ফেনী জেলাজুড়ে অনুমোদনহীন ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গড়ে ওঠা পোল্ট্রি ফার্মগুলো মারাত্মক পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা, বসতি ও স্কুলের পাশে খামার স্থাপন, এবং স্থানীয়দের হয়রানির কারণে পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
অনুমোদনহীন ফার্মের বিস্তার
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ফেনীতে ১,৩৬৭টি নিবন্ধিত ফার্ম আছে এবং আরও ১,৮১৪টি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে অনুমোদনহীন খামারের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বসতবাড়ি, রাস্তা ও কৃষিজমির পাশে খামার
বাড়ির ছাদ, আঙিনা, রাস্তার গোঁড়া, পুকুরপাড়, কৃষিজমি ও স্কুল-মসজিদের পাশে পর্যন্ত খামার গড়ে উঠেছে। লাইভস্টক বিভাগের অনুমোদন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া বহু প্রতিষ্ঠান চলছে।
পরিবেশে গুরুতর ক্ষতি
– খামারের বর্জ্য মাটি ও পানিতে মিশে কৃষিজমি নষ্ট করছে।
– খালে বর্জ্য ফেলায় সেচব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে।
– বিদ্যালয়, মসজিদ ও বসতির মাত্র কয়েক মিটার দূরেই খামার।
– দুর্গন্ধে রাস্তাঘাট ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়ছে, বাড়ছে অসুস্থতা।
স্থানীয়দের অভিযোগ: হুমকি ও হয়রানি
বহু বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন—প্রভাবশালী মালিকদের কারণে প্রতিবাদ করতে ভয় পান। খামারের বর্জ্যের কারণে ফসল নষ্ট হচ্ছে, শিশু ও বয়স্কদের চলাচলও কঠিন হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিজ্ঞতা
চর এলাহীর বাসিন্দা মমতাজ বেগম জানান, ফার্মের দুর্গন্ধে তার শ্বাসকষ্ট বেড়েছে এবং পুকুর-জমি নষ্ট হয়েছে। তিনি ancestral বাড়ি ছাড়ার আশঙ্কায় আছেন।

বগাদানা, আমিরাবাদ, মঙ্গলকান্দি ও নওয়াবপুর ইউনিয়নেও একই পরিস্থিতি—লাইসেন্স ছাড়াই খামার বাড়ছে, নেই পরিবেশ ছাড়পত্র বা ট্রেড লাইসেন্স।
ভয়াবহ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
চর এলাহীতে একটি খামার বাড়ির মাত্র ১৫ গজ দূরে। এর আশপাশে ৪০–৫০টি পরিবার বসবাস করে।
খামারের বর্জ্য পাশের ছোট গর্তে ফেলা হয়, ফলে মাছি-মশার উপদ্রব বাড়ছে। মৃত মুরগি প্লাস্টিক মোড়ানো অবস্থায় রাস্তার ড্রেন ও মাঠের পাশে ফেলে রাখা দেখা গেছে।
মালিকদের বক্তব্য
কেউ কেউ দাবি করেছেন—স্বনির্ভরতার জন্য খামার খুলেছেন এবং ছাড়পত্রের আবেদন করেছেন। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁরা নিয়ম না মেনে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছেন।
পরিবেশকর্মীদের সতর্কবার্তা
ইউথ নেটওয়ার্কের পরিবেশ সংগঠনের নেতৃত্ব জানান, হাজার হাজার টন পোল্ট্রি বর্জ্য অযথা ফেলা হচ্ছে, যা পানি ও মাটির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সরকারি সংস্থার অবস্থান
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়—ঝুঁকি থাকলে নিবন্ধন দেওয়া হয় না এবং ক্ষতিকর প্রমাণ হলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে—দূষণে দায়ী খামারগুলোর বিরুদ্ধে নোটিশ ও শুনানি চলছে।
জেলা প্রশাসন কঠোর মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে এবং অবৈধ খামারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
#পোল্ট্রি_ফার্ম #ফেনী #পরিবেশ_দূষণ #বর্জ্য_ব্যবস্থাপনা #জীববৈচিত্র্য #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















