বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে জানিয়েছে—বাংলাদেশে প্রায় ৬২ মিলিয়ন মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ, অর্থনৈতিক ধাক্কা, আয়ের অনিশ্চয়তা বা দুর্যোগের কারণে যেকোনো সময় আবার দারিদ্র্যে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তরুণ, নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান না সৃষ্টি হলে দারিদ্র্য ও বৈষম্য আরও গভীর হবে।
দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি কেন ধীর হয়ে গেছে
বিশ্বব্যাংকের ‘বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
২০১০–২০২২ সালে বাংলাদেশ ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যসীমার বাইরে তুললেও ২০১৬ সালের পর দারিদ্র্য হ্রাসের গতি স্পষ্টভাবে কমে যায়। ধনী পরিবারের আয় বাড়লেও নিম্নআয়ের মানুষের জীবনে সেই উন্নতি প্রতিফলিত হয়নি।
৬২ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্যে ফেরার ঝুঁকি
বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ আয়ের অস্থিরতা, অসুস্থতা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধাক্কায় যেকোনো সময় আবার দারিদ্র্যে নেমে যেতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিতে বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
গ্রাম-শহরের অসম অগ্রগতি
গ্রামে কৃষিভিত্তিক অগ্রগতি দারিদ্র্য কমাতে সাহায্য করলেও শহরে অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর।
২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রতি চারজন দরিদ্র মানুষের একজন এখন শহরে বসবাস করেন।
চাকরির স্থবিরতা: তরুণ ও নারীরা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
প্রতিবেদনে দেখা যায়—
- দেশের কর্মসংস্থানের হার কমছে
- শ্রম আয়ের বাস্তব প্রবৃদ্ধি দুর্বল
- উৎপাদনশীল খাতে চাকরি সৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে
- ফলে অনেক শ্রমিক কম উৎপাদনশীল খাতে যেতে বাধ্য
এ সংকটের সবচেয়ে বড় বোঝা পড়ছে তরুণ ও নারীদের ওপর।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ–ভুটান ডিভিশনের পরিচালক জ্যাঁ পেসমে বলেন—
“তরুণ, নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই কর্মসংস্থান তৈরি করাই দারিদ্র্য কমানোর দ্রুততম পথ।”
দক্ষতার ঘাটতি ও শ্রমবাজারের বৈষম্য
বাংলাদেশের শ্রমবাজারে দক্ষতার অভাব ও অসম সুযোগ বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
তরুণদের বাস্তব চিত্র
- প্রতি ৫ জন তরুণ নারীর ১ জন বেকার
- শিক্ষিত তরুণ নারীর প্রতি ৪ জনের ১ জনের চাকরি নেই
- ১৫–২৯ বছর বয়সী অর্ধেক তরুণ কম মজুরির কাজে নিয়োজিত
শহরে চাকরি সৃষ্টির গতি থেমে গেছে
ঢাকার বাইরের শহরাঞ্চলে নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কার্যত স্থবির।
নারীদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ কমছে—যা শহরে দারিদ্র্য বৃদ্ধির আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















