প্রস্তাবনা
সম্প্রতি এক নারী নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। লন্ডনে স্থায়ী চাকরি ছেড়ে ভারতে ফিরে আসাকে তিনি এখন জীবন–ভুল বলে মনে করছেন। রেডিটে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কেন তার এই সিদ্ধান্ত আজ তাকে মানসিকভাবে চাপে ফেলেছে।
পটভূমি: বিদেশে বড় হওয়া, লন্ডনে স্বপ্নের চাকরি
নারীটি জন্মসূত্রে ভারতীয় হলেও তিনি জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছেন দেশের বাইরে। সিঙ্গাপুরে তাঁর স্কুলজীবন, এরপর ভারতে ফিরে স্নাতক সম্পন্ন করা। তারপর তিনি লন্ডনে মাস্টার্স করতে যান এবং সেখানেই তাঁর স্বপ্নের শহরে একটি চাকরি পান।
তিনি লিখেছেন, লন্ডন তাঁর শৈশবের স্বপ্ন—সেই শহরে চাকরি পাওয়াটা ছিল জীবনের অন্যতম বড় অর্জন।

অপ্রাসঙ্গিক কারণে চাকরি ছাড়া—‘বড় ভুল’
রেডিট পোস্টে ২৬ বছরের ওই নারী জানান, তিনি নিজের চাকরি পছন্দ করতেন। কাজ নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি ছিল না। কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও কাজে অসংশ্লিষ্ট একটি কারণে চাকরিটি ছেড়ে দেন—যা এখন তাঁর কাছে ‘‘একেবারেই বোকামি’’ মনে হয়।
তিনি লেখেন, “আমার চাকরিটা ভীষণ ভালো লাগত। কিন্তু কাজের সঙ্গে সম্পর্কহীন, আর এখন মনে হয় হাস্যকর, এমন এক কারণে আমি চাকরি ছেড়ে দিলাম। সেটাই ছিল প্রথম ভুল। কারণ লন্ডন ছিল আমার শৈশবের স্বপ্ন।”
সিঙ্গাপুরে ফিরে যাওয়া ও ছাঁটাই
লন্ডনের চাকরি ছাড়ার পর তিনি আবার সিঙ্গাপুরে ফিরে যান এবং একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে চাকরি নেন। কিন্তু ছয় মাস পর তাঁর টিমটি ভেঙে দেওয়া হয়, কারণ সেই কাজ ভারতের অফিসে আউটসোর্স করা হচ্ছিল।
![]()
তিনি জানান, যেহেতু কাজ ভারতে পাঠানো হচ্ছিল এবং তিনি প্রশিক্ষণকালীন সহকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাই তারা তাঁকে ভারতে চলে যেতে উৎসাহিত করেন। বেতন কমে গেলেও দেশে ফেরার ধারণা তাঁর ভালো লেগেছিল।
ভারতে ফেরা—এখন ‘‘গভীর অনুশোচনা’’
সহজ সিদ্ধান্ত ভেবে তিনি ভারতে ফিরলেন, বেতনে কাটছাঁট মেনে নিয়ে। কিন্তু তিন মাস না যেতেই তিনি বুঝতে পারেন, সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এখন এটি তাঁর ‘‘গভীর অনুশোচনা’’র কারণ।
ভারতের ‘‘টক্সিক’’ কর্মসংস্কৃতি
ভারতে ফিরে এসে যে জিনিসটি তাঁকে সবচেয়ে কষ্ট দিচ্ছে, তা হলো কর্মস্থলের পরিবেশ। তাঁর মতে, কর্মসংস্কৃতি এখানে অত্যন্ত ‘‘টক্সিক’’—অফিস রাজনীতি তাকে ক্লান্ত করে দিচ্ছে।

তিনি লিখেছেন, “তিন মাস হয়ে গেল… এবং বাস্তবতা খুব কঠিনভাবে ধাক্কা দিচ্ছে। বস কালচার ভীষণ বিষাক্ত, রাজনীতি ক্লান্তিকর। পরিবেশটা UK-এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ওখানে কাঠামো ছিল, খোলামেলা আচরণ ছিল, ব্যক্তিগত সীমার প্রতি সম্মান ছিল। এখানে একটা ছুটি নিতেও আমাকে যুক্তি দেখাতে হচ্ছে।”
তিনি আরও লিখেছেন, “এখন ভাবি—লন্ডন কি ছেড়েই আসা উচিত ছিল না? কিংবা সিঙ্গাপুর? আমি বুঝতে পারছি না এটা কি শুধু মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা, নাকি সত্যিই একটা বড় ভুল করে ফেলেছি।”
উপসংহার
ভারতে ফেরাকে কেন্দ্র করে তাঁর এই অনুশোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিদেশে বেড়ে ওঠা অনেক তরুণ-তরুণীর মতো তিনিও দেশ ও বিদেশ—দুই ভিন্ন কর্মসংস্কৃতির মাঝে আটকে পড়ার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কি না—সে প্রশ্নের উত্তর তিনি এখনও খুঁজছেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















