ইথিওপিয়ার ‘হাইলি গুব্বি’ আগ্নেয়গিরি ভারতের মাটি থেকে প্রায় ৪,০০০ কিলোমিটার দূরে। তবু তার অগ্ন্যুত্পাতের ছাই সোমবার রাতে হঠাৎ উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আকাশ ঢেকে ফেলে। দৃশ্যমানতা কমে যায়, দিল্লিসহ বড় শহরগুলোর আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে, এবং একের পর এক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল ও বিলম্বিত হতে থাকে। কীভাবে এত দূরের ছাই এত দ্রুত ভারতের আকাশে পৌঁছাল—তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
উত্তর ভারতে ছাইয়ের মেঘের প্রভাব
ইথিওপিয়ার হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি রবিবার ইতিহাসে প্রথমবার অগ্ন্যুত্পাত ঘটে, যার ধোঁয়া ও ছাই ১৪ কিলোমিটার উঁচুতে উঠে যায়। এই ঘন ছাইয়ের মেঘ দ্রুত উত্তর-পশ্চিম ভারতের দিকে অগ্রসর হয়।
রাতেই রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, দিল্লি-এনসিআর ও পাঞ্জাবের আকাশ ছাইয়ে ঢেকে যায়। দৃশ্যমানতা হঠাৎ কমে যাওয়ায় বিমান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সংস্থা মেট স্কাই জানায়, মেঘ ধীরে ধীরে উত্তর ভারতের আকাশ ছেড়ে চীনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং উপরের বায়ুমণ্ডলে এটি আরও পাতলা হয়ে যাবে।

ভারতের আকাশে কীভাবে পৌঁছালো এই ছাই?
অগ্ন্যুত্পাতের পর ছাইয়ের মেঘ লোহিত সাগরের ওপর দিয়ে ওমান ও ইয়েমেনের দিকে যায়। সেখান থেকে ঘণ্টায় ১০০–১২০ কিলোমিটার বেগে পূর্বদিকে সরে এসে ভারতের আকাশে প্রবেশ করে।
সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এই ছাই ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে পড়ে এবং দিল্লিসহ উত্তর ভারতের আকাশ দ্রুত অন্ধকার হয়ে যায়।
কেন ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে?
দিল্লির আইজিআই বিমানবন্দরে সোমবার রাত থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়সূচিতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যায়।
হংকং, দুবাই, জেদ্দা, হেলসিঙ্কি, কাবুল ও ফ্রাঙ্কফুর্টগামী ফ্লাইটসহ মোট সাতটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল এবং দশটির বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়।
ভারতীয় বিমান কর্তৃপক্ষ যাত্রী ও বিমানের নিরাপত্তার স্বার্থে ছাইযুক্ত অঞ্চলে উড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কোন কোন এয়ারলাইন্স ফ্লাইট বাতিল করেছে?
এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, অগ্ন্যুত্পাতের পর ছাইয়ের প্রভাবে থাকা অঞ্চল দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের নিরাপত্তা পরীক্ষা করতে সোমবার ও মঙ্গলবার মোট ১৩টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
আকাশা এয়ার মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্য—জেদ্দা, কুয়েত ও আবুধাবি—গামী ফ্লাইট বাতিল করে।
ইন্ডিগো ও স্পাইসজেট সতর্কতা জারি করে জানায়, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে রুট পরিবর্তন করা হবে।

ডিজিসিএর নির্দেশনা
ছাইয়ের মেঘ ভারতের আকাশের দিকে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিসিএ জরুরি নির্দেশ জারি করে।
এতে এয়ারলাইন্সগুলোকে ছাইযুক্ত অঞ্চল এড়িয়ে চলতে, রুট নতুন করে নির্ধারণ করতে এবং জ্বালানি ও উচ্চতা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে নিতে বলা হয়।
পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে?
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে ছাইয়ের মেঘ ভারতের আকাশ ছেড়ে চীনের দিকে অগ্রসর হবে। ফলে এর পর থেকেই ভারতের আকাশপথে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
#আগ্নেয়গিরি #ভারতআকাশপথ #ফ্লাইটবাতিল #ইথিওপিয়া #আবহাওয়া #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















