১০:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
ক্রক্সের স্যান্ডেলে এবার এক্সবক্স ব্র্যান্ডিং, গেমারদের জন্য নতুন ‘ড্রপ’ আবুধাবিতে রাশিয়ান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে ড্রিসকলের বৈঠক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৬৩) লটারির মাধ্যমে এসপি বদলি গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নয়: নজরুল ইসলাম খান বাহাত্তরের সংবিধান আর চলবে না: মামুনুল হকের মন্তব্য ময়মনসিংহে রেলপথ অবরোধ, ট্রেন চলাচল বন্ধ শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, লিখিত পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘মনগড়া ও অন্যায্য’ বিচার চলছে বলে শীর্ষ যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের অভিযোগ জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন অব্যাহতি জামায়াতের শো-কজ নোটিশে শাহজাহান চৌধুরী

প্যাডেল স্টিমার মাহমুদ কি আদৌ যাবে জীবনানন্দের বরিশালে?

১৫ নভেম্বর জাকজমক অনুষ্ঠান করে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদকে আবারো নদীতে ভাসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন । ফেসবুকে সক্রিয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ( প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ) লুৎফে সিদ্দিকী সেই অনুষ্ঠানের অনেক ছবি দিয়ে নানা উৎসাহমূলক কথাবার্তা লিখেছিলেন । যারা নৌপথে ভ্রমণ করতে চান বা পর্যটন খাতের সাথে জড়িতদের সেই ঘটনায় আগ্রহ দেখে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন যে পুরোনো ঐতিহ্যকে নিয়ে সরকার ইতিবাচক কাজ করছে । তবে উদ্বোধনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে পি এস মাহসুদ পর্যটন সার্ভিস হিসেবে নিয়মিত চলাচল শুরু করবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তা পূরণ হয়নি । বরং আদৌ এই প্যাডল স্টিমারটি ঢাকা থেকে এক নাগাড়ে বরিশাল চলতে পারবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । আবার জাহাজটি পরিচালনার জন্য বেসরকারি খাতে লিজ দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) , তাও ভেসে যাচ্ছে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রথমবার টেন্ডার আহ্বান করে আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি । দ্বিতীয়বারের টেন্ডারে চারটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার শিডিউল কিনলেও আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে । আবার অভিযোগ উঠেছে একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে জাহাজের লিজ দেয়ার জন্য নামেমাত্র দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা দেখানো হচ্ছে । আর জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা নাই তা প্রমাণের জন্য বিআইডব্লিউটিসি যথেষ্ট যাত্রী না পেয়েও আগামী শুক্রবার ঢাকা থেকে জাহাজটি বরিশাল পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে । নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন “ , পি এস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদীজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, কীভাবে একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ। প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদ হবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নদীভিত্তিক পর্যটনের এক অনন্য মেলবন্ধন। “

উপদেষ্টার কথায় যারা খুশি হয়েছিলেন , এখন তারা খবর পড়ছেন “ ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়া এবং যাত্রী সংকটে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদের উদ্বোধনী যাত্রাই বাতিল হলো। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও প্যাডেল স্টিমারের ভাড়া নির্ধারণ করা যায়নি। আগাম টিকিট বুকিংও আশানুরূপ হয়নি। মাত্র তিন-চারজন যাত্রী বুকিং করায় উদ্বোধনী যাত্রা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি “ । বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সূত্র উল্লেখ করে পত্রিকায় লেখা হয়েছে , ভাড়া নিয়ে সর্বশেষ সভায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া ৬ হাজার টাকা, নন-এসি শ্রেণির কেবিন ৪ হাজার এবং সাধারণ চেয়ারে ২ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাড়া আরও কমানোর চেষ্টা চলছে। গত ২৪ অক্টোবর সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটে পি এস মাহসুদ পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। ১৫ নভেম্বর সকালে স্টিমারটির পুনরায় যাত্রার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আগামীকাল দরপত্র মূল্যায়ন করে একটি প্রতিষ্ঠানকে পি এস মাহসুদ পরিচালনা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার কথা রয়েছে।

দেশের পর্যটনে যুক্ত হলো শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার | বণিক বার্তা

অনুসন্ধানে জানা গেছে দ্বিতীয় দফায় দরপত্রের শিডিউল কেনে চারটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান । এর মধ্যে গ্র্যান্ডপ্যাক বরিশাল নামে যে প্রতিষ্ঠানটি শিডিউল কিনেছে , বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তালিকাভুক্ত ট্যুর অপারেটর না হওয়ায় শর্ত অনুযায়ী তারা লিজ পাবার যোগ্য নয় । দরপত্রে অংশ নেয়া অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পুরোনো ট্যুর অপারেটর ট্যুর প্ল্যানার্স , রিভারাইন গ্রীন ও সুন্দরবন ট্যুরিজম প্লাস । এর মধ্যে রিভারাইন গ্রীনের ট্যুরিস্ট নৌযান চালানোর কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও এরই মধ্যে তারা বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান বরাবর কিছু শর্ত দিয়ে বলেছে যে এসব শর্ত পূরণ করা না হলে তারা দরপত্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকবে না । অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান আর্নেস্ট মানি জমা দিবে কি না তাও অনিশ্চিত । সেক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পিএস মাহসুদকে ” প্রেস্টিজ ইস্যু “ নামমাত্র দরে একটি সংস্থার কাছে গচ্ছিয়ে দেয়ার পায়তারা চলছে বলে শোনা যাচ্ছে ।

বিশেষ করে লিজ নিলেও বিআইডব্লিউটিসির আটজন কর্মকর্তার বিষয়ে দ্বিধায় আছে ইজারা নিতে আগ্রহীরা । এদের বেতনভাতা বাবদই মাসে দু’লাখ টাকা দিতে হবে । আর জাহাজটি একটানা বরিশাল যেতে পারবে নাকি যাত্রাপথে চাঁদপুর বিরতি দিতে হবে সেটিও এখনো নিশ্চিত নয় । বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, স্টিমারটিকে আধুনিকায়নের সময় এর মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখেই ইঞ্জিন, নিরাপত্তা এবং ফায়ার সেফটি সিস্টেম নবায়ন করা হয়েছে।

যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা স্টিমারটি উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল প্রাথমিকভাবে ট্যুরিস্টদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার সকালে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে বরিশালে পৌঁছাবে সন্ধ্যায় । পরদিন সকালে বরিশাল থেকে রওয়ানা দিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসবে । আগে স্টিমার রাতে চললেও এবার দিনে চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে অনেক যাত্রী পাওয়ার যে আশা করা হয়েছিল শুরুতেই তা হোঁচট খেয়েছে ।

আর জাহাজটি উদ্বোধনের আগেই কেন বেসরকারি খাতের ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো না বা সেটা না করে কেন ২১ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক চলাচলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তাকেও রহস্যজনক বলছে অনেকেই ।

পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ব্রিটিশ আমলে ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে পি এস মাহসুদের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌযানটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডে বেলজিয়ামের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তায় স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিন বদলে ডিজেলচালিত নতুন ইঞ্জিন বসানো হয়। ১৯৯৫ সালে যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এটিকে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়। তবে ২০২২ সালে স্টিমারটির নিয়মিত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবার ঐতিহ্যবাহী এই নৌযানকে আবার সচল করতে খরচ হয় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ।

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্রক্সের স্যান্ডেলে এবার এক্সবক্স ব্র্যান্ডিং, গেমারদের জন্য নতুন ‘ড্রপ’

প্যাডেল স্টিমার মাহমুদ কি আদৌ যাবে জীবনানন্দের বরিশালে?

০৮:২০:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫

১৫ নভেম্বর জাকজমক অনুষ্ঠান করে শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদকে আবারো নদীতে ভাসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন । ফেসবুকে সক্রিয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ( প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ) লুৎফে সিদ্দিকী সেই অনুষ্ঠানের অনেক ছবি দিয়ে নানা উৎসাহমূলক কথাবার্তা লিখেছিলেন । যারা নৌপথে ভ্রমণ করতে চান বা পর্যটন খাতের সাথে জড়িতদের সেই ঘটনায় আগ্রহ দেখে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন যে পুরোনো ঐতিহ্যকে নিয়ে সরকার ইতিবাচক কাজ করছে । তবে উদ্বোধনকালে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ২১ নভেম্বর শুক্রবার থেকে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে পি এস মাহসুদ পর্যটন সার্ভিস হিসেবে নিয়মিত চলাচল শুরু করবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তা পূরণ হয়নি । বরং আদৌ এই প্যাডল স্টিমারটি ঢাকা থেকে এক নাগাড়ে বরিশাল চলতে পারবে কি না তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । আবার জাহাজটি পরিচালনার জন্য বেসরকারি খাতে লিজ দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) , তাও ভেসে যাচ্ছে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রথমবার টেন্ডার আহ্বান করে আগ্রহী কাউকে পাওয়া যায়নি । দ্বিতীয়বারের টেন্ডারে চারটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার শিডিউল কিনলেও আগামী ২৬ নভেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে না বলেও ধারণা করা হচ্ছে । আবার অভিযোগ উঠেছে একটি নির্দিষ্ট কোম্পানিকে জাহাজের লিজ দেয়ার জন্য নামেমাত্র দরপত্রের আনুষ্ঠানিকতা দেখানো হচ্ছে । আর জাহাজ চলাচলে কোনো সমস্যা নাই তা প্রমাণের জন্য বিআইডব্লিউটিসি যথেষ্ট যাত্রী না পেয়েও আগামী শুক্রবার ঢাকা থেকে জাহাজটি বরিশাল পর্যন্ত চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে । নৌপরিবহন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন “ , পি এস মাহসুদ কেবল একটি নৌযান নয়, এটি বাংলাদেশের নদীজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক। আমরা চাই নতুন প্রজন্ম কাছ থেকে দেখুক, কীভাবে একসময় নদীপথই ছিল যোগাযোগ ও সংস্কৃতির প্রাণ। প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদ হবে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও নদীভিত্তিক পর্যটনের এক অনন্য মেলবন্ধন। “

উপদেষ্টার কথায় যারা খুশি হয়েছিলেন , এখন তারা খবর পড়ছেন “ ভাড়া চূড়ান্ত না হওয়া এবং যাত্রী সংকটে ঐতিহ্যবাহী প্যাডেল স্টিমার পি এস মাহসুদের উদ্বোধনী যাত্রাই বাতিল হলো। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও প্যাডেল স্টিমারের ভাড়া নির্ধারণ করা যায়নি। আগাম টিকিট বুকিংও আশানুরূপ হয়নি। মাত্র তিন-চারজন যাত্রী বুকিং করায় উদ্বোধনী যাত্রা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি “ । বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের সূত্র উল্লেখ করে পত্রিকায় লেখা হয়েছে , ভাড়া নিয়ে সর্বশেষ সভায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) প্রথম শ্রেণির কেবিন ভাড়া ৬ হাজার টাকা, নন-এসি শ্রেণির কেবিন ৪ হাজার এবং সাধারণ চেয়ারে ২ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভাড়া আরও কমানোর চেষ্টা চলছে। গত ২৪ অক্টোবর সকালে রাজধানীর সদরঘাট থেকে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ রুটে পি এস মাহসুদ পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়। ১৫ নভেম্বর সকালে স্টিমারটির পুনরায় যাত্রার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। আগামীকাল দরপত্র মূল্যায়ন করে একটি প্রতিষ্ঠানকে পি এস মাহসুদ পরিচালনা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার কথা রয়েছে।

দেশের পর্যটনে যুক্ত হলো শতবর্ষী প্যাডেল স্টিমার | বণিক বার্তা

অনুসন্ধানে জানা গেছে দ্বিতীয় দফায় দরপত্রের শিডিউল কেনে চারটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান । এর মধ্যে গ্র্যান্ডপ্যাক বরিশাল নামে যে প্রতিষ্ঠানটি শিডিউল কিনেছে , বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তালিকাভুক্ত ট্যুর অপারেটর না হওয়ায় শর্ত অনুযায়ী তারা লিজ পাবার যোগ্য নয় । দরপত্রে অংশ নেয়া অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পুরোনো ট্যুর অপারেটর ট্যুর প্ল্যানার্স , রিভারাইন গ্রীন ও সুন্দরবন ট্যুরিজম প্লাস । এর মধ্যে রিভারাইন গ্রীনের ট্যুরিস্ট নৌযান চালানোর কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও এরই মধ্যে তারা বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান বরাবর কিছু শর্ত দিয়ে বলেছে যে এসব শর্ত পূরণ করা না হলে তারা দরপত্রের চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকবে না । অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান আর্নেস্ট মানি জমা দিবে কি না তাও অনিশ্চিত । সেক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পিএস মাহসুদকে ” প্রেস্টিজ ইস্যু “ নামমাত্র দরে একটি সংস্থার কাছে গচ্ছিয়ে দেয়ার পায়তারা চলছে বলে শোনা যাচ্ছে ।

বিশেষ করে লিজ নিলেও বিআইডব্লিউটিসির আটজন কর্মকর্তার বিষয়ে দ্বিধায় আছে ইজারা নিতে আগ্রহীরা । এদের বেতনভাতা বাবদই মাসে দু’লাখ টাকা দিতে হবে । আর জাহাজটি একটানা বরিশাল যেতে পারবে নাকি যাত্রাপথে চাঁদপুর বিরতি দিতে হবে সেটিও এখনো নিশ্চিত নয় । বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, স্টিমারটিকে আধুনিকায়নের সময় এর মূল কাঠামো ও ঐতিহাসিক নকশা অক্ষুণ্ন রেখেই ইঞ্জিন, নিরাপত্তা এবং ফায়ার সেফটি সিস্টেম নবায়ন করা হয়েছে।

যুক্ত করা হয়েছে আধুনিক কেবিন, পর্যটকবান্ধব ডেক এবং ডিজিটাল নেভিগেশন ব্যবস্থা স্টিমারটি উদ্বোধনের সময় বলা হয়েছিল প্রাথমিকভাবে ট্যুরিস্টদের নিয়ে প্রতি শুক্রবার সকালে ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে বরিশালে পৌঁছাবে সন্ধ্যায় । পরদিন সকালে বরিশাল থেকে রওয়ানা দিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসবে । আগে স্টিমার রাতে চললেও এবার দিনে চালু করায় নদী ও তীরের দৃশ্য উপভোগে অনেক যাত্রী পাওয়ার যে আশা করা হয়েছিল শুরুতেই তা হোঁচট খেয়েছে ।

আর জাহাজটি উদ্বোধনের আগেই কেন বেসরকারি খাতের ইজারার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো না বা সেটা না করে কেন ২১ নভেম্বর থেকে বাণিজ্যিক চলাচলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তাকেও রহস্যজনক বলছে অনেকেই ।

পাওয়া তথ্যে জানা গেছে ব্রিটিশ আমলে ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে পি এস মাহসুদের নির্মাণ সম্পন্ন হয়। পরে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৌযানটিকে আধুনিকায়ন করা হয়। ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডে বেলজিয়ামের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তায় স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিন বদলে ডিজেলচালিত নতুন ইঞ্জিন বসানো হয়। ১৯৯৫ সালে যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে এটিকে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়। তবে ২০২২ সালে স্টিমারটির নিয়মিত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এবার ঐতিহ্যবাহী এই নৌযানকে আবার সচল করতে খরচ হয় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ।