই নেতৃত্ব পেয়েছিল, আর জুনো সেই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

চীনের বিজ্ঞান অগ্রগতির লক্ষ্য
নিউট্রিনো গবেষণা মৌলিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানের অংশ, যার তাৎক্ষণিক ব্যবহার নেই। তবে এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করে।
চীন প্রযুক্তিতে বিদেশি নির্ভরশীলতা কমাতে বেসিক রিসার্চ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালে এই খাতে ব্যয় ছিল ২৫০ বিলিয়ন ইউয়ান।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর জেনিফার থমাস জুনোকে “বিশ্বের শীর্ষ প্রকল্পগুলোর একটি” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিউন ও জাপানের হাইপার-কামিওকান্ডে চালু হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে, তাই চীন এগিয়ে আছে।
প্রফেসর জে. পেদ্রো ওচোয়া-রিকাউক্স বলেন, জুনো, ডিউন এবং হাইপার-কামিওকান্ডে পরস্পরকে সম্পূর্ণ করে। তিনটি মিলেই নিউট্রিনো গবেষণায় বহু বছরের বড় অগ্রগতি এনে দেবে।
১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৭০০-এর বেশি গবেষক জুনোতে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় গবেষণা সংস্থা—ফরাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ।

নিউট্রিনো শনাক্তের উপায়
জুনোর গোলকের ভেতরে রয়েছে ২০,০০০ টন বিশেষ তরল। নিউট্রিনো কোনো পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করলে ক্ষুদ্র আলো তৈরি হয়, যা চারপাশের সেন্সরগুলো শনাক্ত করে।
গবেষণার জন্য প্রধানত ৫৩ কিমি দূরের দুইটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট—ইয়াংজিয়াং এবং তাইশান—থেকে আসা নিউট্রিনো ব্যবহার করা হয়। গোলকের ওপরের গ্রানাইট পাহাড় মহাকাশের কসমিক রশ্মি আটকে পরীক্ষার নির্ভুলতা রক্ষা করে।

নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও চু হিয়াপ বলেন, এমন গবেষণায় নতুন প্রযুক্তি, নতুন যন্ত্র এবং নতুন পদ্ধতি জন্ম নেয়, যা ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজে লাগে। নিজ দেশে এমন প্রকল্প পরিচালনা করলে সেটির প্রযুক্তিগত দিক আরও গভীরভাবে বোঝা যায়, যা দেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা বাড়ায়।


#চীন #জুনো #নিউট্রিনো #বিজ্ঞান #প্রযুক্তি #গবেষণা

জনপ্রিয় সংবাদ

ভারতের আকাশে আগ্নেয়গিরির ছাই কবে সরবে?

চীনের ‘ঘোস্ট পার্টিকল’ গবেষণায় প্রথম উচ্চ-নির্ভুল ফলাফল

০২:০২:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

চীন দীর্ঘদিন ধরে রহস্যময় নিউট্রিনো কণা নিয়ে গবেষণা করছে। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই কণাকে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। এবার গুয়াংডং প্রদেশে তৈরি জিয়াংমেন আন্ডারগ্রাউন্ড নিউট্রিনো অবজারভেটরি (জুনো) প্রথমবারের মতো অত্যন্ত নির্ভুল ফলাফল প্রকাশ করেছে। এটি চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বশক্তি হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ।

জুনো কীভাবে তৈরি
২.৭ বিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ে নির্মিত জুনো ২০২৫ সালের আগস্টে কাজ শুরু করে। ভূগর্ভের ৭০০ মিটার নিচে থাকা বিশাল অ্যাক্রিলিক গোলকের চারদিকে বসানো হয়েছে ৪০,০০০-এর বেশি আলোক সেন্সর। নিউট্রিনো তরলের মধ্যে কোনো পরমাণুর সাথে ধাক্কা খেলে ক্ষুদ্র আলো বের হয়। সেই আলো ধরে বিজ্ঞানীরা নিউট্রিনোর আচরণ বিশ্লেষণ করেন।

নিউট্রিনো কী
নিউট্রিনো হলো মৌলিক কণা—বস্তুর ক্ষুদ্রতম উপাদানগুলোর একটি। প্রতি সেকেন্ডে ট্রিলিয়ন নিউট্রিনো মানুষের শরীর ভেদ করে চলে যায়, অথচ কিছুই টের পাওয়া যায় না। এদের আচরণ এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময়। নিউট্রিনো সম্পর্কে জানলে পদার্থবিজ্ঞানের অনেক গভীর প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

প্রথম গবেষণার ফল
জুনোর বিজ্ঞানীরা সূর্য থেকে আসা নিউট্রিনো পৃথিবীতে পৌঁছানোর পথে কীভাবে পরিবর্তিত হয়, সেটি আগের সব পরীক্ষার তুলনায় বেশি নির্ভুলভাবে মাপতে সক্ষম হয়েছেন। জুনোর প্রধান গবেষক ড. ওয়াং ইফাং জানান, মাত্র দুই মাসেই এমন সাফল্য প্রমাণ করে যে গবেষণাকেন্দ্রটি নিখুঁতভাবে কাজ করছে।

বিশ্বে জুনোর অবস্থান
জুনো বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত নিউট্রিনো গবেষণা কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রের ডিউন (DUNE) ও জাপানের হাইপার-কামিওকান্ডে এখনো নির্মাণাধীন, তাই চীন এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।
ডায়া বে প্রকল্পের (২০১১–২০২০) পর চীন নিউট্রিনো গবেষণায় আগেই নেতৃত্ব পেয়েছিল, আর জুনো সেই অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

চীনের বিজ্ঞান অগ্রগতির লক্ষ্য
নিউট্রিনো গবেষণা মৌলিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানের অংশ, যার তাৎক্ষণিক ব্যবহার নেই। তবে এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করে।
চীন প্রযুক্তিতে বিদেশি নির্ভরশীলতা কমাতে বেসিক রিসার্চ খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০২৪ সালে এই খাতে ব্যয় ছিল ২৫০ বিলিয়ন ইউয়ান।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রফেসর জেনিফার থমাস জুনোকে “বিশ্বের শীর্ষ প্রকল্পগুলোর একটি” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিউন ও জাপানের হাইপার-কামিওকান্ডে চালু হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে, তাই চীন এগিয়ে আছে।
প্রফেসর জে. পেদ্রো ওচোয়া-রিকাউক্স বলেন, জুনো, ডিউন এবং হাইপার-কামিওকান্ডে পরস্পরকে সম্পূর্ণ করে। তিনটি মিলেই নিউট্রিনো গবেষণায় বহু বছরের বড় অগ্রগতি এনে দেবে।
১৭টি দেশ ও অঞ্চলের ৭০০-এর বেশি গবেষক জুনোতে যুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ইউরোপের সবচেয়ে বড় গবেষণা সংস্থা—ফরাসি ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চ।

নিউট্রিনো শনাক্তের উপায়
জুনোর গোলকের ভেতরে রয়েছে ২০,০০০ টন বিশেষ তরল। নিউট্রিনো কোনো পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করলে ক্ষুদ্র আলো তৈরি হয়, যা চারপাশের সেন্সরগুলো শনাক্ত করে।
গবেষণার জন্য প্রধানত ৫৩ কিমি দূরের দুইটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট—ইয়াংজিয়াং এবং তাইশান—থেকে আসা নিউট্রিনো ব্যবহার করা হয়। গোলকের ওপরের গ্রানাইট পাহাড় মহাকাশের কসমিক রশ্মি আটকে পরীক্ষার নির্ভুলতা রক্ষা করে।

নতুন প্রযুক্তির সম্ভাবনা
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও চু হিয়াপ বলেন, এমন গবেষণায় নতুন প্রযুক্তি, নতুন যন্ত্র এবং নতুন পদ্ধতি জন্ম নেয়, যা ভবিষ্যতের উন্নয়নে কাজে লাগে। নিজ দেশে এমন প্রকল্প পরিচালনা করলে সেটির প্রযুক্তিগত দিক আরও গভীরভাবে বোঝা যায়, যা দেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা বাড়ায়।


#চীন #জুনো #নিউট্রিনো #বিজ্ঞান #প্রযুক্তি #গবেষণা